Home মতামত হাজী সেলিম থেকে ইরফান: বাপকা বেটা!

হাজী সেলিম থেকে ইরফান: বাপকা বেটা!

মাননীয় সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের গুণধর পুত্র ইরফান সেলিমের হাতে ২৬ অক্টোবর হাতকড়া দেখেছে দেশের মানুষ। দেখেছে বিশ্ববাসী। একই ধরনের হাতকড়া পুরনো ঢাকাবাসী দেখেছে, ৭৪ সালে। এবার হাতকড়া পরিয়েছে র‌্যাব। ৭৪ সালে পরিয়েছিলো পুলিশ। এবার সামনের অভিযোগ বাসায় অবৈধ অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য রাখা। নেপথ্যেও আসল অপরাধ, নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমেদ খানকে মারধর করেন। ৭৪ সালে অভিযোগ ছিলো ভেজাল সেভেন আপ তৈরী করা।

ওপেনসিক্রেট, ভেজালের কারবার কেবল সেভেন আপ-এ সীমাবব্ধ থাকেনি। নানান ভেজালের পথ পেরিয়ে টাকার পাহাড় বানিয়ে দিয়েছে ভেজাল সিমেন্টের কারবার। সেই সময় ইন্দোনেশিয়া থেকে মোংলাপোর্ট হয়ে আমদানী করা সিমেন্ট ঢাকায় খালাশ হতো বাদামতলীতে। এ সিমেন্টে ভেজাল মিশে যেতো খুচরা বাজারে। এদিকে বস্তাপ্রতি মাল খালাশের রেট একলাফে দ্বিগুন হয়ে গেলো। আমাদানীকৃত সিমেন্টে ভেজাল এবং বাদামতলী ঘাটের জুলুমবাজীর মাধ্যমে হাজী সেলিমের ঘরে টাকা আসতে লাগলো জোয়ারের পানির মতো। এরশাদ আমলে সিমেন্টের ভেজাল কারবারে জড়িত ছিলেন খুলনার এরশাদ শিকদার। এরশাদ সরকারের আমলে স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী জেনারেল মাহমুদুল হাসানের স্ত্রীর বড় ভাই এস এম রেজাউল হকের মাধ্যমে আইন শৃংখলাবাহিনী সামলানোর দায়িত্ব ছিলো এরশাদ শিকদারের। পুরো এরশাদ সরকারের সময় রাজনৈতিক লবিং রক্ষা করতেন এই এরশাদ শিকদার।

রাজনৈতিক লবিং রক্ষা করার স্বর্ণদ্বার হাজী সেলিমের সামনে খুলে দেন ঢাকা মহানগর বিএনপির সভাপতি জেনারেল মীর শওকত আলী, ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। ততদিনে জনপ্রিয়তা, অর্থ ও অধিপত্যে হাজী সেলিম এলাকায় হয়েগেছেন অপ্রতিরোধ্য। হয়েগেছেন ধনকুবের। এরপর পারিবারিক সীমারেখায় সীমাবদ্ধ না থেকে ‘পুরনো ঢাকার মোড়ল’ হবার পথে পা বাড়ালেন হাজী সেলিম। এদিকে বিপদের গন্ধ পেলেন লালবাগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য বিএনপির ঢাকা মহানগর সভাপতি জেনারেল মীর শওকত আলী। তিনি হাজী সেলিমকে কোনঠাসা করতে শুরু করলেন। কিন্তু হার মানার পাত্র নন তিনি। গোপন যোগাযোগ শুরু করলেন মোহাম্মদ হানিফের সঙ্গে। জনশ্রুতি আছে, রাজধানীতে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের নেপথ্য কারিগর আমির হোসেন আমু পর্যন্ত পৌঁছে ছিলেন হাজী সেলিম। এরপর তাঁকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কেবলই হয়েছে তার উত্থান।

মীর শওকতের হাত ধরে ১৯৯১ সালে বিএনপির মাধ্যমে রাজনীতিতে আবির্ভূত হাজী সেলিম ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে হয়েগেলেন আওয়ামী লীগের লোক। যদিও তিনি প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন এক বছর আগে, ১৯৯৫ সালেই। হাজি সেলিম কী না হয়েছেন! ঢাকার ইতিহাসে তিনি একমাত্র ব্যক্তি যিনি দুটি ওয়ার্ডে নির্বাচন করে কমিশনার নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর ছেড়ে দেয়া ওয়ার্ডে স্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের মতো আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন হাজী সেলিম। এরপরও তিনি আওয়ামী লীগের মায়ার ছায়া হারাননি। পরের নির্বাচনে তিনি আবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এমপি হয়েছেন। এবারের সংসদেরও তিনি মাননীয় সদস্য।

