আশা করি রহমতের অসীম দরিয়া মহান অল্লাহপাকের অশেষ রহমতে বৌমা আর আমার দাদু ভাইদের নিয়ে ভালো আছো। আমি বিশ্বাস করি, তুমি চিরকাল ভালো থাকবা। এই দোয়াই আমি সবসময় করি। মনে রাখবা, তোমার হতভাগ্য পিতার দোয়া চিরকাল তোমার সঙ্গে ছায়ার মতো আছে।এটি আল্লাপাকেরই বিধান, কায়া থেকে ছায়া আলাদা করা যায় না!
আর আমি কেমন আছি, তা নিয়ে ভেবো না বাবা। অবশ্য, নানান ব্যস্ততার চাপে আমাকে নিয়ে ভাবার সময় তোমার আছে কিনা তাও তো জানি না। তবু বলি, ভালো আছি। আর একটা কথা হলো, কবরে যাবার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাবার পর বেঁচে থাকার আসলে কোন মানে হয় না! কিন্তু এরপরও যে কেন মানুষ কথায় কথায় হায়াত দারাজ করার কথা বলে তাহা আমি বুঝিনা। থাক, এইসব মারেফতি কথা।
বাবা,
আমার বউমা এবং দাদু ভাইয়েরা ভালো আছে বলে আশা করি। এখনো আমার মনে আছে, প্রথম যেদিন বৌমা আমাদের ঘরে চাঁদের আলো ছড়িয়ে এসেছিলো, ভরা জোসনা যাকে বলে। সেদিন তোমার মা’র সে কি ছুটাছুটি!
সে সময় তোমার মা পঞ্চাশ পেরিয়ে গিয়েছিলন, সঙ্গে ভুগছিলন নানান রোগে। তার শরিরে এইখানে ব্যথ্যা, সেইখানে কম জোর। অথচ সেদিন তার ছুটাছুটি দুরন্ত কিশোরীকেও যেন হার মানিয়েছিলো। বাধভাঙ্গা আনন্দে দোল খাচ্ছিলো সে। আনন্দ যেন আর ধরে না তার! এদিকে আমি ভেবেছিলাম, আমার মা নতুন রূপে এসেছে। কিন্তু এই ‘ক্লোন মায়ের’ আসল রূপ প্রকাশ পেতে বেশি সময় লাগেনি। কয়েক মাসের মধ্যে তার বিরক্তির ধুতরা ফুল ফুটতে শুরু করলো। এদিকে তোমার বিরক্তির দ্রুত ক্লাইমেক্সে পৌছে গেলো। আল্লাহর কি লীলা! তোমার মা হঠাৎ করে চলে গেলেন দুই দিনের নোটিশে। ফলে তাকে আর ক্লাইমেক্স পর্ব দেখতে হলো না। তার ভাগ্য অনেক ভালো। নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি হবার আগেই চির প্রশান্তির ঘুমের জগতে গেল সে।
এদিকে থেকে আমার ভাগ্য অনেকটাই ভিন্ন। কারণ, আমার অভিজ্ঞতার ঝুড়ি পুরোটা পূর্ণ হয়েছে। অবশ্য, চারেিদকর দৃশ্যপট দেখে এ রকম একটি মানসিক প্রস্তুতি আমার অগে থেকেই ছিলো। কিন্তু, পূর্ব ধারণা যখন বাস্তবে ফলতে শুরু কওে তখন হয়তো আর ধারনা তেমন কাজে লাগে না। আমারও তাই হলো। আমি খুবই ভেঙ্গে পড়েছিলাম। কারণ কল্পনার চেয়ে বাস্তব ছিলো অনেক বেশি বেদনার। সবকিছু হয়তো ঘটার আগে কল্পনায়ও আসে না। যেমন, বৃদ্ধাশ্রমের বিষয়টাই ধরো।
আমাকে স্বীকার করতেই হবে, বৃদ্ধাশ্রমে আশার ব্যাপারে তুমি কোনই জোর-জবরদস্তি করোনি। আমার নিজের ইচ্ছায়ই এসেছি এখানে। তবে এই ইচ্ছা বাধভাঙ্গা জোয়ারের মতো কেন প্রবল হলো, তা বাবা তুমি কম জানো না। আচ্ছা বাবা, গুছানো ছিমছাম দামী ডুপ্লেক্স ফ্লাট থেকে অগোছালো অক্ষম মানুষটা বিদায় করার সাফল্য নিয়ে বৌমার সঙ্গে কি তোমার কখনো কথা হয়? যাই বলো, বৌমা কিন্তু সপল মানুস। সবসময় তার পরামর্শকে গুরুত্ব দেবা, বাবা। সে অনেক চিকন বুদ্ধি রাখে। তার জন্য আমি দোয়া করি!
