শরতের আগমনে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় যেন এক অপরূপ পর্যটন কেন্দ্র
দখিনের সময়
প্রকাশিত অক্টোবর ২, ২০২২, ২০:১৪ অপরাহ্ণ
সংবাদটি শেয়ার করুন...
বাকি বিল্লাহ
শরতের আগমনে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় যেন এক অপরুপ পর্যাটন কেন্দ্র।বিকাল হলেই বা অবসরে সময়, পেলেই শরতের সৌন্দর্য আর সাদা কাশফুল দেখতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) ক্যাম্পাসে ছুটে আসছেন দূর দুড়ান্তের দর্শনার্থীসহ স্থানীয় লোকজন। কেউ পছন্দের মানুষটির হাত ধরে, আবার কেউ আসছে স্বপরিবারে এবং কেউ কেউ আসে বন্ধু বান্ধবদের সাথে শরৎের শুভ্রতার সৌন্দর্য উপভোগ করতে। সাদা কাশফুলের সঙ্গে যেন তাদের আত্নাকে মিলিয়ে নিতে।
বরিশাল বিএম কলেজ এর ছাত্রী নিপা খানম ও তার সহপাঠিদের নিয়ে বরিশালশ্ববিদ্যালয়ের কাশবনে ঘুরতে গিয়ে নিজের অনুভূতির থেকে জানান- আজকের এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে মানুষ খুব একা হয়ে পড়ছে। যার প্রভাব পড়ছে তার সামাজিক ও মানসিক জীবনে।মানুষ কে প্রকৃতির কাছে যেতে হবে মনকে সজীব রাখতে হবে। তাহলেই আমরা সকল বাধা ভেদ করে এগিয়ে যেতে পারবো সুন্দর আগামীর পানে। তার জন্য এই কাশবন অনেকটাই পরিবেশ বান্ধবসাদা আর সবুজের মিলনমেলার পাশ দিয়ে বয়ে চলা কীর্তনখোলা নদীর তীরে ঘুরে বেড়ানোর অনুভূতিই অন্যরকম। সাদা মেঘের সঙ্গে এ কাশফুলের সাদা রং মনকেও সাদা করে দেয়। কীর্তনখোলা নদীর তীরবর্তী হওয়ায় একই সাথে নদী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। আর শরতের এই সৌন্দর্য বিশ্ববিদ্যালয়কে করেছে অনন্য।
বরিশাল সরাকরি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ এর দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোঃ ইয়াফি ইসলাম তার অনুভুতি জানায়- আমি ও আমার স্বপরিবার ঘুরতে আসছি বরিশালের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট দিয়ে ঢুকেই হাতের ডান দিকে চোখে পরতেই দেখতে পেলাম সাদা কাশফুলের সমরোহ। সাদা কাশফুল দেখেই শরৎ এর আমেজ অনুভব করতে পারলাম। যেদিকেই চোখ যায় সেইদিকেই সাদা সাদা কাশফুলের মনোমুগ্ধকর স্রোত। কিছু সময়ের জন্য ঐ মনোমুগ্ধকর প্রকৃতিতে হারারিয়ে গেলাম। সম্পুর্ন যায়গাটা ঘুরে দেখার তীব্র আকাঙ্খা জাগলো।ক্যাম্পাস এ প্রায় সব বয়সের মানুষই এই মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি উপভোগ করতে এসেছে।পড়াশোনা জন্য এমন পরিবেশ অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এই অপূর্ব প্রকৃতি একটা আশীর্বাদ সরুপ। তাই ববি প্রশাসন এর উচিৎ এই যায়গাটাকে যত্ন করা এবাং পরিপূর্ণ পরিচর্যা করা।
ব্যাংক কর্মকর্তা শাহিন আলম খান ও তার পরিবারকে নিয়ে ঘুরতে আসছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় তিনি বলে- একদিকে মাঠে কাশফুল বাতাসে দোল খাচ্ছে অন্যদিকে আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ভেসে বেড়াচ্ছে, এগুলো বুঝতে গেলে বা শিখতে গেলে তরুণ প্রজন্মকে প্রকৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে।
শরতের বিকালটা সত্যিই অন্যরকম। এরকম ঝলমলে রোদ, ফুরফুরে নির্মল হাওয়া আর আকাশে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘের ভেলা দেখতে কার না ভালো লাগে। এরকম বিস্তীর্ণ আকাশ, খোলা মাঠ, সূর্যাস্ত আর কাশবন সব মিলিয়ে চমৎকার একটি দৃশ্য। তাই আমি ও আমার পরিবার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাশফুল এর সৌন্দর্য দেখতে আশা।
