অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থীরা ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স চাইলে অনুমতি দেয়া হবে। যারা অস্ত্র জমা দিয়েছেন তাদের অস্ত্রও ফেরত দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। ১৩ ডিসেম্বর সচিবালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ওসমান হাদির উপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, জড়িতদের কোনো প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। হাদির ওপর হামলায় জড়িতদের ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
প্রসঙ্গত, ১২ ডিসেম্বর দুপুর সোয়া ২টার দিকে রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে রিকশায় করে যাওয়ার সময় ওসমান হাদিকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। মোটরসাইকেলে এসে দুইজন তাকে খুব কাছ থেকে গুলি করে পালিয়ে যায়। হাদির ঘাতক চলন্ত বাইক থেকে নিখুঁত লক্ষ্যভেদ করেছে। গুলীবিদ্ধ হাদিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দ্রুত ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। সেখানে অস্ত্রপচার শেষে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন। এ ঘটনায় দেশ তোলপাড়। প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করি অতি সাধারণ মানুষটিও উদ্বিগ্ন। একই সঙ্গে ঘোষিত জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানান ধরনের আশংকা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী নানান গদবাঁধা সাধারণ বয়ানের সাথে কানে লাগার মতো কথাটি হচ্ছে, “জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থীরা ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স চাইলে অনুমতি দেয়া হবে।”
প্রশ্ন হচ্ছে, লাইসেন্স করা ব্যক্তিগত অস্ত্র দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থীরা কতদূর কী করতে পারবেন? সহজ উত্তর, কিছুই করতে পারবেন না! কারণ, অস্ত্র দিয়ে অন্যকে ঘায়েল করা যায়, সাধারণত নিজেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে খুব একটা কাজে আসে না।
আর আততায়ীর টার্গেট হলে তো কোন কথাই নেই! কারণ কোন আততায়ী কখন কোন দিক থেকে গুলী করবে সেটি ধারণা করা অসম্ভব। কাজেই লাইসেন্স করা ব্যক্তিগত অস্ত্র দিয়ে কী করবেন জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থীরা? আসলে কোন কাজেই আসবে না লাইসেন্সকরা অস্ত্র। বরং প্রয়োজন হচ্ছে সামগ্রিক আইন শৃংখলার উন্নতি। আর সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনা। এখানেও বিপত্তি আছে। কারণ, সকল অপরাধীর গায়েই রাজনীতির জার্সি রয়েছে। এটি এক কঠিন বাস্তবতা। এর সঙ্গে আর এক বাস্তবতার কথা বলেছেন ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। ১৩ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে ইনকিলাব মঞ্চের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি বলেছেন, “রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতার জন্য এত মেরুদণ্ডহীন হয়েছে; ফকির, মিসকিন, বস্তির ছেলেমেয়েরা আজকে বড় বড় রাজনৈতিক দলের নেতা হয়েছে। নাম-পরিচয় নাই ওদের, শিক্ষা-দীক্ষা নাই ওদের।” ব্যারিস্টার ফুয়াদের এই বচন কটু-কথার শ্রেণীভুক্ত। এরপরও এটিই নির্মম বাস্তবতা। এই বাস্তবতার সঙ্গে আরো অনেক বাস্তবতার সংমিশ্রণে রাজনীতিতে যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তাতে নির্বাচনের সময় ব্যক্তিগত অস্ত্র তো দূরের কথা, রাষ্ট্রীয় অস্ত্র দিয়ে কতদূর কী করা যাবে তা কিন্তু মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন হয়েই থাকলো!