ইউনিয়ন প্রতিনিধি, কড়াপুর ॥
আমির আলী তালুকদারের কিশোরী মেয়ে সুরাইয়াকে প্রেমের বাহানায় নিয়ে গেছে প্রতিবেশী গোপাল শীলের ছেলে বাবু শীল। এলাকায় মাদক কারবারী হিসেবে পরিচিত বাবু শীল ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সুরাইয়াকে বিয়ে করেছেন বলে দাবী করা হচ্ছে। প্রায় দশ দিন ধরে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে বাবু শীল। সুরাইয়ার সাথে ফোনে কথা বললেও ধরা দেয় না। বাবু শীলের পরিবারে চলছে অন্য রকম মাতম। তার অসুস্থ্য বাবা গোপাল শীল আরো অসুস্থ্য হয়েছেন। অনবরত ঝড়ছে মায়ের অশ্রু। তাঁর অভিযোগ, ছেলেকে ‘তাবিজ’ করা হয়েছে। এদিকে মেয়ে হারা আমির আলী তালুকদার অদৃশ্য চাপে স্বপরিবারে বসতবাড়ী ছাড়া হয়েছেন। এখন কপালের দোষ দেয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই তাঁর!
দরিদ্র মানুষ আমির আলী, বংশে তালুকদার। হয়তো বংশগত প্রবনতার কারণে অথবা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির কারণে একান্তই ‘নিজের’ সম্পত্তির দিকে কোনরকম ঝোক ছিলো তার। এই ঝোকের কারণে তিনি অসাধ্য সাধন করেছিলেন। দশ কাঠা জমি কিনেছেন। ঘরও তুলেছিলেন। ইচ্ছে ছিলো একটি পুকুর কাটানোর। কিন্তু তা আর হলো না। বরং তার ভিটায় এখন ঘুঘু চড়ানোর অবস্থা হয়েছে।
আমির আলী তালুকদার বরিশাল সদর উপজেলার ১নং রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়নের রায়পাশা গ্রামে দশ শতাংশ জমি কিনে ছোট একটি ঘর তুলে বসবাস শুরু করেন বেশ কয়েক বছর আগে। কিন্তু তখন তিনি জানতেন না, আসলে তিনি হায়নার অরণ্যে প্রবেশ করেছেন। যখন টের পেলেন, ততদিনে তাঁর মেয়ে মাদক কারবারী বাবু শীলের হাত ধরে লাপাত্তা। তখন কিছুই আর করার রইলো না আমির আলী তালুকদারের। বরং অদৃশ্য এক চাপে তাকে সাধের বসতভিটা ছেড়ে বরিশাল শহরে ভাড়াবাসায় উঠতে হয়েছে। পেট চালাবার জন্য সে এখন নগরীর কসাই মসজিদ সংলগ্ন ফুটপাথের হকার।
এলাকার অনেকে বলছেন, আমির আলীকে বসতবাড়ী থেকে উচ্ছেদ করার কৌশল হিসেবেই তাঁর কিশোরী মেয়েকে ভাগিয়ে নিয়েছে মাদক কারবারী বাবু শীল। অন্য এক কৌশলে এলাকা ছাড়া করা হয়েছে পাশেরই একটি পরিবারকে। আগেই পৈত্রিক ভিটে ছাড়া এই পরিবারটির উপর অন্য রকম ক্ষোভ ছিলো একটি বিশেষ এই সম্প্রদায়ের।
অনেক বছর আগে এই পরিবারে কাদির নামে এক যুবকের সাথে পাশের পাড়ার মালতী শীল নামের এক যুবতীর গভীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দুই সম্প্রদায়ের দুই বাড়ির সীমা নির্ধারিত ছিলো ছোট একটি খালের মাধ্যমে। প্রেমের টানেই একদিন সন্ধ্যায় মালতী খালের উপর বাঁশের সাকো পার হয়ে প্রেমিকার বাড়িতে হাজির হয়। অনেক বুঝিয়ে মালতিকে বাবার ঘরে ফেরত যেতে রাজী করাতে সক্ষম হয় যুককটির পরিবার। বাবার ঘরে ফেরত যাবার সময় মালতী বলে যায়, “দেখবেন, রাতেই আমাকে মেরে ফেলবে।”
বাস্তবে হয়েছেও তাই। রাতেই মালতী খুন হলো জন্মদাতা পিতার হতে! তার অপরাধ সে মুসলমান ছেলের সাথে প্রেম করেছে। রাতে খুনের পর পুলিশ জানার আগেই তড়িঘরি করে মালতীর লাশ দাহ করা হয়। আর এলাকায় রটিয়ে দেয়া হয়, ‘মালতী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।’ কিন্তু প্রকৃত সত্য চাপা দেয়া যায়নি। অনেকে বলছেন, আর্ধমৃত অবস্থায় মালতীতে চিতায় তোলা হয়েছে।
একটি সূত্র বলছে, বহু দশক আগে সেই ঘটনার ধারাবাহিকতায়ই আমির আলী তালুকদারের কিশোরী মেয়ে সুরাইয়াকে নিয়ে গেছে প্রতিবেশী গোপাল শীলের ছেলে বাবু শীল। এদিকে দৈনিক দখিনের সময়-এর সাথে ১৮ জুলাই বাবু শীলের মা অভিযোগ করেছেন, মেয়ে পক্ষ তার ছেলেকে ‘তাবিজ’ করে বশ করেছে। এমনকি ছেলে তাঁকে মারধর করেছেন বলে অভিযোগও করেছেন। এ অভিযোগে তিনি পুলিশও এনেছিলেন। কিন্তু পুলিশ আসার পর অন্য চিত্র বেরিয়ে যায়। কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে যাবার মতো। প্রথমে বাবু শীল সুরাইয়াকে বিয়ে করার কথা অস্বীকার করে। কিন্তু নানান প্রমান দেখানোর পর সে বিয়ের কথা স্বীকার করে। এ সময় এলাকাবাসীর মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। কিন্তু পুলিশ কৌশলে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে। এ পুলিশ টিমের নেতৃত্বে ছিলেন এএসআই নাজমুল ইসলাম। স্থানীয় ইউপি মেম্বার সেলিমসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিরা পুলিশকে সহযোগিতা করেছে বলে জানিয়েছেন এএসআই নাজমুল।
এদিকে মাদক কারবারী বাবু শীল কিশোরী সুরাইয়াকে প্রতারণার মাধ্যমে নিয়ে যাবার ঘটনায় এলাকায় চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এই ক্ষোভ আরো বেড়েছে সুরাইয়াকে ফেলে বাবু শীল লাপাত্তা হয়ে যাবার খবরে।