অন্য দিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কাশফুলের সৌন্দর্যে মুখরিত এমন খবর পেয়ে ছুটে আসে বরিশাল টিটিসি স্কুল এন্ড কলেজ এর একদল শিক্ষার্থী তাদের মধ্যে থেকে তানভির রিশাদ বলেঃ-নীল আকাশের নীচে সাদা কাশবন প্রকৃতিকে সাজিয়ে তুলেছে অপরূপ ভাবে। মনকে প্রফুল্ল রাখতে জীবনের শতব্যস্ততার মাঝেও শরৎ আসলেই নীল-সাদার এই অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে বারবার মন ছুটে যায় কাশবনে। আর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এর কথা কি বলবো এখানে ছয়টা ঋতু বিরাজ করে এবং সারাবছর ঋতুরাজ ফুলের গন্ধে সুভাষিত ও রঙ্গিন করে রাখে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে।
এই বিষয় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের উম্মে হানী মিলা শিক্ষার্থী বলেঃপ্রাচ্যের ভেনিচ খ্যাত বরিশালের বুকে কীর্তনখোলা এবং খয়রাবাদ নদীর কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে দক্ষিণের শ্রেষ্ঠবিদ্যাপীঠ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই লীলাভূমিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় যেন এক স্বর্গীয় সৌন্দর্য লাভ করেছে।ক্যাম্পাসজুড়ে দৃষ্টিনন্দন সাদা শুভ্র মেঘের ঝিলিকে কাশফুলের সৌন্দর্য এক কথায় প্রকাশ করা দুষ্কর।
প্রকৃতিতে পালা বর্তনে মানুষ যান্ত্রিক জীবনের কোলাহলমুক্ত আনন্দ পেতে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে। বিকেল হলে সকল প্রকৃতিপ্রেমীদের এক মিলনমেলা ঘটে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাশবনে কেউ বা আবার নীল-সাদাকে স্বাক্ষী রেখে প্রিয়জনের হাত ধরে মিশে যেতে চায় কাশফুলের মাঝে। কেউ বা কাশফুলের শুভ্রতায় নিজেকে আলিঙ্গন করে লিখে ফেলে কবিতা কিংবা গান।
শরৎ তুমি আসবে আমাদের মাঝে- আসবে যুগে যুগে। তোমার সৌন্দর্যে বিমোহিত করবে আমাদের, বাংলার প্রকৃতি তোমার মাঝে পাবে সার্থকতা।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও সভ্যতা বিভাগের চেয়ারম্যান, সহকারী অধ্যাপক সুরাইয়া আক্তার জানান, শরৎকালে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সাজে অন্ন্য সৌন্দর্যে। নদীর তীরবর্তী হওয়ায় নির্মল বাতাস বহমান, আর সে বাতাসে আকাশের নীল এবং ভূমির সবুজের মাঝে সাদা কাশফুলের দোল খাওয়ার দৃশ্য মনে এক প্রশান্তির সৃষ্টি করে। কাশফুলের মধ্যে রয়েছে রোমাঞ্চকর উন্মাদনা। কাশফুলের এই শুভ্রতা এবং স্নিগ্ধতা ছুঁয়ে যাক প্রতিটি হৃদয়।বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় যে একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সমৃদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়, তার একটা উদাহরণ হলো এই কাশফুল। এই কাশফুলের সৌন্দর্যের মাধ্যম বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ সহ আন্তর্জাতিক ভাবে সুপরিচিত হচ্ছে। এটা আমাদের একটা ভালো লাগার বিষয়। প্রাকৃতিক ভাবে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সুন্দর সেটা এর মধ্যমে আরেক বার প্রমাণিত হয়। এই সৌন্দর্যকে কী ভাবে টিকিয়ে রাখা যায় এবং প্রতি মৌসুমে কী ভাবে ফুটিয়ে তোলা যায় সে ব্যাপারে ববি প্রশাসন ইতিমধ্যে নানান উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে দর্শনার্থীরা আসছে এবং তারা মুগ্ধ হচ্ছে এবং একটা বিশ্বজনীন পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। তবে যেহেতু দূর থেকে দর্শনার্থীরা আসছে সেহেতু নিরাপত্তার দিকেও নজর রাখতে হবে।
তবে বহিরাগত প্রবেশ এ নিরাপত্তার বিষয়ে নিরাপত্তা কর্মকর্তা মোঃ সাইম বলেন, পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে ফুটেছে সাদা কাশফুল। যারাই খবর পাচ্ছেন তারাই ছুটে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সৌন্দর্যটুকু উপভোগ করতে। তবে ছুটির দিনগুলোতে অনেক বহিরাগত লোক ঘুরতে আসে। লোকজন দেখলে আমাগো ভালো লাগে। তয় আমাগো এই সময় একটু বেশি নজরদারি রাখতে হয়।