হিমালয়ের মতো মানুষটাকে ওরা মেরে ফেলল: শশাঙ্ক ব্যানার্জি
দখিনের সময়
প্রকাশিত আগস্ট ৭, ২০২০, ০২:১৯ পূর্বাহ্ণ
সংবাদটি শেয়ার করুন...
আলম রায়হান:
“১৫ আগস্ট যখন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হলো, ইস! কি যে কষ্ট পেয়েছিলাম! এমন একজন হিমালয়ের মতো মানুষকে এরা মেরে ফেলল!” এ প্রতিক্রিয়া শশাঙ্ক শেখর ব্যানার্জির।৮৭ বছর বয়সে তিনি এই অনুভূতি প্রকাশ করেছেন দৈনিক আমাদের সময় –এর সঙ্গে। যা প্রকাশিত হয়েছে ১৭ মার্চ ২০২০। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শশাঙ্ক ব্যানার্জির পরিচয় হয় ১৯৬২ সালের ২৪ মার্চ রাতে, ইত্তেফাক সম্পাদক মানিক মিয়ার মাধ্যমে।
বাংলাদেশের অমর ইতিহাসের স্বাক্ষী শশাঙ্ক ব্যানার্জি । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ১০ জানুয়ারি ’৭২ তারিখে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের পাশাপাশি সিটে বসা ছবিটি উজ্জ্বল হয়ে ইতিহাসেরে এক গভীর সাক্ষ্য বহন করে।
শশাঙ্ক ব্যানার্জি ১৯৫৫ সালে ফরেন চাকরিতে যোগ এবং অবসরে যান ৮৫ সালে। ৬২ সাল থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার স্বপ্ন-সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ ও তার পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু হত্যার পূর্ব পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নিবিড়ভাবে ঘনিষ্ঠ ছিলেন শশাঙ্ক ব্যানার্জি। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে শশাঙ্ক ব্যানার্জি ভাষ্য, “এমন সুপুরুষ, এমন কণ্ঠ ও এমন সুন্দর ভাষার বক্তৃতা দেওয়া একজন অসীম সাহসী দেশপ্রেমিক মহান নেতার সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল বা আমাকে নামে চিনত এ যেন আমার পরম ভাগ্য। আমার জন্ম স্বার্থক।”
পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডন থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সব প্রস্তুতি যখন চূড়ান্ত, তখন প্রশ্ন এলো বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী কে হবেন? অনেক নাম এলো। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সিদ্ধান্তে বঙ্গবন্ধুর সফর সঙ্গী হলেন শশাঙ্ক ব্যানার্জি। স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরু থেকে এবং মুক্তির সংগ্রামে ঢাকা ও লন্ডনের সঙ্গে একাত্ম ছিলাম ছিলেন শশাঙ্ক ব্যানার্জি। ইন্দিরা গান্ধী তাকে ব্যক্তিগতভাবে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সফর করার অধিকার প্রদান করেন। এমনকি আকাশপথে বঙ্গবন্ধুকে কী বার্তা দিতে হবে, তারও একটি গাইডলাইন দিলেন।
ফ্লাইটে নানা কথার মধ্যে বঙ্গবন্ধু একপর্যায়ে বললেন, ব্যানার্জি তুমি তো জানো; প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা বলেছেন ৬ মাসের মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে তার ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার করে নেবেন বলেছেন। আমি চাই ৬ মাস নয়; তিন মাসের মধ্যেই ইন্দিরা গান্ধী ভারতীয় সেনা প্রত্যাহার করে নেবেন। ভারতে যাত্রা বিরতিতে বঙ্গবন্ধুকে লাল গালিচা সবংর্ধনা দেওয়া হলো। এর ফাঁকে ইন্দিরা গান্ধীকে শশাঙ্ক ব্যানার্জি বিস্তারিত জানালেন। ইন্দিরা-মুজিব বৈঠকে মুজিবের ইচ্ছায় ৩১ মার্চের মধ্যে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়।
শশাঙ্ক ব্যানার্জির স্মৃতিতে আজও অম্লান, পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু তার স্বাধীন দেশের জনগণের মাঝে ফিরলেন বীরের অভ্যর্থনা নিয়ে। শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি জীবনে এর আগে কখনো এমন ফুটন্ত গনগনে গণজমায়েত দেখেননি। ১০ লাখেরও বেশি মানুষ জমায়েত হয়ে তাদের প্রিয় নেতাকে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে স্লোগানে যেভাবে অভ্যর্থনা জানাল, সেই দৃশ্য আমৃত্যু মনে থাকবে শশাঙ্ক ব্যানার্জির।