• ১লা এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৮ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভূমিকম্পে বাংলাদেশ কতটা ঝুঁকিতে

দখিনের সময়
প্রকাশিত মার্চ ২৮, ২০২৫, ১৯:১০ অপরাহ্ণ
ভূমিকম্পে বাংলাদেশ কতটা ঝুঁকিতে
সংবাদটি শেয়ার করুন...
দখিনের সময় ডেস্ক:
আজ শুক্রবার(২৮ মার্চ) সারা দেশে যে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, এর উৎপত্তিস্থল তিব্বতের শিগেৎসে শহরে। সেখান থেকে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার দূরত্ব ৬১৮ কিলোমিটার বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর আগেও বাংলাদেশে গত তেসরা জানুয়ারি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিলো। তবে সেটি ছিল মাঝারি মাত্রার, আজকের মতো এতটা তীব্র ছিল না। চলতি বছরের শুরুতে হওয়া ওই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলও ছিল বাংলাদেশের বাইরে।
রিখটার স্কেলে পাঁচ মাত্রার ওই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের হোমালিন এলাকায়, ঢাকার সাথে যার দূরত্ব ৪৮২ কিলোমিটার। কয়েকশো কিলোমিটার দূরের দেশে হওয়া পরপর দু’টি ভূমিকম্প বাংলাদেশে বসে এতটা জোরালোভাবে অনুভব করতে পারাটা কি কোনো চিন্তার কারণ? জানতে চাওয়া হয়েছিলো আবহাওয়াবিদ ফারজানা সুলতানার কাছে। “এই দু’টোর কোনোটাতেই বাংলাদেশে কোনো প্রভাব পড়েনি। ঝাঁকুনি অনুভব করেছে কেবল। তবে আজকের মাত্রা যদি আরও বেশি হতো, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়তে পারতো। স্থায়িত্ব বা ম্যাগনিটিউড আরও বেশি হলে ঝাঁকুনি আরও বেশি হতে পারতো। ভবনে ফাটল ধরতে পারতো,” বলেন তিনি। বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও বার্মা—এ তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান এবং বাংলাদেশের ভেতরে ও বাইরে বড় বড় ফল্ট আছে।
মূলত, পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ট আলাদা আলাদা বিট বা প্লেট টেকটোনিক দিয়ে তৈরি হয়েছে যা নিচের নরম পদার্থের ওপরে ভাসছে। সারা পৃথিবীতে এরকম বড় সাতটি প্লেট এবং অসংখ্য ছোট ছোট সাব-প্লেট রয়েছে। এগুলো যখন সরে যায় বা নড়াচড়া করতে থাকে বা একটি অন্যদিকে ধাক্কা দিতে থাকে, তখন ভূ-তত্ত্বের মাঝে ইলাস্টিক এনার্জি শক্তি সঞ্চিত হতে থাকে। সেটা যখন শিলার ধারণ ক্ষমতার পেরিয়ে যায়, তখন সেই শক্তি কোনো বিদ্যমান বা নতুন ফাটল দিয়ে বেরিয়ে আসে। তখন ভূ-পৃষ্টে কম্পন তৈরি হয়, সেটাই হচ্ছে ভূমিকম্প। যেসব স্থানে একটি প্লেট এসে আরেকটি প্লেটের কাছাকাছি মিশেছে বা ধাক্কা দিচ্ছে বা ফাটলের তৈরি হয়েছে, সেটাকে বলা হয় ফল্ট লাইন।
বাংলাদেশ অঞ্চলে ভূমিকম্পের অন্যতম উৎস হলো ডাউকি ফল্ট, যেটি শেরপুর থেকে শুরু জাফলং হয়ে ভারতের করিমগঞ্জ থেকে বিস্তৃত। “এসব কারণে বাংলাদেশ খুবই ভূমিকম্পপ্রবণ। তাই ভূমিকম্প অনুভব করার জন্য যে নিজের দেশেই উৎপত্তি হতে হবে, এমন না। এর প্রমাণ তো এবার পাওয়াই গেল। ৬১৮ কিলোমিটার দূরের ভূমিকম্পে বাংলাদেশে ভালোই ঝাঁকুনি খেয়েছে। মিয়ানমারের পাঁচ মাত্রার ভূমিকম্পও ঢাকার মানুষ টের পাচ্ছে। ওইসব এলাকার বড় ভূমিকম্প আমাদের জন্য হুমকির,” বলছিলেন আবহাওয়াবিদ ফারজানা সুলতানা। তার মতে, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, চীন, ভারত, নেপালের অবস্থান ওই তিন ফল্ট লাইনের আশেপাশে। “তাই, মিয়ানমারের পাঁচ মাত্রার ভূমিকম্প আমরা অনুভব করি। আর যদি সেখানে সাত মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তখন আমাদের ওপর সেই প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা আছে। আর ভারত বা নেপালে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে ওই সম্ভাবনা আরও বেশি,” জানাচ্ছিলেন তিনি। যদিও সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. শাখাওয়াত হোসেনের মতে, “আমাদের দেশ জাপানের মতো ভূমিকম্পপ্রবণ না। আমরা মডারেটলি ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ।” “কিন্তু সেই অনুযায়ী আমাদের তো প্রস্তুতি নাই। আমাদের বিল্ডিং কোড মানা হয় না।”
খবর: বিবিসি বাংলা।