Home বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পায়ুপথেও সম্ভব শ্বাসক্রিয়া, বিজ্ঞানীদের নতুন আবিষ্কার

পায়ুপথেও সম্ভব শ্বাসক্রিয়া, বিজ্ঞানীদের নতুন আবিষ্কার

দখিনের সময় ডেস্ক:
শুধু নাক-মুখ নয়, পায়ুপথ দিয়েও নিঃশ্বাস নেওয়া সম্ভব বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি এমনই তথ্য ধরা পড়েছে বিজ্ঞানীদের একটি গবেষণায়। ওই গবেষণা থেকে জানা যায়, প্রাণী জগতে এ ব্যাপারটি নতুন কিছু নয়। বহু জলচর প্রাণীই ফুলকার বদলে অন্ত্র দিয়ে শ্বাস নিতে পারে। পারে বহু পোকামাকড়ও। ক্যাটফিশ কিংবা মাকড়সার মতো বহু প্রাণীরই রয়েছে এই বিশেষ ক্ষমতা। ব্যাঙ যেমন শ্বাস নিতে পারে তার ত্বকের সাহায্যে। কচ্ছপ আবার শ্বাস নিতে পারে তার পায়ু দিয়েই। আর সেই ব্যাপারটি থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে সম্প্রতি গবেষণা শুরু করেছিলেন জাপানের একদল বিজ্ঞানী।
কচ্ছপের বিপাক প্রক্রিয়া নাকি চলে অত্যন্ত ধীর গতিতে। সেই ব্যাপারে পড়াশোনা করতে গিয়ে তারা জানতে পারেন, তার অন্যতম কারণ তাদের শ্বাস নেওয়ার এই অদ্ভুত ক্ষমতা। পরীক্ষার পর জানা যায়, কচ্ছপের অন্ত্রে শ্লেষ্মা বা মিউকাসের যে আস্তরণ, তা ভীষণই পাতলা। ফলে অক্সিজেন সরবরাহ করা সোজা ওই জায়গায়। আর সেই কারণেই পায়ুর মাধ্যমে কিছুটা হলেও শ্বাসকার্য চালাতে পারে কচ্ছপ। যা তাদের শীতকালে টিকে থাকতে সাহায্য করে বেশ খানিকটা।
এই ব্যাপারটি ইঁদুর ও শুকরের ওপর পরীক্ষা করেন বিজ্ঞানীরা। প্রথম পর্যায়ে আরও বেশকিছু প্রাণীর ওপর পরীক্ষা করা হয়। মোট তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছিল প্রাণীগুলোকে। প্রথম ভাগে এমন প্রাণী রাখা হয়, যাদের অন্ত্রের মাধ্যমে শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। দ্বিতীয় পরীক্ষায় রাখা হয় এমন প্রাণীদের, যাদের অন্ত্রের মাধ্যমে শ্বাসকার্য চালানোর ক্ষমতা রয়েছে। দুটি পরীক্ষাতেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়ার পথ।
দেখা যায়, প্রথম পরীক্ষায় প্রাণীগুলির মৃত্যু হয় ১১ মিনিটের মাথায়, কিন্তু দ্বিতীয় ভাগে প্রায় ১৮ মিনিট পর্যন্ত বেঁচে ছিল তারা। অর্থাৎ অন্ত্রের সাহায্যে অক্সিজেন নিতে পারার কারণেই বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পেরেছে তারা। চূড়ান্ত পরীক্ষাটি করা হয় ইঁদুর এবং শুকরের মতো স্তন্যপায়ী প্রাণীর ওপর। নাকের পথ বন্ধ করে তাদের প্রত্যেকেরই পায়ুপথ দিয়ে অক্সিজেন পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন বিজ্ঞানীরা। তার সঙ্গে করা হল আরেকটি কাজ। তাদের প্রত্যেকের অন্ত্রের মিউকাস স্তরটিকে পাতলা করে দেওয়া হয়।
তখন দেখা যায়, প্রায় ৭৫ শতাংশ প্রাণীই এক ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে রইল। ক্লিনিকাল অ্যান্ড ট্রান্সলেশনাল রিসোর্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনসাইটস নামে একটি জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে এই গবেষণা।
বেশ কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা সফল হলেও মানুষের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটি আদৌ সম্ভব কিনা তা নিয়ে সংশয় থাকছেই। তবে সত্যিই যদি কোনোদিনও তা সম্ভব হয়, তা চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রভূত কাজে আসবে বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীমহল।
অনেক সময়ই ফুসফুস বা হৃদযন্ত্রের সমস্যায় স্বাভাবিক শ্বাসপ্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। অন্ত্রের নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে সে ক্ষেত্রে এই উপায়ে অক্সিজেন সরবরাহ সম্ভব বলেই মনে করছেন তারা। তবে আদৌ মানুষের ক্ষেত্রে তা সফল হবে কি না, তা এখনই জোর গলায় বলতে পারছেন না বিজ্ঞানীরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

তীব্র গরমেও ঘর ঠান্ডা রাখার সহজ উপায়ে

দখিনের সময় ডেস্ক: তীব্র গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত। হিট অ্যালার্ট জারি রয়েছে। এ অবস্থায় ঘরে ফিরেও স্বস্তি মিলছে না। একটু শীতলতার খোঁজে মানুষ। যাদের ঘরে এসি...

দংশন করা সাপে ছবি তুলে রাখার পরামর্শ চিকিৎসকদের

দখিনের সময় ডেস্ক: চিকিৎসকরা মূলত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে তার বিভিন্ন লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। সাপে কামড়ানোর সময় সেটি কী প্রজাতির সাপ বা...

গরমের হাত থেকে বাঁচতে গিয়ে সাপের ছোবলে মৃত্যু

দখিনের সময় ডেস্ক: রাতে তীব্র গরমের হাত থেকে বাচতে ঘর থেকে বের হয়ে বাইরে বসেছিলেন ইমামুল ব্যাপারী (৩৪)। এ সময় তাকে বিষধর সাপে কামড় দেয়।...

গরমও আসে ভারত থেকে

দখিনের সময় ডেস্ক: বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে এখন বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করছে। এর কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদরা জানান, বাংলাদেশের...

Recent Comments