দখিনের সময় ডেস্ক:
হজের সফর শুধুই একটি নির্ধারিত ইবাদত নয়, এটি এক মহৎ প্রশিক্ষণযাত্রা, যার প্রতিটি ধাপ আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয়। অনেক হাজি হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগেই মক্কা শরিফে পৌঁছে যান, যা নিঃসন্দেহে এক অপার নেয়ামত। এ সময়টুকু ইবাদত, কুরআন তিলাওয়াত, আত্মসমালোচনা ও প্রস্তুতির জন্য কাজে লাগানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই সময়ে নিয়ত বিশুদ্ধ করা, হজের মাসায়েল শেখা, মসজিদুল হারামে অধিক নামাজ আদায় এবং তাওয়াফে মনোনিবেশ করা একজন হাজির জন্য শ্রেষ্ঠ প্রস্তুতির অংশ। বিশেষ করে, মক্কায় অবস্থানকালেই ইখলাসের সঙ্গে জমজম পান করা, কান্নাকাটি করে দোয়া করা এবং নিজের পাপমুক্তি কামনা করে তাওবায় মনোনিবেশ করাই সঠিক হজের সোপান তৈরি করে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “হজ হল তাকওয়া ও জিকিরভিত্তিক সফর।” (সহিহ মুসলিম) তাই এ সময় যিকির, ইস্তিগফার, নফল নামাজ এবং কুরআন তিলাওয়াতে সময় ব্যয় করা একান্ত কাম্য। একইসাথে, হারামের পবিত্রতা বজায় রাখা, ঝগড়া এড়িয়ে চলা, গীবত ও অনুচিত কথাবার্তা থেকে বিরত থাকা আবশ্যকীয়। কারণ কুরআনে বলা হয়েছে, যারা হারামে অন্যায় মনোভাব পোষণ করে, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি (সূরা হাজ্জ: ২৫)। তাই আত্মসংযম ও চরিত্রের পরিশুদ্ধতা এ সময়ের অন্যতম বড় করণীয়।
অন্যদিকে, এই সময়কে যেন শুধুই তামাশা, কেনাকাটা কিংবা অবহেলায় না কাটিয়ে সত্যিকারের আল্লাহমুখী জীবনযাপনের দিকে ধাবিত হওয়াই একজন মুমিন হাজির বৈশিষ্ট্য। অতীতের গুনাহ স্মরণ করে তাওবা করা এবং জীবনে স্থায়ী পরিবর্তনের সংকল্পই হজের সত্যিকারের প্রস্তুতি। হজের আগের এ সময়টাকে যদি ইবাদত ও অনুশীলনের মাধ্যমে সুশৃঙ্খলভাবে কাজে লাগানো যায়, তাহলে পরবর্তী হজের মূল আনুষ্ঠানিকতাগুলো আরও বেশি আত্মার খোরাক হয়ে উঠবে।
সবশেষে, মক্কায় অবস্থানকালীন এই সময় আল্লাহর রহমত লাভের বিশেষ মুহূর্ত। তাই নিজের ও মুসলিম উম্মাহর জন্য অধিক দোয়া করা উচিত। রাসুল (সা.) বলেছেন, হাজির দোয়া প্রত্যাখ্যাত হয় না যতক্ষণ না সে ফিরে আসে (ইবনু মাজাহ: ২৮৯৫)। সুতরাং, হজের আগে এই সময় যেন উদাসীনতায় নষ্ট না হয়—বরং তা যেন আত্মার প্রস্তুতি, আমলের চর্চা এবং আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের অনন্য সুযোগে পরিণত হয়। আল্লাহ তাওফিক দিন যেন আমরা এই নেয়ামতপূর্ণ মুহূর্তগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারি।