স্কুল-কলেজের টিউশন ফি নিয়ে উভয় সংকট সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ফি নিয়ে উভয়সংকটে পড়েছে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলসহ বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কয়েকটি স্কুলের অভিভাবকেরা করোনাকালেও শিক্ষা ফি অর্ধেক করার দাবিতে আন্দোলন করছেন। তবে সাড়া মিলছে না।
রাজধানীর মতিঝিলে অবস্থিত আইডিয়ালে স্কুল অ্যান্ড কলেজেসহ বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জুলাই থেকে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসের শিক্ষা ফি (টিউশন ফি) চেয়েছে। অভিভাবকেরা বলছেন, করোনার কারণে তাঁরা আর্থিক সংকটে আছেন। এ জন্য সময় দিয়ে করোনাকালে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ফি অর্ধেক নেওয়া হোক। এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বলছে, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শিক্ষা ফি আদায় না করলে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দেওয়া যাবে না।
এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হচ্ছে না। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক সৈয়দ গোলাম ফারুক সাংবাদিকেদের জনিয়েছেন, একেকটি স্কুলের ধরন একেক রকমের। অভিভাবকেরা যেমন সমস্যায় আছেন, আবার শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনের বিষয়ও আছে। ফলে এখানে একটি নির্দেশনা দিয়ে সমস্যা সমাধান করা যাবে না। তাই তাঁরা বলছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অভিভাবকদের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতেই এই সমস্যা সমাধান করতে হবে।
উল্রেখ্য, করোনার কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্ধ চলছে। আপাতত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধের ঘোষণা থাকলেও সরকারি সূত্রগুলো বলছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না আসা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা নেই। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ক্ষতির মুখে পড়েছে। এর মধ্যে অনেকে অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে। যদিও অভিভাবকদের অভিযোগ অনলাইন ক্লাস গুণগত মানের হচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক বললেন, তাঁর সন্তান পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। তিনি ছোটখাটো ঠিকাদারির কাজ করতেন। প্রায় পাঁচ মাস ধরে আয় নেই। এ কারণে সন্তানের ফি দেওয়া নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন। এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ বলছেন, প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-কর্মচারী আছেন প্রায় ৮০০ জন। এর মধ্যে ১১৬ জন এমপিওভুক্ত, যাঁরা সরকার থেকে মাসে মূল বেতন পান। বাকিদের বেতন-ভাতা প্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন না পেলে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন হবে কীভাবে? আর ফির জন্য কোনো চাপ দেওয়া হচ্ছে না। বরং নমনীয়তা দেখিয়ে প্রায় তিন মাস জুড়ে বেতন দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। আর শ্রেণিকক্ষে ক্লাস বন্ধ থাকলেও অনলাইনে নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে। তাই শিক্ষা ফি কমানোর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
রাজধানীর ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল মাস্টারমাইন্ডের অভিভাবকেরা করোনাকালে যত দিন অনলাইনে ক্লাস হবে, তত দিন শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি ৫০ শতাংশ কমানোর দাবিতে আন্দোলন করছেন। ইতিমধ্যে দুই দিন মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।
শমী ইব্রাহিম নামের এক অভিভাবক জানান, তাঁর সন্তান প্লে গ্রুপ থেকে নার্সারিতে উঠেছে। টিউশন ফি ১৫ হাজার টাকা, যা এই মুহূর্তে তাঁর জন্য বড় চাপ। আর স্কুল বন্ধের সময় অনলাইনে ক্লাস হলেও সার্বিক খরচ কমার কথা। এ জন্য তাঁরা কেবল করোনাকালে শিক্ষার্থীর বেতন ৫০ শতাংশ কমানোর কথা বলেছেন। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ এখনো মানেনি।
উল্লেখ্য, ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলো পুরোটাই শিক্ষা ফির ওপর নির্ভর করে চলে। আর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যেগুলো এমপিওভুক্ত, সেগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা কেবল মূল বেতনসহ সামান্য কিছু ভাতা সরকার থেকে পান। বাকি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন হয় মূলত শিক্ষা ফি আদায়ের মাধ্যমে। তাই শিক্ষা ফি নিয়ে স্কুলগুলোও চাপে আছে। সরকারি হিসাবে দেশে ইংরেজি মাধ্যমে স্কুল আছে ১৪৫টি। এগুলোতে পড়াশোনা করে সাড়ে ১১ হাজারের মতো শিক্ষার্থী। যদিও বেসরকারি হিসাবে প্রকৃত সংখ্যাটি আরও বেশি। ইংরেজি মাধ্যমের প্রতিষ্ঠানগুলোতে একসময় কেবল ধনী পরিবারের সন্তানেরা পড়ত। এখন মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক শিক্ষার্থীও এসব প্রতিষ্ঠানে পড়ে।