বিষয় বিবেচনায় রাখা দরকার, জনসমর্থনের রাজনীতিতে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই বলে অরাজকতা সৃষ্টির সক্ষমতা আওয়ামী লীগের নেই- তা কিন্তু নয়। সঙ্গে একটু বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন, পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে বেশি লোক দরকার হয় না। জরুরি হচ্ছে মাল্লু! যা বেশুমার আছে আওয়ামী লীগের কাছে। আর নিরাপদ আশ্রয় তো আছে সীমান্তের ওপারে। খাও দাও ফুর্তি করো! যেমন ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ও। সেই সময় তো সোনাগাছিও বেশ আলোচনায় এসেছিল। তবে চলমান সময়ের প্রেক্ষিত এবং লক্ষ্য-উদ্দেশ্য-প্রেক্ষিত অনেক ফারাক। আর প্রত্যাশা ও বাস্তবতার মধ্যেও বেশ ব্যবধান রয়েছে।
সামগ্রিক পরিস্থিতি অনেকটা স্পষ্ট করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। ২৫ ফেব্রুয়ারি সেনাপ্রধান সতর্ক করে বলেছেন, ‘আপনারা যদি ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে কাজ না করতে পারেন, নিজেরা যদি কাদা ছোড়াছুড়ি করেন, মারামারি-কাটাকাটি করেন, তাহলে এই দেশ এবং জাতির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে। আমি আজকে বলে দিলাম, না হলে আপনারা বলবেন আমি সতর্ক করিনি। আমি সতর্ক করে দিচ্ছি আপনাদের। এই দেশ আমাদের সবার, সবাই সুখে-শান্তিতে থাকতে চাই। আমরা চাই না হানাহানি, কাটাকাটি, মারামারি।’
ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের অবসান হয়েছে ৫ আগস্ট। কিন্তু এর মানে তো এই নয়, সমস্যার সামাধান হয়ে গেছে! বরং ক্যান্সারাস টিউমার অপসারণের পরের সতর্কতা প্রয়োজন ছিল। কারণ, বোধগম্য কারণেই বাংলাদেশের শত্রুরা চেষ্টা করবে, জুলাই-আগস্টের অর্জন যেন বর্জনের আস্তাকুঁড়ে নিপতিত হয়। এই বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে অধিকতর সতর্ক হওয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তার লেশমাত্র দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। বরং উল্টোটা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এমনকি বন্যহাতি তাড়ানোর পর গ্রামের সাধারণ মানুষগুলো যে সতর্কতায় থাকে, তা-ও যেন নেই ৫ আগস্ট-পরবর্তী দেশের নানান পর্যায়ের হর্তা-কর্তা-বিধাতাদের।
যারা সরকারে আছেন তাদের অনেকেরই এমন ভাব, যেন নৌযানের পিকনিকে আছেন। ‘আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।’ কিন্তু বিবেচনায় নেন না, পিকনিক জাহাজটি আসলে নড়বড়ে এবং আছে অথৈয় পাথারে। আর ফ্যাসিস্ট বিরোধী রাজনীতিকদের অনেকেই মসনদের স্বপ্নে বিভোর। কিন্তু আচরণ করছেন হাড্ডি নিয়ে বিবাদের মতো। অথচ বাংলাদেশ এমন এক জটিল ইকোয়েশনের চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে, যার তিনটিই বিপজ্জনক। কেবল একটি পথ আছে, যা বাংলাদেশেকে আলোর পথে নিয়ে যেতে পারে। আর এই একমাত্র আলোর পথটি বাছাই করে সবাই একযোগে চলার প্রজ্ঞা সংশ্লিষ্টরা দেখাতে ব্যর্থ হলে দেশের সর্বনাশ হতে আর বাকি থাকবে না। নিজের বিবেচনায় যারা বাস্তবতা অনুধাবন করতে পারবেন না তাদের উচিত সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের দেওয়া ২৫ ফেব্রুয়ারি বক্তব্য বারবার শোনা এবং মূল কথা অনুধাবনের চেষ্টা করা। তা না হলে হয়তো, ‘পালাবি কোথা’ নাটকের বাস্তবতা সৃষ্টি হতে পারে আবার!
# দৈনিক কালবেলায় প্রকাশিত, ৯ মার্চ ২০২৫, শিরোনাম, “স্বপ্নবিলাস ও নানান শঙ্কা”