স্টাফ রিপোর্টার ॥
জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট, পুরোদমে চলছে বেচাকেনা। দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ উল আযহা। ভালো দাম পাওয়ার আশায় প্রতি বছর কোরবানির ঈদ সামনে রেখে একদল অসাধু ব্যবসায়ি কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই গরু মোটা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ও রাসায়নিক মাত্রাতিরিক্ত প্রয়োগ করেন। এতে গরুর শরীরে অতিরিক্ত পানি জমতে শুরু করে, গরুটির কিডনি, ফুসফুস, পাকস্থলী ও যকৃত নষ্ট হতে থাকে এবং গরুটি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে।
হাটে বিক্রির জন্য আসা এতো গরুর মধ্যে অনেকগুলোই থাকতে পারে রোগাক্রান্ত অথবা ক্ষতিকর রাসায়নিক ও ওষুধযুক্ত। স্টেরয়েড দিয়ে মোটাতাজা করা গরু দেখতে আকর্ষণীয়, চকচকে ও হৃষ্টপুষ্ট দেখালেও আসলে সেগুলো মোটাতাজা হয় না। বরং এসব ক্ষতিকর উপাদান রান্নার পরেও মাংসে থেকে যাওয়ার সেটা খেলে রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এসবের মধ্যে থেকে কোরবানির যোগ্য সুস্থ গরু চেনার উপায় কি?
দেশি গরু কেনার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। কেননা চাইলেও দেশ গরুরি বেশি মোটাতাজা করা সম্ভব না। দক্ষ পশু ক্রেতারা দিনের আলো থাকতে থাকতেই গরু কেনার পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের মতে রাতের বেলা গরুর এতোগুলো বিষয় ঠিকঠাক যাচাই করা সম্ভব নাও হতে পারে।
সুস্থ্য গরু সনাক্তের ব্যাপারে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু বিশেষজ্ঞরা। মূলত কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। রাসায়নিক বা ওষুধ দেয়া গরুর মাংসপেশি থেকে শুরু করে শরীরের অন্য অঙ্গগুলো অস্বাভাবিকভাবে ফুলে থাকে। শরীরে পানি জমায় বিভিন্ন অংশে চাপ দিলে সেখানে গর্ত হয়ে দেবে যাবে, এবং স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে সময় নেবে। অতিরিক্ত ওজনের কারণে এ সব গরু চলাফেরা বা স্বাভাবিক নাড়াচাড়া করতে পারেনা। শান্ত থাকে।
রাসায়নিকযুক্ত গরু ভীষণ ক্লান্ত থাকবে এবং ঝিমাবে। সুস্থ গরুর গতিবিধি চটপটে থাকে। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বুঝে প্রতিক্রিয়া দেখায়। কান ও লেজ দিয়ে মশা মাছি তাড়ায়। রাসায়নিক বা ওষুধ খাওয়ানো গরুর শরীরের অঙ্গগুলো নষ্ট হতে শুরু করায় এগুলো শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত হয়। মনে হবে যেন হাঁপাচ্ছে। অতিরিক্ত স্টেরয়েড দেয়া গরুর মুখ থেকে প্রতিনিয়ত লালা ঝরবে। কিছু খেতে চাইবে না।
সুস্থ গরুর মুখের সামনে খাবার ধরলে সেটা টেনে খাবে। না হলে জাবর কাটবে। সুস্থ গরুর নাকের উপরের অংশটা ভেজা বা বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা থাকবে। অন্যদিকে অসুস্থ গরুর নাক থাকবে শুকনা। সুস্থ গরুর শরীরের রঙ উজ্জ্বল থাকবে। গরুর পিঠের কুজ মোটা, টানটান ও দাগমুক্ত হবে। সুস্থ গরুর রানের মাংস শক্ত থাকবে। যেখানে রাসায়নিক দেয়া গরুর পা হবে নরম থলথলে।
গরুর শরীরে হাত দিয়ে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মনে হলে বুঝতে হবে গরুটি অসুস্থ। সুস্থ গরুর চামড়ার ওপর দিয়ে কয়েকটা পাঁজরের হাড় বোঝা যাবে।