Home মতামত দখল-দূষণ-উন্নয়নে মরে যাচ্ছে নদী

দখল-দূষণ-উন্নয়নে মরে যাচ্ছে নদী

জলে ভাসা পদ্মের মতোই সাগর মোহনায় অসংখ্য ছোটছোট ভূখণ্ডের সমষ্টিই হচ্ছে বাংলাদেশ। পাখির দৃষ্টিতে দেখলে যত না ভূমি, তার চেয়ে বেশি জলাশয়। কিন্তু দ্রুত বদলে যাচ্ছে এই দৃশ্য পট। দখল-দূষণ এবং কথিত উন্নয়নে মরে যাচ্ছে নদী। বিলীন হচ্ছে খাল-বিল-হাওর-পুকুর। দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে মাটির উপরের ও নিচের জলভাণ্ডার। দখল-দূষণে কেবল নয়, নদী মরে যাচ্ছে উন্নয়নেও।

উল্লেখ্য, আমাদের দেশে এখনো উন্নয়ন মানেই অবকাঠামো নির্মাণকেন্দ্রিক। অনেক ক্ষেত্রেই ভবন-কালভার্ট-সেতু নদ-নদী-খালের মরণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার নদীর ভাঙন রোধের নামে যে কাণ্ড ও হরিরলুট চলে তাও কিন্তু নদীর সর্বনাশের জন্য কম দায়ী নয়।

আমাদের জলের উৎস প্রধানত উজানে, সীমান্ত পেরিয়ে। এর সঙ্গে যুক্ত আছে রহমতের বৃষ্টি, যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। পানি নিয়ে বন্ধু প্রতিবেশী ভারতের নিষ্ঠুরতা এবং প্রকৃতির বিরূপ প্রবনতায় পানিসম্পদ যখন দ্রুত কমছে তখন জাতি হিসেবে আমরাও যেনো মেতেছি ‘জল হত্যার’নৃশংতায়।

সাধারণভাবে বলা হয়, ‘মাদকের আগ্রাসন আমাদের গিলে খাচ্ছে, আর আমরা গিলে খাচ্ছি নদ-নদী-জলাশয়।’মাদকের আগ্রাসন জাতিকে কোথায় নিয়ে গেছে তা নিয়ে এন্তার আলোচনা আছে। মাদকের আগ্রাসন ঠেকাতে হুংকারও কম দেয়া হচ্ছে না। কিন্তু ফলাফল? নিঃসন্দেহে হতাশাজনক। এই একই অবস্থা বিরাজমান নদীর ক্ষেত্রেও। মাদকের আগ্রাসন ঠেকাতে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নামে বাহারি সংস্থা যেমন আছে তেমনই নদ-নদী-জলাশয় রক্ষায় নানান সংস্থা রয়েছে। আছে বাহারি নামে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনও। এ দুটির ফারাক প্রধানত বয়সের। একটি প্রাচীন, অপরটি নবীন।

ব্রিটিশ দখলের পর এ অঞ্চল মাদকের আনুষ্ঠানিক গোড়া পত্তন হয়। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতবর্ষে প্রথম আফিম ব্যবসা শুরু করে। এ জন্য একটি ফরমান জারি ও কিছু কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। ব্রিটিশরা ভারতবর্ষে আফিম উৎপাদন করে চীনসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে রপ্তানি করে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছে। পাশাপাশি এ অঞ্চলেও আফিমের দোকান চালু করে। আফিম ব্যবসা রমরমা হলে ১৮৫৭ সনে আফিম ব্যবসাকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে এনে প্রথম আফিম আইন প্রবর্তন করা হয়। ১৮৭৮ সনে আফিম আইন সংশোধন করে প্রতিষ্ঠা করা হয় আফিম ডিপার্টমেন্ট। এ ধারায় নানান ধাপ পেরিয়ে ১৯৯০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে মাদক দ্রব্যনিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার পর তিন দশকের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠাকালে এ সংস্থাটি ছিল সর্বময় ক্ষমতাধর তৎকালীন রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ের অধীন। রাষ্ট্রপতির স্থলে প্রধানমন্ত্রী সর্বময় ক্ষমতার ধারক হবার পর ১৯৯১ সালে ৯ সেপ্টেম্বর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাস্ত হয়। এ যেন নক্ষত্রের পতন। এরপর থেকে সংস্থাটি ক্রমান্বয়ে অকার্যকর হতে থাকে। এরপর নখ-দন্তহীন হয়ে বিশাল সুরম্য ভবনে আশ্রয় নিয়েছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এ সংস্থা গোপনে কি করে তা অনেকেই হয়তো জানেন না। কিন্তু সবাই জানেন, এ সংস্থাটির কার্যক্রম ছোটখাটো আটক তৎপরতা মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বাল্যশিক্ষার বকের দু’-একটি পুটিমাছ ধরার মতো। কোন প্রকার বোয়াল এখন পর্যন্ত এ সংস্থার জালে ধরা পড়েছে বলে জাতি জানে না।

