দখিনের সময় ডেস্ক ॥
ব্রিটেনের সঙ্গে চীনের সম্পর্কে গুরুতর অবনতি দেখা হয়েছে। অথচ মাত্র পাঁচ বছর আগেও চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক ‘সোনালি দশকের’ কথা বলছিল ব্রিটেন। কেন এই সম্পর্কে এত নাটকীয় মোড়? “ব্রিটেন আর চীনের সম্পর্কে এক ‘সোনালি দশক’ শুরু হতে যাচ্ছে”- সে বছরই চীন সফরে গিয়ে এই মন্তব্য করেছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী জর্জ অসবোর্ন। কিন্তু দুই দেশের সম্পর্কের সেই সোনালি দশক কয়েক বছর না যেতেই এক তিক্ত শীতল যুদ্ধের দিকে গড়িয়েছে।
রাজনীতি আর আন্তর্জাতিক সম্পর্কে এ সপ্তাহই নাকি ‘অনেক দীর্ঘ’ সময়। পাঁচ বছর তো সেখানে আরো অনেক অনেক দীর্ঘ। এই পাঁচ বছরে বিশ্ব রাজনীতিতে নাটকীয় সব পরিবর্তন ঘটে গেছে। ব্রেক্সিট, অর্থাৎ ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় এসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর পথ ধরে চীন-মার্কিন সম্পর্কে অবনতি এবং বাণিজ্য যুদ্ধের সূচনা হয়েছে। হংকং এ গণতন্ত্রপন্থীদের বিক্ষোভ দমনে বেইজিং নিয়েছে কঠোর অবস্থান। চীনা কোম্পানি হুয়াওয়ে নিয়েও শুরু হয়েছে বিতর্ক। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে কিছু পশ্চিমা দেশ এই কোম্পানির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সর্বশেষ তাদের কাতারে গিয়ে সামিল হয়েছে ব্রিটেন। ফলে ব্রিটেন আর চীনের সম্পর্কে ‘সোনালি দশকের’ পরিবর্তে এখন এক তিক্ত ঠান্ডা লড়াইয়ের দিকে গড়িয়েছে।
জর্জ অসবোর্ন যখন ব্রিটিশ-চীন সম্পর্কে সোনালি যুগের স্বপ্ন দেখছিলেন, তখন ব্রিটেনের রাজনীতি আজকের মতো এতটা জটিল হয়ে উঠেনি। ডেভিড ক্যামেরন দ্বিতীয় দফা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন তার নেতৃত্বে কনজারভেটিভ পার্টি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজয়ী হওয়ার পর। ব্রিটেন তখন চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জন্য উন্মুখ। একদিকে একশো কোটির বেশি মানুষের এক বিশাল বাজারের সঙ্গে বাণিজ্যের বিপুল সম্ভাবনা, অন্যদিকে বিপুল চীনা বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা।
বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান হিসেবে চীন ‘এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক’ নামে যে আন্তর্জাতিক সংস্থা তৈরি করছে, ব্রিটেন সে বছরই সেটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এতে নাখোশ হয়েছিল। কারণ ব্রিটেন ছিল জি-সেভেন গোষ্ঠীর প্রথম দেশ, যারা চীনের এই কাজে সায় দিল। চীনের সঙ্গে ব্রিটেনের এই ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা ওয়াশিংটনে যথেষ্ট অস্বস্তি তৈরি করছিল।