১৯৯১ সালে বিএনপির মাধ্যমে রাজনীতিতে এসে ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে হাজী সেলিম যে বিজয় রথ ছুটিয়েছেন তা আর থামেনি। মাঝে কেবল একবার সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারেননি, আদালতে দন্ডিত হবার কারণে। আদালতের এই দন্ড এবং ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনের সময় প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যারিস্টার হাসনাত কর্তৃক প্রচারিত লিফলেট- কোন কিছুতেই হাজী সেলিমকে বেকায়দায় ফেলতে পারেনি। অপ্রতিরোধ্য এই হাজী সেলিম এবার বড় রকমের হোচট খেলেন কাউন্সিলর পুত্র ইফরান সেলিমের কারণে। উল্লেখ্য, কাউন্সিলর(কমিশনার) হিসেবেই নির্বাচনী রাজনীতিতে কেরিসমেটিক যাত্রা শুরু হয়েছিলো হাজী সেলিমের।

উচ্চ শিক্ষিত পুত্র ইরফান সেলিমকে কাউন্সিলর প্রার্থী করতে চাননি দূরদর্শী হাজী সেলিম। তিনি চেয়েছিলেন তার বড় সন্তান কাউন্সিলর নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনীতিতে অভিসিক্ত হোক। কিন্তুু বেঁকে বসলেন ইরফানের শ্বশুর হাজী একরাম। ফলে হাজী সেলিমের ভাগ্নে ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হলে সাংসদ হাজী সেলিমের পুত্র ইরফান সেলিম। মামাতো ভাইর কাছে পরাজিত হলেন ফুপাতো ভাই।  কাউন্সিলর নির্বাচিত হবার পরই ইরফান সেলিম হয়ে ওঠেন ডন।  কিন্তু বিধিবাম! তিনি রোববার(২৫ অক্টোবর) রাতে ধানমন্ডীতে একটি কান্ড ঘটিয়ে বসলেন। যে ধরনের কান্ড এর আগে তিনি বহু করেছেন- এমনটি ধরে নেয়া যায়। হাই ফ্রিকোন্সির ওয়াকীটকি এবং টর্চার সেল থাকার ঘটনা তাই প্রমান করে। র‌্যাবও এই রকম কথা বলেছে। এরই মধ্যে তাকে এক বছরের কারাদন্ড দিয়েছে। মামলা হয়েছে একাধিক।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে দুটি। প্রশ্ন এক. নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমেদ খানকে মারধর করার আগে সেলিম পুত্র ইরফানের এতোসব কান্ড ‘খাতার নীচে’ থাকলো কেন? প্রশ্ন দুই. রাজনীতি ও জনপ্রতিনিধির মুখোশের আড়ালে সারাদেশে অসংখ্য ইরফান সেলিম প্রতিনিয়ত মানুষের জীবন দুর্বিসহ করে চলেছে তাদের ব্যাপারে সরকারের কী কোন কিছুই করণীয় নেই?  নাকি সেনসেশনাল ঘটনার আগ পর্যন্ত ইরফান সেলিমরা ধরাছোয়ার বাইরেই থাকবে, যেমন ছিলো ক্যাসিনো ডনরা!

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

অবশেষে মুখ খুললেন জেনারেল মইন ইউ আহমেদ

দখিনের সময় ডেস্ক: বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে এবার মুখ খুললেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ। তদন্তে সরকারের সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ করলেন সাবেক এই সেনাপ্রধান।...

চাপে পড়ে রাধা-কৃষ্ণের পোস্ট মুছে ফেললেন বলিউড অভিনেত্রী

দখিনের সময় ডেস্ক: বলিউড অভিনেত্রী তামান্না ভাটিয়ার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার প্রোফাইলে ‘রাধা’-সাজের ছবিতে ভরপুর ছিল। এই কাজটিকেই জীবনের অন্যতম সেরা কাজ বলে অভিহিত করেছিলেন...

আওয়ামী শিবেরে হতাশা, নেতা-কর্মীরা দিশেহারা

দখিনের সময় ডেস্ক: আওয়ামী লীগ গত ২৩শে জুন ঘটা করে ৭৫ বছরপূর্তি পালন করেছিল। সেদিন ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশে নেতাকর্মীর উপস্থিতি ছিল কানায় কানায়...

শিরিনের বিরুদ্ধে এবার বাড়ি দখলের অভিযোগ

দখিনের সময় ডেস্ক: সরকারি পুকুর দখলের ঘটনায় দলের পদ হারানোর পর ‍এবার অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিনের বিরুদ্ধে তিনতলা বাড়ি দখলের অভিযোগ উঠেছে। প্রায় ২ কোটি...

Recent Comments