সুমন বাবা,
আবার ভেবো না, বৌমার উপর আমার কোন রাগ আছে! ভুল আসলে আমারই ছিলো। বৌমার মধ্যে আমি ওপারে থাকা মা এবং আল্লাহর না দেয়া মেয়ের ছবি খুঁছতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলেছিলাম। আমার মনে রাখা উচিত ছিলো, সোনার পাথরবাটি হয় না! থাক এই প্রসঙ্গ। কষ্টের প্রসঙ্গ কম অলাপ করাই ভালো।
বাবা,
আমার দাদু ভাইয়েরা কেমন আছে? বড় দাদু ভাইর কি যেনো নাম? ভুলে গেছি। কোন কিছুই এখন আর মনে থাকে না। বড় দাদু ভাইকে সম্ভবত তিন বছরের দেখেছিলাম। আমাদের ফ্লরের কেয়ারটেকার ছেলেটা হিসেব করে কয়েক দিন আগে জানিয়েছে, পাঁচ বছর ধরে আমি বৃদ্ধাশ্রমে আছি। এ হিসেবে বড়দাদু ভাইয়ের বয়স এখন আট বছর। আচ্ছা, ওকি আগের মতো দুষ্টামী করে? দাদা-দাদা বলে ও যখন আমার কোলে ঝাপিয়ে পড়তো তখন মনে হতো আমি দুনিয়ার বাদশাদের বাদশা। নিজেকে সুলতান সুলেমান ভাবতান তখন। ভিখারীর মতো বিদায়ের দিন আমি বারবার ওকে দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বৌ-মা সামনে আনেনি। এতে তোমরও স্পষ্ট শায় ছিলো। তবে ছোট দুদু ভাইকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলোম কিছুটা দূর থেতে এক ঝলক, বৌমার কোলে। যেনো চাঁদের কোলে চাঁদ! আসলে চাঁদ দূর থেকে দেখাই ভালো। তাতে চাঁদের কলংকের বিষয়টা তেমন চোখে পড়ে না। তাদের অনেক অনেক আদর দিও, বাবা সুমন।
বাবা,
তোমার সন্তানদের কোন চাওয়া অপূর্ণ রাখবা না। তোমার হতভাগ্য-হতদরিদ্র কেরানী গরীব বাবা তোমার অনেক চাহিদা পূর্ণ করতে পারেনি। কিন্তু তুমি তো গরীব না। তোমার সন্তানদের কোন চাহিদা-শখ যেন অপূর্ণ না থাকে। হয়তো এই চাহিদান পুরনের কৃতজ্ঞতায় তারা তোমাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাবার কথা নাও ভাবতে পারে। তবে বাবা, চাহিদার দিগন্ত রেখা কোথাও গিয়ে শেষ হয় তা বলা কঠিন। হয়তো শেষ হয়ই না। সময় পেলেই আমি তোমাতে নিয়ে ঘুরতে বের হতাম। বসতাম দিয়ে বড় মাঠে, অথবা নদীর পাড়ে। প্রায়ই তুমি দুরে আকাশ নেমে যাওয়ার ছবি মুগ্ধ হয়ে দেখতে। একবো বললে, তুমি ওখানে যাবে, মাটির কাছে আকাশ দরবে। আমি তোমাকে যতই বুঝাবার চেষ্ট করি তুমি ততই আবুঝ হয়ে যাচ্ছিলে। এক সময় বললাম, আচ্ছ চলো! কিন্তু কিছু দুর হাটার পর তুমি ক্লান্ত হয়ে গেলে। বললে, বাবা আজ থাক; আর একদিন ধরবো। অবশ্য তুমি সেই আকাশ ধররার বায়না আর কখনো করোনি। হয়তো সেই বয়সেই বুঝে গিয়েছিলে, আকাশ আসরে ধরা যায় না। আকাশের ধারনা আবার দুই রকমের। প্রকৃতির ও কল্পনার।প্রকৃতি আসলে আকাশ বলে কিছু নেই। াার কল্বপনার আকাশ কেউ কখনো ছুতে পেরেছে বলে শোনা যায়নি। মানুষ যতই উপরে ওঠে তার আকাশ ততই দূরে চলে যায়। থাক এই অমিমাংশিত জটিল প্রসঙ্গ। তবে তুমি আবার ভেবো না, তোমাকেও আমি বৃদ্ধাশ্রমের আকাশ দেখতে চাই।
বাবা,