মরে যাওয়া নদীর পাশে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী। নদী দূষণের বিষয়টি বুঝতে এখন আর বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন হয় না। জায়গাটা কল্যানপুর খাল ও তুরাগ নদীর সংযোগস্থল এলাকা। ছবি: সংগ্রহকৃত

এদিকে বয়সের হিসাবে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন কৈশোরে আছে। সংস্থাকে যুবক করার জন্য আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন সদ্য যোগদানকারী কমিশন চেয়ারম্যান মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী। যে চেষ্টা তিন বছরের মেয়াদে করে গেছেন মজিবুর রহমান হাওলাদার। তিনি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন) হিসেবে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারলেও নদী কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে তার ছুটাছুটি এবং পরিশ্রমে কতোটা ফলোদয় হয়েছে তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েই রয়েছ। একই ধারায় বর্তমান চেয়ারম্যানে নেতৃত্বে কমিশন কতটুকু কি করতে পারবে তাও এখনো পরিষ্কার নয়। কারণ জন্ম থেকেই নখ-দন্তহীন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন কাজের এখতিয়ার হচ্ছে, সমস্যা চিহ্নিত করণ এবং সুপারিশ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। যা অনেকটা হিংস্র হায়না ঠেকাতে পাটকাঠি নিয়ে অবস্থান নেয়া অথবা চোরাকে ধর্মের কাহিনি শুনানোর মতো। কিন্তু প্রবচনই তো আছে, ‘চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনি!’

অথচ বিশাল প্রত্যাশা ও কথা বলে প্রণয়ন করা হয়েছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন-২০১৩। এ আইনের উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, ‘নদীর অবৈধ দখল, পানি ও পরিবেশ দূষণ, শিল্প কারখানা কর্তৃক নদী দূষণ, অবৈধ কাঠামো নির্মাণ ও নানাবিধ অনিয়ম রোধকল্পে এবং নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ পুনরুদ্ধার, নদীর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ এবং নৌ-পরিবহনযোগ্য হিসেবে গড়ে তোলাসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নদীর বহুমাত্রিক ব্যবহার নিশ্চিত করার প্রয়োজনে এই কমিশন গঠন করা হলো।’

আইনে এতো এখতিয়ারের কথা বলা হলেও ভেতরে বিশাল শুভংকরের ফাঁকি রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন দিয়ে এ পর্যন্ত প্রাপ্তি, ‘ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দু’র চেয়ে বেশি কিছু নয়। কেবল তাই নয়, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের উদ্দেশ্য এবং অর্পিত দায়িত্বগুলো সঠিক বাস্তবায়ন, আদৌ সম্ভব কি-না- সে প্রশ্ন আসে সঙ্গত কারণেই।

নদী রক্ষা কমিশন প্রতিষ্ঠা এবং কমিশনের সক্রিয় ভূমিকা কিছুটা আশার আলো দেখালেও দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা হচ্ছে,  এই কমিশনকে শক্তিশালী ও কার্যকর তদারকি সংস্থা হিসেবে মেনে নেওয়ার সংস্কৃতি এখনো তৈরি করা যায়নি। বরং পদেপদে বৈরীতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে। প্রশ্ন উঠেছে নদী-খাল-বিলের অবৈধ দখলদার ও দূষণকারী কারা? এরা সমাজের উচ্চবিত্ত ও ক্ষমতাধর শ্রেণি থেকে আসা। আবার দখলের চেয়েও নদীর বেশি সর্বনাশ হচ্ছে দূষণে। যে দিকটি বিশেভাবে চিহ্নিত করেছেন কমিশনের বর্তমান চেয়ারমান মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী। দখল প্রক্রিয়ার চেয়ে তিনি বেশি ভাবছেন দূষণ তাণ্ডব নিয়ে। ফলে এরই মধ্যে সাবেক চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান হাওয়ালাদারের মতোই তিনিও প্রভাবশালীদের চক্ষুশুলে পরিণত হয়েছেন।

সবাই জানে, অবৈধ দখলদার এবং দূষণকারীরা খুবই ক্ষমতাধর। এর মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামও আছে। আর দূষণের ক্ষেত্রে প্রধান খল নায়ক হচ্ছে সরকারি প্রতিষ্ঠান। বলাই তো হয়, রাজধানীর চারপাশে চারটি নদী দূষণে মেরে ফেলার জন্য দায়ী ৭০ ভাগ ঢাকা ওয়াসা এবং দুই সিটি কর্পোরেশন ২০ ভাগী। বাকিরা দায়ী ১০ শতাংশ।

