পবিত্র রমজানের সমাপ্তি হয় শাওয়ালের চাঁদ ওঠার মধ্য দিয়ে। তখন থেকেই এক মুসলমান অপর মুসলমানকে পরস্পরের নেক আমল কবুলের দোয়া পড়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করে থাকেন। ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করার সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো এ দোয়া পাঠ করা—
تقبل الله منا ومنكم
উচ্চারণ: তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম।
অর্থ: আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের পক্ষ থেকে (যাবতীয় ভালো কাজ) কবুল করুন।
জুবাইর ইবনু নুফাইর (রা.) বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবীজি (স.)-এর সাহাবায়ে কেরাম ঈদের দিন পরস্পর সাক্ষাৎ হলে বলতেন ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়ামিনকুম’। (ফাতহুল কাদির, খণ্ড: ০২, পৃষ্ঠা-৫১৭)
অন্য বর্ণনায় এসেছে- ওয়াসিলা (রা.) বলেন, আমি রাসুল (স.)-এর সঙ্গে ঈদের দিন সাক্ষাৎ করলাম। আমি বললাম, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা’। মহানবী (স.) বললেন, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা।’ (বায়হাকি: ৩/৪৪৬)
আমাদের দেশে ‘ঈদ মোবারক’ (বরকতময় ঈদ) বলে ঈদের শুভেচ্ছা জানানো হয়। লোকসমাজে যে সকল সুন্দর অর্থবোধক বাক্য ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে সেগুলো ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি শরিয়ত। আল্লামা আব্দুল্লাহ বিন বায (রহ)সহ বড় আলেমগণ ঈদ মোবারক বা এ জাতীয় বাক্য ব্যবহার করে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে কোনো আপত্তি করেননি। তবে মনে রাখতে হবে, সুন্নত অনুযায়ী দোয়া পড়াই সকল ক্ষেত্রে সর্বোত্তম ও সওয়াবের আমল। তাই মুমিনের জন্য সবসময় সুন্নতকে গুরুত্ব দেওয়া বাঞ্ছনীয়।
এছাড়াও ঈদের দিন সালাম ও মুসাফাহা করা ইসলামি শিষ্টাচারের অনুষঙ্গ। হাদিস থেকে জানা যায়, সালামের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি করে দেন। এছাড়াও পারস্পরিক সাক্ষাতে মুসাফাহা বা হাত মেলানোর অনেক ফজিলত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, যদি দুজন মুসলিম সাক্ষাৎ করে পরস্পর মুসাফাহা করে, তাহলে তারা (ওই স্থান থেকে) পৃথক হওয়ার আগেই তাদের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (তিরমিজি: ৫/৭৪; ইবনে মাজাহ: ২/১২২০)
মুসাফাহার নিয়ম হলো- দুই হাতে করা। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, (মুসাফাহার সময়) আমার হাতটি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর দুই হাতের মধ্যে ছিল। (বুখারি: ৫/২৩১১) আর মুসাফাহার সময় এ দোয়া পড়বে— ‘ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়া লাকুম।’ হাদিসে এসেছে, যখন দুজন মুসলিমের সাক্ষাৎ হয় এবং তারা একে অপরের সঙ্গে মুসাফাহা করে, আল্লাহর হামদ (প্রশংসা) ও শোকর (কৃতজ্ঞতা) করে এবং আল্লাহর কাছে মাগফেরাত (ক্ষমা) কামনা করে তো আল্লাহ উভয়কে মাগফিরাত দান করেন।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৫১৬৯)
মুআনাকা বা কোলাকুলি করাও মুসলিম সংস্কৃতির অংশ। তাই ঈদের দিন যদি কারো সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ হয়, তাহলে মুআনাকা করতে কোনো বাধা নেই, বরং এতে সুন্নত আদায় হয়। তবে এটাকে ঈদের দিনের করণীয় মনে করা যাবে না। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুল (স.)-এর সাহাবিরা পরস্পর সাক্ষাৎ হলে হাত মেলাতেন। আর তারা সফর থেকে আগমন করলে মুআনাকা করতেন। (তাবরানি: ৩/২২)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঈদের দিনের শুভেচ্ছা বিনিময়সহ যাবতীয় আমল সুন্নত অনুযায়ী করার তাওফিক দান করুন। আমিন।