একটা কথা তোমাকে চুপি চুপি বলি। তা হচ্ছে, যেভাবেই পারো বৃদ্ধাশ্রমে আসার বিষয়টা ঠেকাবা। কারণ এখানে প্রয়োজনীয় সবকিছু থাকলেও অতীতের আপন লোকগুলো থাকে না। কিন্তু আতীত বাবর ফিওে আসে। তাও আবার সুখস্মৃতি। অতীতের বেদনার তো অনেক ঘপনাই আছে। কিন্তু বাবা, বৃদ্দাশ্রমে আসার পর সেগুলো একবারও মনে পড়ে না। বর্তমান দশাকে সহনীয় করার জন্য অতীেিতর বেদনার স্মৃতি কতবার যে মনে করার চেষ্টা করেছি তার কোন হিসেব নেই। কিন্তু আবাক কান্ড, একবারও মনে পড়েনি। অতীতে কেবল সুখের ছবি, আর বর্তমানে কেবল কস্টের পাহাড়। সব সময় আমার বুকে চেপে থাকে। সে যে কি কষ্ট, তা বলে বুঝানো যাবে না।
আচ্ছা বাবা, বরীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্রের সময় কি বৃদ্ধাশ্রম ছিলো না? থাকলে ভালো হতো। তারা এখানকার কষ্টের কথা লিখতে পারতেন। আর এখনকার কবি-সাহিত্যিকরা যেমন কেমন। কামের কথা বাদ দিয়া কেবল বেফজুল প্যাচাল পাড়ে!
বাবা সুমন,
তুমি কেন দুইএক ঈদে আসো তা আমি বুঝি না। তোমাকে কিভাবে বুঝাবো, মিনিট পাঁচেক থেকে তুমি যখন চলে যাও তখন আমার ভিতরটা দুমড়েমুচড়ে যায়। এ জন্যই তোমাকে আসতে নিষেধ করে আসছি। এরপরও তুমি কাজকর্ম রেখে কেন আসো বুঝি না। তুমি আবার এটা ভেবো না, তুমি না আসলে আমি তোমায় উপর অভিমান করবো অথবা তোমার জন্য কম দোয়া করবো। তোমাদের জন্য আমার দোয়া চিরকালই থাকবে। আচ্ছা বাবা, আমাদেও এই আশ্রমের কাছাকাছি কি তোমার কোন বাগানবাড়ী আছে? যেখান থেকে ফেরার পথে আমাকে দেখে যাও। আচ্ছা, আমার পৈত্রিক সম্পত্তি যা ছিলো তা তো আমি বিক্রি করিনি। সেগুলো তো তোমার দখলেই আছে। তানিয়ে কোন অসুবিধা নেই। অবশ্য তোমাকে দন্যবাদ দিতেই হবে, সেগুলো কখনো লিখে দিতে বলোনি। আমারও মনে ছিলো না। থাকলে ঠিকই লিখে দিয়ে আসতাম। এখনো তুমি চাইলে লিতে দিতে পারি। দুএকবার তো বলোছিও। কিন্তু প্রতিবারই তুমি কেমন যেনো লাজুক লতার মতো গুটিয়ে গেছো। কিছুদিন ধওে আমার মনে হচ্ছে, তুমি যে আমার কাছে আসো কি আমি বেচে আছি কিনা তা দেখার জন। সম্পত্তির ওয়ারিশ হতে হলো তো ডেথ সার্টিফিকেট খুবই জরুরী হয়েগেছে। বাবা, এনিয়ে ভেবোনা। আমি এখানকার সুপারকে বলেগেছি। সে তোমাকে আমার ডেথ সার্টিফিকেট দ্রুত পৌছে দেবে।
বাবা সুমন,
সমস্যা হচ্ছে, ইদানিং কেমন যেনো অচল হয়ে যাচ্ছি। আমার পৃথিবীটা সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে ঠাহর করতে পানি না, অমি কোথায় আছি। এ ছাড়া আমার আর কোন সমস্যা হয় না। এদিকে গণি মিঞার আফসোসের শেষ নেই! ওনার ছেলে-মেয়রা তাকে এখানে রেখে যাওয়ার পর একবারও খোঁজ নেয়নি। এ নিয়ে তার অনেক কষ্ট। এদিকে বছরে তুমি একবার আসার ঘটনায় কষ্ট যে মাত্রায় বেড়ে যায় তা সহ্য করা আমার জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই কষ্ট টনটনে থাকতে থাকতেই আবার একবছর পর ঈদ আসে, তুমি আসো। আর কষ্টের পারদ আবার সর্বোচ্চ ঘরে পৌছায়, বহু ঝাকানিতেও সেই পারদ আর নামে না!
