বিশ্বের কয়েকটি দেশ শ্রমবাজারে রোবট ব্যবহারের পাশাপাশি যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই করাতে বড় বাজেটে স্বয়ংক্রিয় রোবট তৈরির কাজ করছে। প্রাণঘাতী এই রোবট ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম থেকে ছবি, কণ্ঠস্বর বা বায়োমেট্রিক শনাক্তের পর সেন্সর ব্যবহার করে টার্গেট করা ব্যক্তির ওপর হামলা করতে সক্ষম হবে।
তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে প্রযুক্তির এমন অপব্যবহারে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ। শ্রমিক বাজার দখলকারী এবং নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ রোবট ও ড্রোন প্রতিরোধে বাংলাদেশকে এখনই আইন প্রনয়ন প্রণয়ন করা জরুরি।
জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া অডিটরিয়ামে ‘আমাদের সিদ্ধান্তের স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে যন্ত্র’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তরা এসব কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংস্থা ‘ক্যাম্পেইন টু স্টপ কিলার রোবট’ এর সহযোগিতায় চেঞ্চ মেকার: সোসাইটি ফর স্যোশাল অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট এবং ইন্সটিটিউট অব কমিউনিকেশন স্টাডিসের (আইসিএস) অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে।
সোসাইটি ফর স্যোশাল অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টের প্রধান নির্বাহী সৈয়দ তামজিদ উর রহমান বলেন, ‘মানুষ প্রতিনিয়ত যন্ত্র নির্ভর নতুন নতুন ধরনের যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা যুদ্ধ চাই না। তবে হলেও তা মানুষের নিয়ন্ত্রণে থাকুক। যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকেরা অন্তত নারী, শিশু, গর্ভবতী নারীদের দিকে সহানুভূতি দেখায়। কিন্তু প্রযুক্তি নির্ভর স্বয়ংক্রিয় রোবট বা ড্রোন কিন্তু সেই সুযোগটা দিবে না। এটা নির্দিষ্ট এলাকা, জনগোষ্ঠী সবাইকে টার্গট করে ধ্বংস করে দিবে। যা অনুন্নত দেশগুলোর জন্য হুমকি। কারন যারা এসব অত্যাধুনিক অস্ত্র বানায় তারা কিন্তু ততো ক্ষতির সমুখীন হয় না। তাই বাংলাদেশেও যাতে নামে বেনামে এসব প্রাণঘাতি প্রযুক্তি প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সংশ্লিষ্টদের এখনই ভাবতে হবে। পাশাপাশি ভদ্র রোবটও শ্রমবাজারে ঢুকে পড়ে মানুষের চাকরি খাবে।’
আইসিএস’র প্রধান নির্বাহী নাঈমা নার্গিস বলেন, ‘আগামীতে যদি মানুষ আর রোবট-ড্রোনের মধ্যে যুদ্ধ হয় তাহলে নিশ্চয়ই প্রযুক্তি জিতবে। কারণ মানুষের নিশানা ভুল হলেও প্রোগ্রামিং সেট করা রোবট-ড্রোন কিন্তু সঠিকভাবেই কাজ করবে। তবে পার্থক্যটা হলো যুদ্ধক্ষেত্রে একজন সৈনিক অনেক কিছুই বিবেচনা করে। তার হাতে অনেকে প্রাণে বেঁচে যায়। কিন্তু একটি রোবটের দেহে তো মানুষের মতো আবেগ-অনুভূতি-ভালবাসা বুঝবে না। তাই মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করা এই প্রযুক্তি মানুষ শিকারি হয়ে উঠবে। যা আমাদের মতো দেশের জন্যও এ মুহূর্তে নিরাপত্তা হুমকি না হলেও অর্থনৈতিকভাবে আঘান হানতে খুব বেশি সময় লাগবে না।’
সাংবাদিক জাহিদ হোসেন বলেন, ‘একটি ভদ্র রোবটকেও প্রোগ্রাম বদলে দিয়ে প্রাণঘাতি বানানো যায়। আবার নেদারল্যান্ডসের মতো দেশ উপকারী রোবট তৈরির ফলে আগামী দুই বছরের মতো শীর্ষস্থানীয় একটি ব্যাংকের ২০ লাখের মতো স্টাফ চাকরি হারাবে। উন্নত দেশ হওয়ায় হয়তো তারা ক্ষতিপূরণও পাবে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি উপকারী রোবটের কারণে শ্রমিকদের চাকরির বাজার সঙ্কুচিত বা চাকরি হারালে তখন কি অবস্থা দাঁড়াবে। এটা নিয়ে সবাইকে ভাবতে হবে।’