Home নির্বাচিত খবর মেয়াদের বাকী তিন বছর অনেক সময়: আনিছুর রহমান দুলাল

মেয়াদের বাকী তিন বছর অনেক সময়: আনিছুর রহমান দুলাল

কাজী হাফিজুর রহমান ॥

এক পর্যায়ে মানুষ প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির খাতা নিয়ে বসে, মিলাবার চেষ্টা করে, কি ‘পেলাম আর পেলাম না’। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ হিসেব নিমজ্জিত হয় বিশাল এক শূন্যতায়। এটি মানুষের সাধারণ প্রবনতা। কিন্তু এই প্রবনতার বাইরেও কিছু মানুষ আছেন। এমনই একজন মানুষ আনিছুর রহমান দুলাল। কিশোর বয়স থেকে সংগঠন ও নেতৃত্বের সঙ্গে জড়িত আনিছুর রহমান দুলাল ১৯৭৫ পরবর্তী আওয়ামী লীগের দু:সময়ে ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়েছেন। সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন, ছিলেন বিএম কলেজ ছাত্র সংসদের নেতা। জেল-জুলুম নির্যাতন ভোগ করেছেন দুই সামরিক সরকার ও জামায়াত-বিএনপি সরকারের সময়। রাজনীতিতে তাঁর দীর্ঘ কঠিন পথ চলায় মন্ত্রী-এমপি হওয়া খুবই স্বাভাবিক ছিলো। কিন্তু এখনো এরকম কিছু হননি। এ নিয়ে তাঁর কোন হতাশা আছে? দৃঢ়ভাবে বললেন, না!

দৈনিক দখিনের সময়-এর সঙ্গে একান্ত এক সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নের উত্তরে এমনটাই বললেন বরিশাল মহানগর ২২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো: আনিছুর রহমান দুলাল। তার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয় সিএন্ডবি রোডের কাজী পাড়াস্থ তাঁর কার্যালয়ে। সাক্ষাৎকারে এই নগর সেবক বলেন, আমার মতো হাজার-হাজার দুলাল আছে। এ বিবেচনায় আমি যেখানে আছি তা মোটেই কম সম্মানের নয়। বাবা বলতেন নীচের দিকে তাকিয়ে চলবে। আমি এখনো বাবার উপদেশ মেনে চলি। আর রাজনীতি তো মানুষের সেবা করার জন্য, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসেব করে হতাশাগ্রস্থ হওয়া রাজনীতিতে মানায় না।

দখিনের সময়: কাউন্সিলর হিসেবে কী গত দুই বছরের বাস্তবতায় আপনাদের কোন হতাশা আছে?

আনিছুর রহমান দুলাল: এখন নেই। তবে ছিলো না, তা কিন্তু নয়।

দখিনের সময়: হতাশা কাটলো কিসে?

আনিছুর রহমান দুলাল: বিগত সিটি নির্বাচন নগরবাসীর কেবল প্রাপ্তির হিসেব ছিলো না। এর সাথে ছিলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও রক্তের উত্তরাধিকার সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর প্রতি মানুষের অন্যরকম এক ভালোবাসা। যে ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন তাঁর দাদা, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি ৭৫-এর ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেটে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত এবং  পিতা দক্ষিণ বঙ্গের অভিভাবক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। এর সঙ্গে আমাদের মেয়র রাজনৈতিক সংগঠক হিসেবে খুবই দক্ষ।

দখিনের সময়: আপনার এ মূল্যায়ন খুবই সঠিক। কিন্তু একজন মেয়রের কাছে নগরবাসীর অন্য প্রত্যাশাও তো থাকে। এরকম প্রত্যাশা কী বরিশাল নগরবাসীরনেই?

আনিছুর রহমান দুলাল: তা হবে কেন! আছে।

দখিনের সময়: তো..?

আনিছুর রহমান দুলাল: প্রতিটি নগরে মেয়রের কাছে নগরবাসীর যে প্রত্যাশা থাকে, বরিশাল নগরবাসীরও সেই একই প্রত্যাশা আছে। আবার এই প্রত্যাশা অন্য যে কোন নগরের চেয়ে বরিশালে বেশি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আমাদের নগর পিতার ফুফু। যে কারণে নগরবাসীর প্রত্যাশা অনেক। এই প্রত্যাশা পুরো ধারন করেই আগামীর বরিশাল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন আমাদের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।

দখিনের সময়: নির্বাচিত হবার পরপরই মেয়রের ভবিষ্যত স্বপ্নের কথা বহুল প্রচারিত। কিন্তু বর্তমানের কি অবস্থা, বিশেষ করে রাস্তা ও জলাবদ্ধতার?