বাবা,
জীবন সায়াহ্নে এসে আমার নানান বিষয়ে অনুশোচনা হচ্ছে। মনে হয়, কোথাও যেন আমি বড় ভুল করে ফেলেছি। অথবা পুরোটাই ছিলো ভুলের কম্বল। যা জড়িয়ে এখন আমি আছি। তোমাকে মানুষ করার জন্য, লালন-পালন করতে গিয়ে কোথায় যেন মাত্র ছাড়িয়েছিলাম। আমি তোমাকে কেন্দ্র করেই জীবনের সকল পরিকল্পনা করেছিলাম। ফলে আমার নিজের জীবনের অনেক কিছু আমার বৃত্তের বাইরে রাখতে হয়েছে। আমার বৃত্তের কেন্দ্রে ছিলো তুমি। অথচ তুমি এখন আলাদা এক বৃত্তের কেন্দ্র। আমি যে বৃত্তে আছি তা থেকে তুমি অনেক দূরে। চিরকার ঘুরলেও আলাদা বৃত্ত এক হবার নয়।
তোমার কাছে হয়ত এটাই আমার শেষ চিঠি তাই একটু বেশি কথা বলে ফেলছি বাবা। আবার রাগ কোর না। অধম নাখান্দা বৃদ্ধের শেষ উপদ্রব বিবেচনা করে ক্ষমা করেদিও। অবশ্য এতো বড় চিঠি পড়ার মতো সময় যদি তুমি পাও।
বাবা,
বহুবার আল্লাহর কাছে মৃত্যু প্রর্থনা করেছি। কিন্তু আমার ফরিয়াদ আল্লার আরস পর্যন্ত পৌছেছে বলে মনে হয় না। তাই স্বাভাবিক নিয়মে তাড়াতাড়ি ওপারে যেতে পারবো বলে ভরসা পাচ্ছি না। এদিকে এই জীবন অসহনীয় বোঝা হয়ে গেছে। আর বইতে পারছি না! তাই অন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এজন্য জীবনের শেষ কথাগুলো আজকেই বলে দেবার চেষ্টা করছি। কিন্তু ঠিকমতো পারছি না। মনের ব্যাথা কেবলই চোখের জল হয়ে ঝড়ে। ভেবো না, আমি তোমাকে দোষারোপের কাঠগোড়ায় দাঁড় করাচ্ছি। তুমি আমার কাছে সু-সন্তান। কিন্তু আমি পিতা হিসেবে মোটেও সফল নই। কাজেই তোমাকে দোষ দেব কোন মুখে?
বাবা,
বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে সমাজে বহু ধরণের খারাপ কথা প্রচলিত আছে। কিন্তু আমি সেটা মনে করি না। আগেও বলেছি, তুমি আমাকে জোড় করে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাওনি। আচ্ছা বাবা, আমি যেদিন তোমার ফ্লাট ছাড়ি সেদিন কি তুমি কেঁদেছিলে? নাকি আমার চোখের পানির আধিক্যে অবাস্ত কিছু দেখেছি! অথবা তোমার চোখের জল আমার কল্পনা বিলাশ!
