• ২রা এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৯শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্রণের রয়েছে নানা ধরনের চিকিৎসা

দখিনের সময়
প্রকাশিত মে ১৯, ২০২২, ০৮:২৮ পূর্বাহ্ণ
ব্রণের রয়েছে নানা ধরনের চিকিৎসা
সংবাদটি শেয়ার করুন...

ডা. দিদারুল আহসান:

যৌবনে একটি অবাঞ্ছিত সমস্যার নাম ব্রণ। সুন্দর মুখশ্রীর ওপর ব্রণ যদি দেখা দেয়, তাহলে ছেলেমেয়ে যে-ই হোক, কারোর মনে স্বস্তি নেই।

যে বয়সে বেশি হয়: ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সে এটি বেশি হয়। তবে ২০ থেকে ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত এটি হতে দেখা যায়। টিনএজারদের মধ্যে ৯০ শতাংশের ক্ষেত্রেই কম অথবা বেশি পরিমাণে এটি হয়ে থাকে। ২০ বছর বয়সের পর থেকে এটি ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

শরীরের যেখানে হয়: সাধারণত মুখে যেমন- গাল, নাক, থুতনি ও কপালে হতে দেখা যায়। তবে শরীরের উপরের অংশ ও হাতের ওপরের অংশেও হরহামেশাই হতে দেখা যায়।

হওয়ার কারণ: বংশগত প্রভাব অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ। স্বাভাবিকভাবেই লোমের গোড়ায় একটি ব্যাকটেরিয়া থাকে। নাম প্রোপাওনি ব্যাকটেরিয়াম একনি। বয়ঃসন্ধিকালে এড্রোজেন হরমোনের প্রভাবে সেবাসিয়াস গ্রন্থি থেকে সেবামের নিঃসরণ বেড়ে যায়। এ সেবাম থেকে ফ্রি ফ্যাটি এসিড তৈরি করে লোমের গোড়ার ব্যাকটেরিয়া। ফলে লোমের গোড়ায় প্রদাহের সৃষ্টি হয় এ ফ্যাটি এসিডের প্রভাবে। এর পাশাপাশি জমা হয় লোমের গোড়ায় কেরাটিন নামক পদার্থ। ফলে সেবাসিয়াস গ্রন্থিপথ বন্ধ হতে থাকে এ কেরাটিন, লিপিড আর মেলানিন পদার্থ দিয়ে, যা ব্লাক হেড বা ‘হোয়াইট হেড’ হিসেবে দেখা দিয়ে থাকে।

ব্রণের সঙ্গে খাবারের সম্পর্ক: অনেকের ধারণা, তৈলাক্ত খাবার খেলে বুঝি ব্রণ হয়। কথাটি সত্য নয়। কোনো ধরনের খাদ্য দ্রব্যের সঙ্গে ব্রণের কোনো সম্পর্ক আছে বলে জানা যায় না।

ব্রণ ও ক্রিম: যেসব ক্রিমে তৈলাক্ত উপাদান থাকে, যাদের মুখে বেশি ব্রণ হয়, তাদের সেসব ক্রিম ব্যবহার করা উচিত নয়। মনে রাখতে হবে, ক্রিম যদি তৈলাক্ত হয়, তবে তা ব্রণে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে না।

চিকিৎসা পদ্ধতি: রোগীর ব্রণে আক্রান্তের গুরুত্ব বিবেচনা করে চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করতে হয়। হতে পারে তা মলম থেকে শুরু করে খাওয়ার জন্য নির্ধারিত অ্যান্টিবায়োটিক অথবা রেটিনয়েড জাতীয় ওষুধ।

ব্যাকটেরিয়ানাশক: অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে টেট্রাসাইকিন ১৮৫১ সাল থেকেই ব্রণ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। টেট্রাসাইকিন দামে সস্তা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম এবং অত্যন্ত কার্যকরী। এ অ্যান্টিবায়োটিক ব্রণ তৈরির ব্যাকটেরিয়া দমন করে। তবে সমস্যা হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে কয়েক মাস অ্যান্টিবায়োটিকটি খেয়ে যেতে হয়। এর দ্রুত কোনো উন্নতি লক্ষ করা যায় না। সাধারণভাবে এ ওষুধ খাওয়ার ১ থেকে দেড়মাস পর উন্নতি লক্ষ করা যায়। আরেকটি ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক হচ্ছে মিনোসাইকিন। এটি টেট্রাসাইকিনের চেয়েও অধিক কার্যকর। দেখা গেছে, ৫০০ মিলিগ্রাম টেট্রাসাইকিনের চেয়ে ১০০ মিলিগ্রাম মিনোসাইকিন বেশি কার্যকর। ব্রণ চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত একটি চমৎকার ওষুধ। এরিথ্রোমাইসিন খেয়ে যদি ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করা যায়, সে ক্ষেত্রে ডক্সিসাইকিন কার্যকরী ওষুধ।

এরিথ্রোমাইসিন: গর্ভবর্তীরা যখন টেট্রাসাইকিন খেতে পারে না, তখন এরিথ্রোমাইসিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিনডামাইসিনও অন্যান্য ওষুধের মতো একটি কার্যকরী ওষুধ।

হরমোন থেরাপি: নারীর ক্ষেত্রে সেবামের নিঃসরণ যদি বেড়ে যায়, ওভারি থেকে এন্ডোজেন হরমোন তৈরি হয়। সেই ক্ষেত্রে কম ডোজের জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাওয়া যাবে এবং তাতে থাকতে হবে নন-এন্ডোজেন প্রজেস্টিন। তবে এ ধরনের হরমোন চিকিৎসা পদ্ধতি ডাক্তারের পরামর্শে নিতে হবে। ঝঢ়রৎড়হড়ষধপঃড়হব (স্পাইরোনোল্যাকটন) সেবাম একটি এন্টি এন্ডোজেনিক উপাদান। এটি উৎপাদন কমিয়ে দিতে সক্ষম। নারীদের ব্রণের ক্ষেত্রে কার্যকরী ওষুধ। তবে এটিও ডাক্তারের পরামর্শে খেতে হবে। আইসোট্রিসনিন আবিষ্কারের ফলে ব্রণ চিকিৎসা ভিটামিন ‘এ’-এর ব্যবহার এখন একটি ঐতিহাসিক সফলতার দাবিদার। যে কোনো ধরনের ব্রণের ক্ষেত্রে এর ব্যবহারে সফলতা আসে। তবে দাম বেশি হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা হয় না। নারীদের এটি ব্যবহারে সতর্কতার প্রয়োজন। কেননা পাশ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শে ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও রয়েছে নানা ধরনের চিকিৎসা, যা চিকিৎসকের পরামর্শে করা উচিত।

লেখক: চর্ম, যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