• ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষাবোর্ড চলে শিক্ষার্থীদের টাকায়, বরিশালে যেনো আলাদীনের চেরাগ

দখিনের সময়
প্রকাশিত ডিসেম্বর ১১, ২০২৪, ১৭:৪৫ অপরাহ্ণ
শিক্ষাবোর্ড চলে শিক্ষার্থীদের টাকায়, বরিশালে যেনো আলাদীনের চেরাগ
সংবাদটি শেয়ার করুন...
আলম রায়হান:
দেশের শিক্ষা বোর্ডগুলো সরকারী নয়, শায়ত্ত্বশাসিতও নয়। শিক্ষাবোর্ড হচ্ছে সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। ১৯৬২ সালে এই সংস্থার সৃষ্টি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ১৯৮৪ সালের শিক্ষা আইন। শিক্ষাবোর্ডকে সরকারের তরফ থেকে কোন অর্থ দেয়া হয় না। বরং শিক্ষাবোর্ড থেকে ভ্যাট-ট্যাস্ক খাতে বহু টাকা সরকার নেয়। এই সংস্থা নিজের আয় দিয়ে চলে। শিক্ষাবোর্ডের এই আয় আসে শিক্ষার্থীদের পকেট থেকে। বিস্ময়কর এই বিধানের মোদ্দা কথা হচ্ছে,  শিক্ষাবোর্ড চলে ‘আয় করিয়া ব্যয় করিবার’ নীতিমালায়।
প্রকাশ্যে শিক্ষার্থীদের পকেট কেটে ‘আয় করিয়া ব্যয় করিবার’ অদ্ভূত নীতিমালার আড়ালে শিক্ষাবোর্ডে চলে নানান অনৈতিক কারবার। এই সুযোগে এখানের কর্মচারী-কর্মকর্তারা হয়ে ওঠেন একএকটি টাকার কুমির। এই টাকা কামাই করার ক্ষেত্রে বরিশাল শিক্ষাবোর্ড নাম্বার ওয়ান বলে মনে করা হয়। এবং এখানে চাকরী করার সুযোগ পাওয়া মানেই আলাদীনের চেরাগ হাতে পেয়ে যাওয়া! এই সংস্থার প্রায় সবাই কোটিপতি। তাদের কোটিপতি হবার পিছনে নানান অপকর্ম রয়েছে। এরমধ্যে ফেল করা ছাত্রকে এ-প্লাস পাইয়ে দেবার অভিযোগও আছে। আর খাতা পাল্টে দেবার মামলার বিচার তো এখনো চলমান। মজার বিষয় হচ্ছে, এই মামলায় আসামী করা হয়েছে বোর্ডের পিয়ন সমতুল্য দুই কর্মচারীকে। এই ‘চিকন আলীর’ নাম গবিন্দ্র চন্দ্র পাল এবং মনিরুল ইসলাম। উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পরপরই রাজাকার হিসেবে একমাত্র ব্যক্তি যার ফাঁসী হয়েছিলো তার নাম চিকন আলী। বাংলাদেশের ইতিহাস বলে, চিকন আলীরাই ফাঁসে। আর রাঘব বোয়ালরা ধরা ছোয়ার বাইরেই থেকে যায়।
পলাতক স্বৈরাচার শেখ হাসিনা তাঁর পিয়ন চারশ’ কোটি টাকার মালিক হবার কথা নিজের মুখেই বলেছেন প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে সাংবাদিক সম্মেলনে। কিন্তু নিজে এবং বড় মিয়ারা কত টাকার মালিক তা শেখ হাসিনা উচ্চারণ করেনি। যেনো সবদোষ পিয়ন-কর্মচারীদের! বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের ধারাও যেনো একই রকমের। কেবল পিয়ন সমতুল্যদের বাড়ি নিয়ে আলোচনা হয়। বড় মিয়ারা থাকেন আঁড়ালে। তবে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অতিসম্প্রতি চোখ ধাঁধাঁনো বাড়ি বানিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের সাবেক এক চেয়ারম্যান। শুধু তাই নয়, ২৯ নভেম্বর ৬ তলা বাড়ির যমকালো উদ্বোধন করে দাপটের জানান দিয়েছেন অতিলম্বা এই ব্যক্তি। যদিও তিনি চেয়ারম্যান পদে আসীন ছিলেন মাত্র সাত মাসের কয়েকদিন বেশী। এর আগে এই সংস্থার স্কুল ইন্সপেক্টর ছিলেন। ছিলেন দুটি কলেজের প্রিন্সিপাল, একটির ভাইস প্রিন্সিপালও ছিলেন। শিক্ষক হয়েও তিনি ধনকুবের হয়েগেছেন কীভাবে? তার বিরুদ্ধে নানান অনিয়মের সাথে ডেকরেটরের কাছ থেকেও কমিশন খাবার অভিযোগ আছে।