আর কেবল রাজধানীর চার দিকের নদী নয়, পুরো দেশের নদী নিয়েই ভাবতে হয় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে। ফলে নদী বাঁচাতে কমিশনের অত্যন্ত কঠোর ভূমিকা প্রয়োজন। কিন্তু সেই এখতিয়ার এবং সক্ষমতার কোনটাই কী আছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের? উত্তর নেতিবাচক। আর যাও আছে তার জন্যও নির্ভর করতে হয় প্রশাসন যন্ত্রসহ অন্যান্য সংস্থার ওপর। কিন্তু অসংখ্য অভিযোগ আছে, প্রশাসনের উচ্চ থেকে মাঠ পর্যায়ের অনেক বড়কর্তা নদী দখল ও দূষণ প্রক্রিয়ায় সক্রিয় সহযোগিতা করে থাকেন। এরা নাকের ডগায় চলমান দখল-দূষণ প্রক্রিয়া বন্ধ করার চেষ্টা তো করেনই না, বরং অধিকাংশ সময়ে অন্ধ-বোবা-কালা সেজে থাকেন। কেউ অভিযোগ করলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তোতা পাখির মতো বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এদিকে আইনের ১২ নম্বর ধারা অনুসারে, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন কেবল বিভিন্ন কাজে সুপারিশ করতে পারে। ১২ নম্বর ধারায় বিভিন্ন বিষয়ে যে সুপারিশসমূহ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে তা প্রতিপালিত না হলে কমিশনের হাতে আর কোনো কার্যকর হাতিয়ার আছে কি-না, তাও স্পষ্ট নয়। অবশ্য আইনের ১৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে যে, কমিশনের পরামর্শ অনুযায়ী সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম বা ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে কমিশন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অপারগতার কারণ সন্ধান এবং অবহিত করবে।

দেখা যাচ্ছে, কমিশনকে বহু কাজ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তবে তা হবে সুপারিশধর্মী, প্রয়োগিক নয়। অর্থাৎ দায়িত্ব বিশাল, কিন্তু ক্ষমতা পর্বতের মুশিক প্রসবের মতো। আবার ঘুরিয়ে বললে বলা যায়, সুপারিশ পালন না করলে কমিশন যথেষ্ট হৈচৈ করতে পারে। কিন্তু তাতে কী বেল পাকবে? আর কাকের লাভের হিসাব তো অনেক পরের বিষয়!

অবশ্য, নদী রক্ষা কমিশন আইনে দূষণ রোধ সম্পর্কে নির্দেশনাগুলো অত্যন্ত পরিষ্কার। বলা হয়েছে, পানি ও পরিবেশ দূষণ এবং শিল্প কারখানা কর্তৃক নদী দূষণ রোধ করার জন্য এই কমিশন কাজ করবে। এই কাজ করার জন্য প্রয়োজন ‘এনভায়রনমেন্টাল কোয়ালিটি স্ট্যান্ডার্ড।’ অর্থাৎ কতটুকু দূষণ হলে নদী রক্ষায় কমিশন নড়েচড়ে বসবে। এর জন্য প্রয়োজন নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষণ। বলে রাখা ভালা, পরিবেশ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে দূষণের মাত্রা নিয়ে মাপকাঠি তৈরি করেছে। তার মানে, আমাদের এনভায়রনমেন্টাল কোয়ালিটি স্ট্যান্ডার্ড রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কে দূষণের মাত্রা পরিমাপ ও বিশ্লেষণ করবে? এ এক জটিল প্রশ্ন।

যদিও দূষণের বিষয়টি বুঝতে এখন আর বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন হয় না। কিন্তু আইনি ব্যবস্থা নিতে রিপোর্ট প্রয়োজন। এ কাজ কমিশন নিজেরা হাতে নিতে পারে। অন্যথায় যারা নিয়মিত দূষণের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করেন, তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সঙ্গে নেয়া যায়। নদী কমিশন এ ব্যাপারে কী ভাবছে, তা জানা যায়নি।

আইন অনুসারে নদী কমিশনের আরেকটি বড় দায়িত্ব হচ্ছে, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ পুনরুদ্ধার। এ কাজের মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তবে এ নির্দেশাবলি পালন দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসন কতটুকু সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছে বা নিচ্ছে সে ব্যাপারে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।

এরপরও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের কার্যাবলির ১২ (ঠ) উপধারা যথেষ্ট আশার আলো দেখায়। এতে বলা হয়েছে- ‘নদী রক্ষায় সংশ্লিষ্ট বিদ্যমান বিভিন্ন আইন ও নীতিমালার ব্যবহারিক পর্যালোচনাক্রমে ও প্রয়োজনবোধে উক্ত আইন ও নীতিমালা সংশোধনকল্পে সরকারকে সুপারিশ প্রদান করবে।’