আনিছুর রহমান দুলাল: এরই মধ্যে ওয়ার্ড ভিত্তিক সড়ক ও লেনের তালিকা করা হয়েছে। সাংবাদিক হিসেবে লক্ষ্য করে থাকবেন, মেয়র নির্বাচিত হবার পরপরই ফজলুল হক এভিনিউ হয়ে সদর রোডের রাস্তা সংস্কার করেছেন। এ রাস্তা দিয়ে হাটার অবস্থাও ছিলো না। সেই রাস্তা কমপক্ষে পাঁচ বছরের গ্যারান্টিসহ সংস্কার করা হয়। মাস তিনেক আগে নগরীর অন্যান্য সড়ক স্থায়ীভাবে মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে।

দখিনের সময়: কিন্তু আপনাদের মেয়াদ তো দুই বছর কেটে গেছে। তা হলে?

আনিছুর রহমান দুলাল: বছরের হিসেবে এটি সঠিক। কিন্তু উন্নয়নের জন্য বাকী তিন বছর অনেক সময়।

দখিনের সময়: সড়ক না হয় করলেন, কিন্তু জলাবদ্ধতার কি হবে? নগরীর খালগুলোর বেশিরভাগই তো এরই মধ্যে বিলীন হয়েগেছে। বাকীগুলোও আবর্জনায় প্রায় ভরাট অবস্থা। এবার নগরীর জলাবদ্ধতার চিত্র দেখেছেন, এর সমাধান কি?

আনিছুর রহমান দুলাল: আসলেই এ এক জটিল সমস্যা! এবার জলাবদ্ধতা বেশি হয়েছে। এর একটি কারণ হচ্ছে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার নদীতে পানি বেশি ছিলো। নদীর এই বাস্তবতা বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। পাশাপাশি দখল হয়ে যাওয়া খালগুলো পুন:রুদ্ধার করা জরুরী। এ পরিকল্পনা বিসিসি’র আছে। আর এরই মধ্যে নগরীর খালের আবর্জনা পরিস্কার করার কাজ শুরু হয়েগেছে। লক্ষ্যকরে থাকবেন, খালগুলো ভেক্যু দিয়ে পরিস্কার করা হচ্ছে। ফলে আবর্জনা উঠে আসার পাশাপাশি এর নাব্যতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দখিনের সময়: এবার অন্য প্রসঙ্গে আসি। রাজনীতির একাল-সেকালকে কিভাবে মূল্যায়ন করেন?

আনিছুর রহমান দুলাল: এখন যারা রাজনীতি করছেন তারা তো মায়ের কোলে আছেন! আমাদেরকে ৫/৬ জন নিয়ে মিছিল-মিটিং করতে দিতো না। আর্মি ঘেরাও করে ধরে স্পটেই নির্যাতন করতো। পুলিশ হকিস্টিক নিয়ে রাস্তায় পিটাতো। থানায় নির্যাতন করতো। জেলখানায়ও আতংকে রাখতো। সে এক নারকীয় অবস্থা ছিলো।

দখিনের সময়: সেই সময় কী আপনারা ভুলে গেছেন?

আনিছুর রহমান দুলাল: আমরা ভুলিনি। যারা হাইব্রিড তাদের ব্যাপারে আরো সর্তকতা প্রয়োজন। অবশ্য, এ বিষয়ে আমাদের দলের মাননীয় মহাসচিব যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বহু আগে থেকে সতর্ক করে আসছেন। এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে একটি সেল গঠন করা হয়েছে বলে জেনেছি।  এই কমিটি সুনির্দিষ্টভাবে দলের ভিতর হাইব্রিড ও সুবিধাবাদীদের চিহ্নিত করবে। এরা দলের জন্য ক্ষতিকর, বিপদের সময় এরা বোলপাল্টে ফেলে।

দখিনের সময়: ৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বরিশালের রাস্তায় প্রকাশ্যে যিনি বঙ্গবন্ধুর ছবি অবমাননা করেছিলেন তিনি তো হইব্রিড ছিলেন না। আ স ম ফিরোজের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ কি সত্য?