বাবা সুমন,
তোমার মনে আছে কিনা জানি না, তোমার লেখাপড়ার বিষয় নিয়ে অনেক কিছু করেছি, যা পরে বাড়াবাড়ি মনে হয়েছে। তবে আমার উদ্দেশ্যে সফল হয়েছে। তুমি মস্ত শিক্ষিত হয়েছো। দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের তালিকায় তোমার নাম। ভিআইপি-সিআইপি, কি যেনো বলে। এটা কি আমাদের কম পাওয়া? এতো পাবার পরও এইধম বৃদ্ধের উপস্থিতি যদি আমার দাদুভাইদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের অন্তরায় ঘটায় তবে সেটা খুবই অনুচিত হবে! আর অনুচিত বিষয় তুমি মানবে কেন! কিন্তু তোমাকে একটু মনে করিয়ে দেই, তোমার দাদা-দাদু-নানা-নানী এবং অন্যান্য আত্মীয় স্বজনের কারণে তোমার লেখাপড়া এবং বেড়ে ওঠায় কোন ব্যাঘাত ঘটে নাই।
যাক, সেই সময় আর এই সময় নিশ্চয়ই এক না। সময়ের দাবি বলে একটা কথা আছে না! ১৯৭১ সালে যেই ভারতের মাটিতে আমাগো দ্যাশের হিন্দু-মুসলমানের আশ্রয় মিলেছে সেই ভারতের মাটিতে এখন মুসলমানদেরকে অন্য দেশের মানুষ হিসেবে অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে মারা হয়। আসলে অনেক কিছু সময়ের সঙ্গে পাল্টে যায়, বাবা।
বাবা,
এখানে যে ছেলেটা আমাদের দেখাশুনা করে সে ছেলেটার মত ছেলে খুব কমই দেখেছি। ওর সম্পর্কে বললে তোমার মনে হবে, এই জগতে এমনও বোকা ছেলে আছে! সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা, এমনকি গভীর রাতে অমাকে সজাগ দেখলেই মিষ্টি হেসে জিজ্ঞাসা করে, দুদু, কিছু লাগবে আপনার? ছেলেটা বরিশালের। ওর আচরণে বুকের মধ্যের শূন্যতা কেমন যেনো বাড়িয়ে দেয়। ছেলেটা খুব গরীব। দিনরাত পরিশ্রম করে এখান থেকে যা পায় তা দিয়েই বাবা-মা এবং স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে চলতে হয় ওকে। আমি মনোযোগ দিয়ে ওর কথা শুনি। একই কথা বারবার শুনি। আমার মত অক্ষম-অলসের বাইরে তো আর কোন কিছু করার থাকে না বাবা। আমার ইচ্ছা হয়, ওকে কিছু টাকা দেই। কিন্তু আমার সে সাধ্য তো নাই। আমি এখন বরীন্দ্রনাথের খাঁচার পাখী। আপন ভেবে ছেলেটাকে একবার বলেছিলাম, ওর বাবা-মাকে এই বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে আসতে। এ কথাশুনে তো ছেলেটা হাউমাউ করে কেঁদে দিলো। বোকা ছেলে! বললো, রক্ত বিক্রি করে হলেও বাবা-মাকে চালাবে; কোনদিন বৃদ্ধাশ্রমে দিবে না। ছেলেটার কথা শুনে ভেতরটা হঠাৎ মুচড়ে গিয়েছিল। কিন্তু ক্ষণিক পরেই বুঝলাম ছেলেটা তো অল্প শিক্ষিত, বোকার হদ্দ। অল্পশিক্ষিত একটি ছেলে তার বাবা-মাকে নিয়ে যা ভাবছে সেটা অর্থহীন আবেগ। তোমরা যারা উচ্চশিক্ষিত, সমাজে প্রতিষ্ঠিত তাদের পক্ষে এসব ফালতু সেন্টিমেন্ট পাত্তা দিলে চলে! বাবা সুমন,
অনেক কথাই লেখার ছিলো। কিন্তু বেশি লিখতে পারলাম না। কোথা থেকে একটা অবাধ্য পোকা এসে আমার চোখের মধ্যে ঢুকে পড়ে বারবার! আর কেবল পানি পড়ে। কিছুটা যন্ত্রনাও হচ্ছে। অক্ষম বাবাকে ক্ষমা করে দিও, বাবা। তোমার সন্তানদের জন্য তুমি যেন আমার মতো অক্ষম বাবা না হও, সেই দোয়া করি।
