• ১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তৃনমূল আওয়ামী লীগে আশা-নিরাশা-হতাশা

দখিনের সময়
প্রকাশিত জানুয়ারি ১৯, ২০২৫, ০৯:১৯ পূর্বাহ্ণ
তৃনমূল আওয়ামী লীগে আশা-নিরাশা-হতাশা
সংবাদটি শেয়ার করুন...
আলম রায়হান
বিবিসি বাংলা’র ১৭ জানুয়ারি ‍এক প্রতিবেদনে বলেছে, “আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলটির সব স্তরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে প্রথমবারের মতো ভার্চুয়াল মিটিংয়ে বসতে যাচ্ছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। উদ্দেশ্য নেতা-কর্মীদের সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় করে তোলা। দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম বলছেন, অচিরেই দলের পক্ষ থেকে কর্মসূচি দেয়া হবে। ধাপে ধাপে কর্মসূচিতে হরতালের কথাও চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।” কিন্তু পলাতক শেখ হাসিনা ‘কুক’ দিলেই কী সারাদেশের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা দলে দলে রাজনীতির মাঠে নামবে? ‍ইদুর যেমন গর্ত থেকে বের হয়ে আসে!
পর্যক্ষেক মহল বলছেন, পঙ্গপালের মতো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঠে নামার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ‍কারণ, আওয়ামী লীগ ৭৫-এর চেয়েও বৈরী অবস্থার মধ্যে আছে। সেময় আওয়ামী ক্ষমতাচ্যুত হলেও ১৫ আগস্টের নৃশংশতায় জনমনে ‍এক ধরনের ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিলো। যা সাধারণ মানুষকে দলটির প্রতি সহানুতির দিকে নিয়েগেছে। আর সে সময় আওয়ামী লীগের ‍একগুচ্ছ প্রবীণ নেতা ছিলেন। ১৯৮০ সালে দেশে ফিরে শক্তভিতির ‍উপর দাড়ানো দলের সঙ্গে স্বজন হানোর আবেগ সফলভাবে যুক্ত করতে পেরেছিলেন শেখ হাসিনা। এর পরও ৭৫-এর থিংক ট্যাকং-এর তৎপরতায় ২১ বছর ক্ষতার বাইরে থাকতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে। ‍অর এখন অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে ৭৫-এর থিংক ট্যাকং শক্তিশালী।
বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন, ১৯৭৫ সালে এক দিনের হত্যাকান্ডের রক্তের স্রোতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা চ্যূত হয়েছিল। কিন্তু ‍এবার, ২০২৪ সালের শেখ হাসিনার নৃশংতায় সৃষ্ট রক্তের প্লাবনে আওয়ামী লীগ ভেসে গেছে। ১৫ আগস্টের কাকডাকা ভেরে খন্দকার মোশতাকের পক্ষেত্রে যেমন বিছিল হয়েছে তেমনই প্রতিবাদ মিছিলও হয়েছে। বরিশালে পেশকার বাড়ী থেকে বেরহওয়া বিশাল মিছিলে মহিউদ্দিন আহমেদ(পিস্তল মহিউদ্দিন), আ স ম ফিরোজসহ আওয়ামী লীগ নেতারা যেমন নেতৃত্ব দিয়েছেন। তেমনই ১২/১৩ জন লোক নিয়ে আলতাফ হোসেন ভুলুসহ কয়েকজন মিছিল করার চেষ্টা করেছেন। আ স ম ফিরোজের ‍উল্লাশ মিছিলের বিপরীতে আলতাফ হোসেন ভুলুদের মিছিল করার চেষ্টার কোনই প্রভাব ছিলো না। কিন্তু ‍এর গুরুত্ব ছিলো। আর বরিশারে কেবল নয়, সারা দেশেই কম বেশি প্রতিবাদ হয়েছে। আর বঙ্গবীর কাদের সিদ্ধীতো রিতীমতো যুদ্ধে নেনেমে গিয়েছিরে। কিন্তু ২০২৪-এ কী হয়েছে? শেখ হাসিনার পলায়নের খবরের পর আওয়ামী লীগের লোক জন ‘চাচা আপন প্রান বাঁচা’ পালিয়েছে। আর সর্বস্ততের মানুষ ‍উল্লাশ প্রকাশ করা হয়েছে।
বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন, জুলাই-আগস্টের বিরূপ প্রভাব আওয়ামী লীগকে গ্রাস করে ফেলেছে। ‍এই গ্রাস থেকে বের হওয়া কেবল কঠিন নয়, প্রায় আসম্ভবব বলে মনে করা হচ্ছে। ‍এ প্রসঙ্গ তৃনমূলের আওয়ামী লগি নেতারা খুবই হতাশার মধ্যে আছেন।  ‍এক নেতার ‍উচ্চারণ, ” আছি দৌড়ের উপরে। দলের কাজ-কাম নিয়া মাআ ঘামার অবস্থায় নাই। কারও সঙ্গেই যোগাযোগ করি না, যোগাযোগের কেউ নেয়ও না।”- দলের নির্দেশনা নিয়ে অন্ধকারে থাকা আওয়ামী লীগের তৃণমূলের ‍এক নেতার ক্ষোভের ‍উচ্চারণ ‍এটি। দলের চেয়েও তিনি চেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ কিছু দুর্নীতিবাজ নেতার উপর। তিনি বলেন, “খারাপ লোকদের দল থেকে বের করতে হবে।” কিন্তু আওয়ামী লীগ থেকে খারাপ লোকদের বের করে দেয়া কী সম্ভব? এতে গাও ‍উজার হয়ে যাবে না!
‍অপর এক তৃনমূল নেতার ‍উচ্চারণ, “যে নির্যাতন এখন আমরা হইতেছি তা আর কওয়নের না! নেতাগো জন্য আমাগো এখন পলা‍ইয়া থাকন লাগে, জেল খাটতে হয়, রাইতে বাগানে থাইকা মশার কামড় খাই। বহু মামলা খাইছি। কিন্তু কেন আমি এইসব ভোগ করুম?” আওয়ামী লীগের আর ‍এক তৃনমূল নেতার ‍উচ্চারণ, “যারা দুর্নীতি করছে, তাদের জন্যে আমাগো জীবন ধ্বংস। তারা যদি দলের ভেতর থাকে, তাইলে আমরা আর এর মধ্যে নাই। নেতা বদলানো লাগবো।”
তবে এই প্রবনতার বাইরেও তৃনমূলে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী আছেন। তাদের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও সাংগঠনিক নির্দেশনার অপেক্ষাতেও আছেন কেউ কেউ। তদের ‍একজনের ‍উচ্চারণ, “দলের বড় নেতারা যে আমাদের কোনও দিক-নির্দেশনা না দিয়ে চলে গেলো এবং এর পরে প্রায় চার/পাঁচ মাস কোনও খোঁজ-খবর নাই। অথচ উনারা সেইফ জোনে আছে। এটা আমাদের কর্মীদের মধ্যে একটা হতাশা তৈরি করেছে। কিন্তু এখন আবার পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। এখন অনেকেই খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।” হাই কমান্ডের নির্দেশনা প্রসঙ্গে তৃনমূলের ‍এই নেতা বলেন, “নির্দেশনা হলো আগে নিজেকে সেইফ রাখতে হবে। প্রস্তুত হতে হবে এবং ধৈর্য্য ধরতে হবে। জানতে পেরেছি অচিরেই দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা আপা বক্তব্য দেবেন, ভার্চুয়াল মিটিং হবে। সেখানে আমাদের জুমে কানেক্ট হতে বলেছেন। সেখানে আপা (শেখ হাসিনা) যে নির্দেশ দেবে, হেই মতো কাম করমু।”