• ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বাস্থ্যখাতে সিণ্ডিকেটের হাত অনেক লম্বা: প্রয়োজন প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ

দখিনের সময়
প্রকাশিত জুলাই ২৫, ২০২০, ১৪:১৬ অপরাহ্ণ
স্বাস্থ্যখাতে সিণ্ডিকেটের হাত অনেক লম্বা: প্রয়োজন প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ
সংবাদটি শেয়ার করুন...

আলম রায়হান ‍॥

বাংলাদেশে জেকেজি এবং রিজেন্ট হাসপাতাল কেলেঙ্কারির পটভূমিতে স্বাস্থ্যখাতে যখন একের পর এক দুর্নীতি বা অনিয়মের ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এতোসব অনিয়মদুর্নীতি বছরের পর বছর ধরে চললো কীভাবে? সম্ভবত সিন্ডিকেটের হাত অনেক লম্বা!

এ অবস্থায় কোনকোন মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, স্বার্থন্বেষী মহলের হাত কী সরকারের হাতের চেয়েও লম্বা? কিন্তু তা তো হতে পারে না!  যদিও বিবিসি’র সঙ্গে আলাপকালে টিআইবির ড: ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘স্বার্থন্বেষী মহলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াটা বেশ কঠিন।’ তবে একেবারে অসম্ভব বিষয় নয় বলেও তিনি মনে করেন। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্যখাতের যে সংকট প্রকাশিত হয়েছে তাতে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বড় ধরণের সংস্কার কার্যক্রম নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন অনেকেই।

বিরাজমান অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই হস্তক্ষেপ করতে হবে বলে বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ মানুষ মনে করেন। এ ধারায় স্বাস্থ্য অধিদফতরে মহাপরিচালকের মতো স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিবসহ আরো কয়েকজনকে সড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন বলে অনেকে মনে করেন। পাশাপাশি কারোকারো মতে, আব্দুল মান্নানকে স্বাস্থ্য সচিব করার ক্ষেত্রে লবিস্টদের ব্যাপারেও খোঁজ খবর নেয়া প্রয়োজন। একই সাথে খতিয়ে দেখতে হবে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপর সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী, সাবেক কর্মকর্তা অথবা কোন নেতার প্রভাব জগদ্দল পাথরের মতো চেপে আছে কিনা।

স্বাস্থ্যখাতে লাগামহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন,  স্বাস্থ্যখাতে জরুরী ভিত্তিতে কেনাকাটায় সুনির্দিষ্ট নীতিমালা মানা হয় না। আর দুর্নীতি বিরোধী সংগঠনগুলো বলছে, স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতিতে শাস্তির নজির নেই।  যদিও এবার নানান কেলেংকারীর অভিযোগ ওঠার পর সরকার এখন টাস্কফোর্স গঠন করে দুর্নীতি দূর করার কথা বলছে। তবে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ পাওয়ায় চুনোপুটি কয়েকজনকে ধরা হয়েছে এ পর্যন্ত। কিন্তু সংকটের গভীরে গিয়ে প্রভাবশালী স্বার্থন্বেষী মহল বা রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে এখনও কার্যকর কোন পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। এর কারণ হিসেবে অনেকেই বলছেন, সিণ্ডিকেটের হাত অনেক লম্বা!

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ যখন পদত্যাগ করেন, তখন সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। নানা অভিযোগ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেছিলেন, পরিস্থিতি করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় কোন নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি। একই সময় পদত্যাগ করবেন কিনা- সাংবাদিকদের সেই প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন বলেছিলেন, একটি টাস্কফোর্স গঠন করে দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক নাসরিন সুলতানা বিবিসির সঙ্গে বলেছেন, সংকটের শেকড়টা বের করা প্রয়োজন। এটি খুবই গভীর মনে হয়। যদি সেটা গভীরে না হয়, তাহলে একের পর এক দুর্নীতি হতে পারে না। যেমন, আমরা জেকেজি বা রিজেন্টের ঘটনা দেখেছি। এরপর সাহাবুদ্দিন হাসপাতালের ঘটনা দেখলাম। একের পর এক হয়েই যাচ্ছে। এর রুটটা বের করা দরকার। সংবেদনশীল এই খাতে দুর্নীতি চলতে থাকলে শেষপর্যন্ত জনগণকেই কিন্তু ভোগান্তি পোহাতে হয়। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকেই হস্তক্ষেপ করতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন। তারা সেই অপেক্ষাতেই আছেন বলে মনে হয়েছে। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক আ.ফ.ম. রুহুল হক বিবিসির সঙ্গে বলেছেন, স্বাস্থ্যখাতে স্বার্থান্বেষীদের সিণ্ডিকেট ভেঙে দিয়ে পুরো এই খাতকে ঢেলে সাজানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী নিজে পদক্ষেপ নেবেন- এমন আশায় তিনি রয়েছেন।  সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, আমি খুব আশাবাদি যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এখন প্রতিদিনই খুব কাছ থেকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে দেখছেন। সুতরাং আশাবাদি যে পরিবর্তন আসবে। এটা আমার ধারণা- বললেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. রুহুল হক।

‍॥ খতিয়ে দেখতে হবে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপর সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী, সাবেক কর্মকর্তা অথবা কোনে নেতার প্রভাব জগদ্দল পাথরের মতো চেপে আছে কিনা। প্রয়োজন, আব্দুল মান্নানকে স্বাস্থ্য সচিব করার ক্ষেত্রে লবিস্টদের ব্যাপারেও খোঁজ খবর নেয়া। ‍॥