কয়েকদিন হল তোমার মা আমায় খুব জ্বালাচ্ছে। স্বপ্নে সে কেবল ডাকে। তাকে হারানোর ১৫ বছর পর এমনটা কেন ঘটছে তা বুঝতে পারছি না। তোমার মায়ের প্রসঙ্গ তুলেছি বলে আমার উপর বেশি রাগ করো না। ক্ষমা করে দিও। আবার ভেবো না, আমার কোন কষ্ট আছে। তোমাদের দোয়ায় আমি অনেক ভালো আছি। পাশের সিটের মকবুল সাহেব আমার সুখ দেখে ঈর্ষা করেন। লোটা সম্ভব সাংবাদিক ছিলো। কোন কিছুই তার নজর এড়ায় না। এই ধরো, ঈদে আমার সঙ্গে তোমার দেখা করতে আশার বিষয়টি তার চোখে পড়বেই।
প্রিয় বাবা সুমন,
এবার আর তুমি এসো না। কারণ ঈদের পর দিনই অমি অজানা দেশে যাত্র করবো বলে মনস্থির করেছি। এদিকে অনেক আগেই আশ্রমের ম্যানেজারকে বলে রেখেছি, আমার অখেরি যাত্রার খবর যেনো তোমাকে জানানো না হয়। কারণ, আমি তোমার সময় নষ্ট করতে চাই না। তোমাকে দেখে বুঝেছি, সময়ের দাম অনেক বেশি। এরপরও বিষয়টি তোমাকে জানিয়ে রাখছি যাতে একটি অনর্থক চিন্তা থেকে তুমি মুক্ত হতে পারো। এই চিঠি তোমার হাতে যখন পৌছবে তার আগেই আমি ওপারে পৌছে যাবো। এ রকম একটি পাকা প্রস্তুতি আমি করে রেখেছি। ঈদের পর দিনই কাজটি করবো। রমজান মাসেই এটি করার কথা চিন্তা করেছিলাম। তাতে গোর আজাব কম হতো। কিন্তু তাকে আশ্রমে ঈদের আনন্দে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এতো দিন যাদের সাথে ছিলাম তাদের একটা ঈদ মাটি করার মতো নিষ্টুর হতে পালাম না। কাজেই ঈদের পরদিন কাজটা করার পাকা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। গোর আজাবের চেয়ে পাঁচ বছরের আপনজনের মনোকষ্ট আমার কাছে বেশি কষ্টের। এদিকে সুপারকে বলে রেখেছি, ঈদের দিন তুমি এলে যেনো আমার সাথে দেখা না করায়।
তোমার মনে অছে কিনা জানি না, একবার তিনদিন ধরে দানা-পানি গ্রহন বন্ধ রেখেছিলাম। সেবারও এই রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু দুই কারণে এটি করতে পারিনি। এক. পোস্টমর্টেমের পর সেলাই করা লাশের দৃশ্য আমার মনে আতংকের এক ছবি হয়ে আছে। দুই. তোমাকে অহেতুক ঝামেলায় ফেলতে মন সায় দিচ্ছিলো না। সেবার আমি চলে গেলে অনেক আগেই তোমার এক মহা ঝামেলা দূর হতো। কিন্তু ঝামেলা হতো পুলিশের দিক থেকে। তোমার কোন দোষ নেই জেনেও টাকার গন্ধে পুলিশ এমন কচলানী শুরু করতো যে, পুলিশের পরিবর্তে তুমি আমার উপর বেশি রাগ করতে। আসলে শেষ বিদায়ের দিনে তোমাকে ঝামেলায় ফেলতে চাইনি।
বাবা সুমন,
আমার এই চিঠি শেষপর্যন্ত পোস্ট করবো কিনা তাও ঠিক নেই। কারণ এই চিঠি অন্য কারো হাতে পড়লে তুমি ছোট হয়ে যেতে পারো। তবে এটি নিশ্চিত, এবার অমি পরোপারে যাত্র করবই, ইশাল্লাহ। তুমি ভালো থেকো বাবা। ঈদ মোবারক, বাবা সুমন। দুই হাত জোরকরে বালি, তোমার এই পাপী বাবাকে ক্ষমা করেদিও, বাবা সুমন!
