
দখিনের সময় ডেক্স:
বীভৎস স্মৃতি নিয়ে লিবিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন ৯ বাংলাদেশি, যারা পাচারের শিকার হয়ে ভয়ঙ্কর দুর্দশায় পড়েছিলেন। রবিবার (৪ অক্টোবর) রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে তাদের সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন পুলিশ কর্মকর্তারা। জানান, এরইমধ্যে পাচারকারী চক্রের ৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ভাগ্য ফেরাতে লিবিয়া যাওয়া তরুণেরা সংবাদ সম্মেলনে তাদের দুঃসহ স্মৃতির কথা তুলে ধরেন। নির্যাতিতরা জানান, সেদিনের কথা মনে করতেই গা শিউরে ওঠে তাদের। কীভাবে বেঁচে ফিরলেন, তা ব্যাখ্যাতীত। দুঃসহ সেই মানসিক আঘাত এখনও তাড়া করছে তাদের। তবে, তারা খুশি অন্তত জীবন নিয়ে দেশে ফিরতে পেরেছেন।
নির্বিচার গুলিবর্ষণ। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মরদেহ।মরদেহের স্তূপ। চারিদিকে রক্তগঙ্গা। রক্তে রঞ্জিত নির্যাতন কক্ষের পৃষ্ঠদেশ। একটি একটি করে সরানো হচ্ছে মরদেহ। গত ২৮ মে, লিবিয়ার মিজদা শহরে স্থানীয় মাফিয়াদের নির্বিচার গুলিতে নিহত হন পাচারের শিকার ২৬ বাংলাদেশি। গুলিবিদ্ধ হলেও প্রাণে বেঁচে যান ১২ জন। এরমধ্যে ৯ জনকে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার সহায়তায় দেশে ফিরিয়ে এনেছে সিআইডি।
সিআইডি কার্যালয়ে সেদিনের ঘটনা তুলে ধরে ফিরোজ বেপারি বলেন, ‘তার শরীরে পাঁচ থেকে ছয়টি গুলি লাগে। শারীরিক ও মানসিক ক্ষতের কারণে স্বাভাবিক জীবন হারিয়ে গেছে তার।’
গুলিতে আহত জানু মিয়া জানান, লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর থেকেই সেখানকার সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে জিম্মি হয়ে পড়েন তারা। তাপরপর কয়েক দফা বিক্রি করা হয় তাদের। নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরেছেন তারা।
লিবিয়ায় নির্যাতনের শিকার জানু মিয়া জানান, ‘আমাদেরকে মারধোর করে। আফ্রিকার আরেকজনকে পিটিয়ে মেরে ফেলে রেখে আমাদেরকে দেখিয়ে বলে, যদি টাকা না দিস তবে তোদের এই অবস্থা হবে।’
ভুক্তভোগীরা জানান, ভালো রোজগারের আশায় পাচারকারীদের ফাঁদে পড়েন তারা। বেনাপোল হয়ে ভারতের মুম্বাই, তারপর দুবাই হয়ে মিশর, সেখান থেকে লিবিয়ায় পৌঁছান বাংলাদেশি অভিবাসন প্রত্যাশীরা। পুরো যাত্রায় তাদের সবসময় নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখে বাংলাদেশ, ভারত, মিশর ও লিবিয়ার পাচারকারীচক্রের সদস্যরা। বেঁচে যাওয়া আরও তিন বাংলাদেশি এখনও লিবিয়ায় রয়েছেন, তাদেরও ফেরৎ আনার প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
Post Views:
৭৯