• ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মাঝামাঝি কোন বিবেচনা নেই কেন?

দখিনের সময়
প্রকাশিত নভেম্বর ১৬, ২০২৫, ২০:৪৩ অপরাহ্ণ
মাঝামাঝি কোন বিবেচনা নেই কেন?
সংবাদটি শেয়ার করুন...
প্রচলিত একটি প্রবচন, ‘মশা মারতে কামান দাগানো!’ এর নানান রকমের দোতনা রয়েছে। এক. অক্ষমের আস্ফালন। দুই. মানুষকে বোকা বানানোর অপচেষ্টা। তিন. বগলে ইট, মুখে শেখ ফরিদ। যে কাজটি হাসিনা সরকার নানাভাবে করার চেষ্টা করেছে। আবার মশা নিয়েও হরেক কিসিমের মশকরাও করেছে তার সরকার। মশা মোকাবিলার নামে মাছ-পাখি, কোন কিছুই বাকি রাখা হয়নি। এমনকি শাব্দিক অর্থেই কামানের মতো ফগার মেশিন ব্যবহার করা হয়েছে। বলা হয়, ওষুধে না মরলেও মেশিনের বিকট শব্দে মশককুল বয়রা হয়েযেতো। মহা সমারোহে এই ফগার মেশিন উদ্বোধনও করা হয়েছে। এবং এর মডেল হয়েছেন মেয়র হিসেবে ব্যর্থতার মনুমেন্ট খোদ সাঈদ খোকন। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সন্তান যে কোন মাত্রায় আকাম্মা হতেপারে তার চিরকালের পোস্টার বয় হয়ে থাকবেন আলুমার্কা সাবেক এই মেয়র। একটু খেয়াল করলেই অনেকের মননে আসবে, শেখ হাসিনার সেফ এক্সিটের পর দেশ থেকে অনেক উপদ্রবের মতো মশাও অনেকটা বিদায় নিয়েছে।
বলাবাহুল্য, বিগত সরকারের কোন আয়োজনেই মশা মরেনি। তবে দুটি কাজ হয়েছে। এক. মশক নিধনের নামে বখেদমতে হুজুরে আলারা জনগনের কাড়িবাড়ি টাকা মেরে দিয়েছেন। দুই. মশার কয়েল ব্যবসায়ীরা সমানে পাবলিকের পকেট কেটেছেন। এই ধারায় বহুজাতিক কোম্পানীগুলোও পিছিয়ে ছিলো না। অবশ্য এরা কোনকালেই পিছিয়ে থাকে না। তবে এজন্য ক্ষমতাসীনদেরকে নজরানা দিতে হয়েছে। এই তরিকা সেযুগ-এযুগ বলে কোন কথা নেই, এটি সর্বকালীন। কিন্তু কোনকালেই মশা মরেনি। ফলে এক ধরণের বদ্ধমূল ধারণা হয়েছিলো, বাংলাদেশ থেকে শেখ হাসিনা ও মশা দূর হবার নয়। কিন্তু জনতার প্রবল চাপে শেখ হাসিনা দূর হয়েছেন। এদিকে মশার ব্যাপারে আমার নিজের কিছুটা হলেও শ্বস্তির অভিজ্ঞতা আছে, রাজধানী ঢাকা ও বিভাগীয় শহর বরিশালে।
এ প্রসঙ্গে ধরা যাক, যেহেতু রাজধানীতে হেভিওয়েট হুজুরেরা থাকেন সেহেতু মশা না মেরে দুই আনা-এক আনা, তথা পাতি হুজুরদের আর কোন উপায় নেই।  কিন্তু বরিশালে তো সেই রকম বিশাল মাপের কোন হুজুর থাকেন না। আগিলা জামানার দানবসম হুজুরে আলাদের অনেকে পলাতক, কারোকারো সম্বল এখন থালা-বাটি-কম্বল। এ অবস্থায় বরিশালে একমাত্র বখেদমতে রড় হুজুরে আলা হচ্ছেন বিভাগীয় কমিশনার। বরিশালের সদ্য বিদায়ী বিভাগীয় কমিশনার মো. রায়হান কাওছার বরিশালের সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসকেরও দায়িত্বে ছিলেন। মানে বিভাগের প্রধান কোতয়ালের পাশাপাশি তিনি ছিলেন নগর পিতাও। নগর প্রধান হিসেবে সাধারণের দৃষ্টিতে তাঁর প্রধান কাজগুলোর মধ্যে ছিলো মশা মারা ও আবর্জনা পরিস্কার করা। তবে কেবল এটি নয়, তিনি আরো অনেক কাজ করেছেন যা বরিশালে অবস্থান করে সরকারী কর্মকর্তার পক্ষে করা প্রায় অসম্ভব। এই অসম্ভবকে সম্ভব করতে গিয়ে মো. রায়হান কাওছারকে রাজনৈতিক চাপও মোকাবিলা করতে হয়েছে। ‍এমন গুঞ্জণ রয়েছে। শোনা কথা, বিএনপির কেউ তার উপর প্রভাব বিস্তার করতে গেলে তিনি নাকি বলেন, ‘আমাকে ফাপড় দিয়ে লাভ নাই, তারেক রহমানের সাথে আমার ফোনে কথা হয়।’ তবে জামাতের আমীর ডা. শফিকুর রহমানের সাথে কথা হবার আওয়াজ দিয়েছেন কিনা তা অবশ্য শোনা যায়নি।
প্রসঙ্গত, বরিশালে বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে যোগ দেবার আগে সরকারের অতিরিক্ত সচিব মো. রায়হান কাওছার হোটেল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। অনেকেরই জানা, হোটেল চালাতে গেলে টু-নাইন্টি থেকে শুরু করে অন্ধকার জগতের অনেক কিছুই ম্যানেজ করতে হয়। যাদের চাদবদন থাকে আলোতে, কিন্তু শিকড় প্রথিত আধারে। এ আধার নানান ধরনের মাফিয়া প্রভাবিত। সে তুলনায় জেলা-বিভাগ পর্যায়ের রাজনীতির খুচরা ফাপড়বাজদের ম্যানেজ করা তেমন কঠিন হবার কথা নয়। তবে এ ব্যাপারে দৃঢ়তা থাকাটাই হচ্ছে মূল কথা। এটি মো. রায়হান কাওছারের বেশ টনটনে বলে মনে করেন অনেকে। কিন্তু তার বিদায়ের পর নানান রকমের কেচ্ছা-কাহিনী চাউড় হচ্ছে। এর সত্য মিথ্যা নিশ্চয়ই বিচার বিশ্লেষণের দাবী রাখে। তদন্ত হলেও হতে পারে। কিন্তু এই কাহন বিদায়ের পর কেন? আগে ‘জাগ্রত বিবেক’ কী কুম্ভকর্নের ঘুম ছিলো? মনে হচ্ছে, সেই প্রবচন খুবই প্রকটভাবে হয়ে প্রাসঙ্গিক, ‘হাতি গাতায় পড়লে চামচিকায়ও লাথিমারে!’ এটি ফুটপাথ ছাড়িয়ে রাজপথ হয়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছে গেছে বলে মনে হচ্ছে। ফলে ক্ষমতায় থাকাকালে নন্দিত মহা মানব, মসনদ হারালে নিন্দিত দানব! মাঝামাঝি কোন বিবেচনা নেই কেন? অথচ সকল মানদন্ডেই মধ্য পন্থাকেই উত্তম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।