এদিকে একটি সূত্র বলছে, বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের প্রায় সকলেই কোটিপতি। বরিশাল শহরে তাদের চোখ ধাধানো বাড়ি রয়েছে। কেউ কেউ আবার রাজধানী ঢাকায় একাধিক ফ্লাটের মালিক। দেশের শিক্ষা বহু আগেই আদম ব্যবসার মতো হয়েগেছে। এখন কেউ আর শিক্ষা দান করেন না, করেন শিক্ষা ব্যবসা। এই অবস্থায় শিক্ষা নিয়ে নানান অরাজগতা চলার বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। শিক্ষার নামে গোজামিল ও ফাঁকিবাজী চলমান ধারার সঙ্গে নগ্নভাবে চলছে নিষ্পেষণ। প্রতিনিয়ত পিষ্ঠ হচ্ছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থী নিষ্পেষনের ক্ষেত্রে স্কুল-কলেজ হচ্ছে শেখ হাসিনার আমলের থানার মতো এবং হেডমাস্টার-প্রিন্সিপালরা যেনো থানার ওসি। যা ইচ্ছা তা করতে পারেন! তবে ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবার পর থানা-পুলিশের চিত্র অনেকটাই পাল্টেগেছে। কিন্তু মোটেই পাল্টায়নি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর মূর্তমান উদাহরণ হয়ে আছে বরিশাল নগরীর শত বছরের পুরনো হালিমা খাতুন স্কুল। তবে প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থাই কমবেশি এই স্কুলটির মতোই। আর বরিশালের স্কুল-কলেজগুলো এক অর্থে জিম্মি বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের কাছে। সূত্রমতে বৈধ পথে এবং অবৈধভাবে কাড়িকাড়ি টাকা হাতিয়ে নেবার প্রমানিত অভিযোগ আছে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের বিরুদ্ধে।
আইন-বিধানে ত্রুটি, মনিটরিং-এর অভাব এবং নানান অনাচার- অরাজগতার কারণে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড টাকার খনিতে পরিণত হয়েছে। জানাগেছে, নানান উছিলায় পদেপদে স্কুল-কলেজ এবং শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়। শিক্ষা বোর্ডের সেবা মানেই, প্রকাশ্যেই ‘ফেলো কড়ি মাখো তেল!’ এরপরও বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধার বাইরে বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বছরে ছয়টা বোনাস পান। এর বাইরে আরো অনেক ‘বৈধ’ আয় আছে। একদল হুজুর যেমন বলেন, ‘জিকিরে জিকিরে নেকি’, তেমই বরিশাল বোর্ডে স্বাক্ষরে স্বাক্ষরে টাকা। এবং এই টাকার অংকটা বেশ বড়। আর অবৈধ প্রাপ্তির তো নেই কোন সীমা পরিসীমা। ফলে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের প্রায় প্রতিটি কর্মকর্তা-কর্মচারী এক একজন ধনকুবের, যেনো এ যুগের জগৎশেট!