আনিছুর রহমান দুলাল: ঘটনা সত্য। এ বিষয়ে কিছুদিন আগে নানক ভাই বিস্তারিত বলেছেন। ১৫ আগস্ট বরিশালের ঘটনাবলী ও বঙ্গবন্ধুর ছবি অবমাননা করার ঘটনাটি আমাদের জন্য এক কলংকের ইতিহাস হয়েই আছে!

দখিনের সময়: আজকে আমরা শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। আবার সেই প্রশ্ন করতে চাই, যা শুরুর দিকে করেছিলাম। তা হচ্ছে, রাজনীতিক হিসেবে আপনার কী কোন হতাশা বা কষ্টই নেই?

দৈনিক দখিনের সময় টিমের মুখোমুখি নগর সেবক বিসিসি’র ২২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ‍আনিছুর রহমার দুলাল। ছবি: নাদিম রবি

আনিছুর রহমান দুলাল: একেবারে নেই তা কিন্তু নয়। তবে তা রাজনীতিক হিসেবে নয়। কিছুটা কষ্ট আছে কাউন্সিলর হিসেবে। আমি ক্লাস ফোরে পড়ার সময় কড়াপুরের গ্রাম ছেড়ে এই এলাকায় এসেছি। সেই সময়ের সাগরদী ইউনিয়ন ভেঙ্গে ৫/৬ টি ওয়ার্ড হয়েছে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হবার অন্তত ২০ বছর আগে থেকে আমি এলাকার জনগনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমার কাছে বহু বছর ধরেই মানুষের প্রত্যাশা ছিলো। কাউন্সিলর নির্বাচিত হবার পর সেই প্রত্যাশা আরো বেড়েছে। কিন্তু এই জনপ্রত্যাশা প্রত্যাশিত মাত্রায় পুরণ করতে পারছি বলে মনে হয় না। এ বিষয়ে কষ্ট তো আছেই!

এক নজরে আনিছুর

রহমান দুলাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥

বর্নঢ্য জীবনের অধিকারী বিসিসি’র ২২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিছুর রহমান দুলাল কিশোর বয়স থেকেই বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। করতেন চাঁদের হাট। জড়িত ছিলেন শিল্প-সাহিত্যের সংগঠন খেয়ালীর সঙ্গে। আর রাজনীতিতে তার পথচলা ছাত্রজীবন থেকে, ছাত্রলীগের মাধ্যমে।

আনিছুর রহমান দুলাল ছিলেন সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক। তখন ১৯৭৬ সাল, ৭৫-এ খুনী চক্র হায়নার শক্তিতে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন। পরে হাতেম আলী কলেজ ছেড়ে বিএম কলেজে ভর্তি হয়েছেন তিনি। সুযোগ পেয়েছেন বৃহত্তর পরিবেশে ছাত্র রাজনীতি করার। ১৯৮১ সালে তিনি বিএম কলেজ ছাত্র সংসদের সমাজকল্যান সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। তখন ভিপি ছিলেন জাহাঙ্গীর কবীর নানক এবং জিএস ছিলেন শহীদ খান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

ডিভোর্সের দুদিন পরই সুখবর দিলেন এ আর রহমান

দখিনের সময় ডেস্ক: নিন্দুকরা মনে করছে বাংলার মেয়ে গিটার বাদক মোহিনী দে-র জন্যই হয়ত সায়রাকে ছেড়েছেন ভারতের অস্কারজয়ী সংগীতশিল্পী ও সুরকার এ আর রহমানের। তবে...

যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র টোকিও, সেক্স ইন্ডাস্ট্রির জড়িত কিছু চক্র

দখিনের সময় ডেস্ক: যখন স্বর্ণযুগ ছিল, শহরটি অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি দেখেছে। এটি এখনো বিশ্বের অন্যতম বাসযোগ্য শহর হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে আশঙ্কার বিষয়...

শীত নিয়ে আবহাওয়া অফিসের বার্তা

দখিনের সময় ডেস্ক: দেশের কোথাও কোথাও আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। আবার কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে বলে জানিয়েছে...

শেখ হাসিনা গুজব ছড়িয়ে দুর্বৃত্তদের উস্কানি দিচ্ছে: রিজভী

দখিনের সময় ডেস্ক: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিদেশে বসে শেখ হাসিনা গুজব ছড়িয়ে দুর্বৃত্তদের উস্কানি দিচ্ছেন। ক্ষমতা নিশ্চিত করার জন্যই গত...

Recent Comments