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারও অনেক প্রতিফলন রয়েছে বাংলাদেশ পানি আইন ২০১৩ এবং ১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন যেমন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারে, তেমনই জাতীয় পানি আইনের মাধ্যমে যে ওয়ারপো (পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা) নামে সংস্থাটিকে কার্যকর করা হয়েছে, সেটা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারে। নদী রক্ষা কমিশন ও ওয়ারপোর কার্যক্রম বহুলাংশে পুনরাবৃত্তিমূলক। দুটি আইনেই মেনে নেওয়া হয়েছে, পানির ব্যবহার বহুমাত্রিক।

এ দুই সংস্থার মধ্যে কি কোন দ্বন্দ্ব আছে? এ ক্ষেত্রে না থাকলেও পানিসম্পদ বা নদী নিয়ে কার্যক্রমের ক্ষেত্রে আন্তঃমন্ত্রণালয় দ্বন্দ্ব কিন্তু অনেকটাই প্রকাশ্য। এ দ্বন্দ্ব অত্যন্ত জটিল ও সাংঘর্ষিক। তবে এটাও স্বীকার করতেই হবে, নদী রক্ষা কমিশনকে ওয়ারপোর সঙ্গে সমন্বয় সাধন ছাড়াও কৃষি, মৎস্য, পরিবেশ, স্থানীয় সরকার, শিল্প, যোগাযোগ, ভূমি, পররাষ্ট্র প্রভৃতি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে। এগুলোর সমন্বয় সাধন কে করবে! কেউ কি করছে?

অনেকেই জানেন, পানি ব্যবস্থাপনার বিষয়ে জাতীয় পর্যায়েও একটি কমিটি রয়েছে, যার সভাপতিত্ব করে থাকেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এদিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কাজের মধ্যে সমন্বয়ের জটিলতা রয়েছ গঠন প্রক্রিয়ার মধ্যেই। আবার তদারকি কর্তৃপক্ষও একাধিক এবং বিভিন্ন প্রবনতায় বিচ্ছিন্ন। এসব নদী রক্ষায় বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে হীমালয় সময়। এটা বুঝতে নিশ্চয়ই গবেষক হবার প্রয়োজন পড়ে না। এরপরও আশা আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। তবে তা এখনো নিভুনিভু প্রদীপের আলোর চেয়ে বেশি কিছু নয়।

শেষ কথা হচ্ছে, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন সমগ্র দেশবাসীর মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছে। সঙ্গে আস্থা অর্জন করেছে। এ এক বড় সাফল্য। এ সাফল্যের সঙ্গে প্রত্যাশা হচ্ছে, দেশের নদ-নদী-জলাধারকে মৃত্যুর হাত থেকে কেবল রক্ষা নয়; সজীব ও সচল করেও তুলবেন। এ প্রেক্ষাপটে নদী ও পানি ব্যবস্থাপনার জটিল জগতে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে- এটাই জাতির প্রত্যাশা। এ প্রত্যাশা পূরণ না হলে কালের পরিক্রমায় কমিশন হয়তো আরো সম্প্রসারিত হয়ে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মতো নিজস্ব সুরম্য বিশাল ভবনে স্থানান্তরিত হবে। কিন্তু তাতে নদী বা জলাশয় রক্ষা হবে না। যেমন পরিত্রাণ মেলেনি মাদকের আগ্রাসন থেকে।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

গরমও আসে ভারত থেকে

দখিনের সময় ডেস্ক: বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে এখন বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করছে। এর কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদরা জানান, বাংলাদেশের...

বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা, আর বাড়বে না তাপমাত্রা

দখিনের সময় ডেস্ক: নতুন করে তিন দিনের হিল অ্যালার্ট জারি হলেও চলতি সপ্তাহের শেষ থেকেই উত্তর পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে। আগামী মাসের শুরুতে মোটামুটি...

আমার লাশটি কাদের ভাইকে উৎসর্গ করে গেলাম

কলামের শিরোনাম দেখে যে কারও মনে একাধিক প্রশ্ন দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে দুটি প্রধান। এক. যেখানে সরকারি দফাদারকেও ‘স্যার’ বলার অঘোষিত বাধ্যবাধকতা দাঁড়িয়ে...

প্রতি বছর বিশ্বে সাপের কামড়ে মারা যায় দেড় লাখ মানুষ

দখিনের সময় ডেস্ক: প্রতি বছর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ৪৫ থেকে ৫৫ লাখ মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হয়। এর মধ্যে ৮০ হাজার থেকে ১লাখ ৪০ হাজারের...

Recent Comments