• ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিবাদ কেন? সমাধানই বা কেন প্রয়োজন?

দখিনের সময়
প্রকাশিত নভেম্বর ২০, ২০২৫, ১৮:৪৮ অপরাহ্ণ
বিবাদ কেন? সমাধানই বা কেন প্রয়োজন?
সংবাদটি শেয়ার করুন...
আজকাল সংসার, সমাজ, এমনকি রাষ্ট্র- সর্বত্রই যেন বিবাদের আগুন জ্বলছে। আমরা সবাই চাই শান্তি, কিন্তু বিচিত্রভাবে চারপাশে দেখা যায় প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সংঘাতের জন্ম। কেন এই বিবাদ সৃষ্টি হয়? আর কেন সমাধান খুঁজে পাওয়া এত কঠিন? বাস্তবতার আলোতে এ বিষয়ে কিছু কথা। মানুষ যখন পৃথিবীতে জন্মায়, তখন সে নিখাদ, নিষ্পাপ, দোষত্রুটির ঊর্ধ্বে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে পরিবার, সমাজ ও পরিবেশের প্রভাবেই মানুষের মনে তৈরি হয় স্বার্থ, ভেদাভেদ, অহংকার, হিংসা, এবং অস্থিরতা—যা বিবাদের মূল কারণ।
১. পরিবারে বিবাদের মূল কারণ
একটি পরিবারে বাবা–মা, ভাই–বোন, স্বামী–স্ত্রী-সবাই একই ছাদের নিচে বাস করেও নানা কারণে ভুল বোঝাবুঝি, মান–অভিমান ও মতবিরোধ তৈরি হয়। এসব ছোটখাটো সমস্যা যদি আন্তরিকতার সাথে সমাধান না করা যায়, তখন তৃতীয় পক্ষ প্রবেশ করে সম্পর্কের বন্ধনকে নষ্ট করে দেয়। ফলে ভেঙে যায় পরিবার ও শান্তির ভিত।
২. বাড়ি ও বংশে বিবাদের উৎস
একই বাড়ি বা একই বংশের মানুষ যারা রক্তের সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ—তাদের মধ্যেও দেখা যায় স্বার্থ, আর্থিক লোভ, জমা–জমি বা ব্যক্তিগত লাভের কারণে বিবাদ। যখন বাইরের কেউ এসব সমস্যাকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে, তখন ম্লান হয়ে যায় বংশের ঐক্য, সম্মান ও মর্যাদা।
৩. সমাজে বিভাজনের কারণ
সমাজে বিভিন্ন মত, শ্রেণী, ধর্ম ও পেশার মানুষ একসাথে বাস করে পারস্পরিক বিশ্বাস ও সহনশীলতার ভিত্তিতে। কিন্তু নৈতিকতার অবক্ষয়, অসামাজিক কাজকর্ম, স্বার্থবাদিতা ও মূল্যবোধের পতনের ফলে সমাজে বিবাদের সৃষ্টি হয়। হারিয়ে যায় মানুষের প্রতি মানুষের সেই মানবিকতা।
৪. রাষ্ট্রে বিভেদ সৃষ্টি
একটি রাষ্ট্রে নানা জাতি, ধর্ম, উঁচু–নিচু শ্রেণী, শিক্ষিত–অশিক্ষিত সবাই মিলেই গড়ে তোলে জাতির কাঠামো। বহুত্বই আমাদের শক্তি হওয়ার কথা। কিন্তু যখন বিদেশি স্বার্থ, রাজনৈতিক বিভাজন, গোষ্ঠীগত প্রভাব বা বাহিরের চাপ আমাদের উপর প্রভাব বিস্তার করে, তখনই সৃষ্টি হয় জাতীয় বিভাজন। আর এই বিভাজনের ফলেই রাষ্ট্র হয় দুর্বল, পরনির্ভরশীল। বিবাদ নয়, সমাধানই হওয়া উচিত আমাদের লক্ষ্য
পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র—সবক্ষেত্রেই শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব তখনই, যখন প্রতিটি মানুষ হবে- দায়িত্বশীল, মানবিক, সামাজিক মূল্যবোধসম্পন্ন, ন্যায়ের পক্ষে ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে দৃঢ়, এবং আত্মসম্মান ও স্বাধীন বিচারবোধের অধিকারী। আমরা ভুলে গেলে চলবে না- মানুষ হলো আশরাফুল মাখলুকাত, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ প্রাণী। তাই আমাদের কথা, আচরণ, ব্যবহারের মাধ্যমে বিবাদের পরিবর্তে সমাধান ও শান্তির পথ তৈরি করতে হবে। যেমন কথায় আছে- “যে ব্যক্তি পরিবার, সমাজ বা রাষ্ট্রকে অন্যের প্ররোচনার হাতে সমর্পণ করে, তার পতন অনিবার্য।”
লিখন ও অনুভবে— আপনাদের একজন মিজানুর রহমান জাকির চৌধুরী