একাত্তর
-রাব্বি তালুকদার
একাত্তরে যুদ্ধ হলো,
জীবন দিলো আমার ভাই।
সংকল্প তাদের দৃঢ় ছিলো,
দেশটাকে যে স্বাধীন চাই।
স্বাধীনতা পেলাম বটে,
তিরিশ লক্ষ প্রান যে নাই।
কত মা-বোনের ইজ্জত গেলো,
এর হিসাব কোথায়...
বঙ্গবন্ধু
মামুন মোয়াজ্জম
যদি কেউ বলে সত্যের ওপর বাঁচো
সত্যকে করো পরম ধর্ম
তবে পিতা তোমার স্মরণ নেব
যদি কেউ বলে মানুষে বিলীন হও
মানুষে করো সর্বস্বার্থ ত্যাগ
তবে পিতা তোমাতেই...
পতাকা
-আব্দুল্লাহ আল নোমান
সব কালো রং খুন হোক
ফিনকি দিয়ে ঝরুক
লাল নীল হলুদ স্বপ্ন।
একটা দিন বেশি বাঁচুক,
রক্তাক্ত বন টিয়া কিংবা লুকোনো পতাকা।
খুনী হই আমরা
দন্ড হোক মৃত্যু,...
দখিনের সময় ডেস্ক:
বলিউড অভিনেত্রী তামান্না ভাটিয়ার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার প্রোফাইলে ‘রাধা’-সাজের ছবিতে ভরপুর ছিল। এই কাজটিকেই জীবনের অন্যতম সেরা কাজ বলে অভিহিত করেছিলেন...
দখিনের সময় ডেস্ক:
আওয়ামী লীগ গত ২৩শে জুন ঘটা করে ৭৫ বছরপূর্তি পালন করেছিল। সেদিন ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশে নেতাকর্মীর উপস্থিতি ছিল কানায় কানায়...
দখিনের সময় ডেস্ক:
সরকারি পুকুর দখলের ঘটনায় দলের পদ হারানোর পর এবার অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিনের বিরুদ্ধে তিনতলা বাড়ি দখলের অভিযোগ উঠেছে। প্রায় ২ কোটি...
We use cookies on our website to give you the most relevant experience by remembering your preferences and repeat visits. By clicking “Accept”, you consent to the use of ALL the cookies.
This website uses cookies to improve your experience while you navigate through the website. Out of these, the cookies that are categorized as necessary are stored on your browser as they are essential for the working of basic functionalities of the website. We also use third-party cookies that help us analyze and understand how you use this website. These cookies will be stored in your browser only with your consent. You also have the option to opt-out of these cookies. But opting out of some of these cookies may affect your browsing experience.
Necessary cookies are absolutely essential for the website to function properly. These cookies ensure basic functionalities and security features of the website, anonymously.
Cookie
Duration
Description
cookielawinfo-checbox-analytics
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Analytics".
cookielawinfo-checbox-functional
11 months
The cookie is set by GDPR cookie consent to record the user consent for the cookies in the category "Functional".
cookielawinfo-checbox-others
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Other.
cookielawinfo-checkbox-necessary
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookies is used to store the user consent for the cookies in the category "Necessary".
cookielawinfo-checkbox-performance
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Performance".
viewed_cookie_policy
11 months
The cookie is set by the GDPR Cookie Consent plugin and is used to store whether or not user has consented to the use of cookies. It does not store any personal data.
Functional cookies help to perform certain functionalities like sharing the content of the website on social media platforms, collect feedbacks, and other third-party features.
Performance cookies are used to understand and analyze the key performance indexes of the website which helps in delivering a better user experience for the visitors.
Analytical cookies are used to understand how visitors interact with the website. These cookies help provide information on metrics the number of visitors, bounce rate, traffic source, etc.
Advertisement cookies are used to provide visitors with relevant ads and marketing campaigns. These cookies track visitors across websites and collect information to provide customized ads.
অসাধারণ