ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগের মধ্যে প্রধান হচ্ছে, ভোটের অধিকার হরণ করার জন্য নির্বাচন ব্যবস্থা ধূলিসাৎ করে দেওয়া। অবশ্য নির্বাচন নিয়ে তার আগের প্রতিটি সরকার নগ্ন খেলা খেলেছে। তবে এ খেলায় শেখ হাসিনা অদ্বিতীয়। রাজনীতির এ হায়নার বিদায়ের পর ধারণা করা হয়েছিল— আর যাই হোক, নির্বাচন নিয়ে আর কোনো খেলা হবে না। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, উল্টোটা। নির্বাচন নিয়ে অতি খেলায় জনমনে নানান সংশয় জেঁকে বসেছে। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বেশ আগে বিদেশি গণমাধ্যমের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতার কথা বলেছিলেন। এ হিসাবে নির্বাচন হওয়ার কথা চলতি বছরের ডিসেম্বরে।
এরপর নির্বাচনকেন্দ্রিক নানান কথা হয়েছে। আর নির্বাচন নিয়ে সবকিছুকে ছাপিয়ে আছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের উচ্চারণ। ‘মুসলমানের এক কথা’— প্রবচনের মতো তিনি অনবরত বলেই যাচ্ছেন, ‘নির্বাচন হবে এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে।’ আর প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি অন্য সবকিছু দূরে রেখে নির্বাচনের কথা বলেই যাচ্ছে অনবরত। যেন ‘কানু বিনা গীত নাই, রাধা বিনা প্রীত নাই’; কিন্তু বাস্তবে অনেক সমস্যাই আছে।
অনেক সমস্যা আছে নিয়ন্ত্রণ সক্ষমতার আওতায়, অনেক আছে নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার বাইরে। এ অবস্থার মধ্যে বিডিআর কমিশনের প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) এ এল এম ফজলুর রহমান এক ফেসবুক পোস্টে বলে বসেছেন, ‘ভারত পাকিস্তান আক্রমণ করলে বাংলাদেশের উচিত হবে উত্তর-পূর্ব ভারতের সাত রাজ্য দখল করে নেওয়া। এ ব্যাপারে চীনের সঙ্গে যৌথ সামরিক ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা শুরু করা প্রয়োজন বলে মনে করি।’ ব্যস! বড় এক ভেজালের দ্বার উন্মোচন হলো! যদিও ৩০ এপ্রিল রাতে এক ফেসবুক পোস্টে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘বিডিআর কমিশনের প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) এ এল এম ফজলুর রহমানের দৃষ্টিভঙ্গি বা মন্তব্যের সঙ্গে কোনোভাবেই একমত পোষণ করে না অন্তর্বর্তী সরকার।’
এখানেই শেষ নয়। ২ মে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ‘বাংলাদেশ সরকার স্পষ্ট করে বলতে চায় যে, মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এ এল এম ফজলুর রহমানের ব্যক্তিগত সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে করা সাম্প্রতিক মন্তব্যগুলো কেবল ব্যক্তিগতভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। এ মন্তব্য বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান বা নীতির প্রতিফলন ঘটায় না এবং তাই সরকার কোনোভাবেই এ ধরনের বক্তব্যকে সমর্থন করে না।’ এর পরও ভারতীয় ভয়ংকর অপপ্রচারণার গীতে এটি হয়ে গেছে বড় সংযোজন।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
# দৈনিক কালবেলায় প্রকাশিত, ৫/৫/২০২৫ শিরোনাম, ‘বজ্রাঘাতের বাস্তবতায় রাজনীতি