• ৯ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৪শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কেবল সৎ হলেই হয় না

দখিনের সময়
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৫, ০৮:০৩ পূর্বাহ্ণ
কেবল সৎ হলেই হয় না
সংবাদটি শেয়ার করুন...
মন্ত্রী অথবা উপদেষ্টারা কেবল সৎ হলে হয় না, পারঙ্গমও হতে হয়। যে দীক্ষা রাজনীতিকরা বছরের পর বছর নানান টানাপোড়েন ও সংকট মোকাবিলা করে এবং মানুষের সঙ্গে মিশে অর্জন করে থাকেন। আর প্রশাসন ক্যাডারের লোকেরা তা শেখেন বিভিন্ন ধরনের সরকারি দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে, যা অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বেলায় সাধারণত ঘটে না। বলা হয়, পেশাজীবীরা ছাত্র হিসেবে মেধাবী। কথা সত্য। কিন্তু এই মেধা একটি ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ। আর এই মেধাবী ডাক্তার-প্রকৌশলী-কৃষিবিদরা শুরুতে প্রশাসন ক্যাডারে প্রবেশ না করে অনেকটা মাঝপথে প্রশাসনের মেরুদণ্ডে শামিল হতে চান কেন? এ তো দেখি শুরুতে সড়ক পথে চলার পর মাঝপথে ট্রেনে ওঠার মতলবি বাসনা। একটু তলিয়ে দেখলেই অনুধাবন করা সহজ হবে, এই বাসনা শুদ্ধ ধারণা থেকে প্রসূত নয়। যেমন শুদ্ধ নয় হাসিনা সরকারের আমলে ‘ঘরে ঘরে বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার মতো ১৯৭৫-পরবর্তী সরকারের আমলে ব্র্যাকেট-বন্দি অসংখ্য ক্যাডার সৃষ্টি করা। এতে সরকার কাঠামো ভয়ানকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে ১৯৯৬ সালে কথিত জনতার মঞ্চের নামে আমলাতন্ত্রকে দলীয় কলঙ্কের ট্যাগ দেওয়ার অপকর্ম করেছেন মহীউদ্দীন খান আলমগীর। সেই ধারায় ক্রমান্বয়ে আমলাতন্ত্র এক ধরনের সিন্ডিকেটে পরিণত হয়েছে। যেখানে আলু-পটোল-আন্ডার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, সেখানে আমলাতন্ত্রের কঠিন সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা কতটা সম্ভব? তবে এটি কঠিন হলেও অসম্ভব কিন্তু নয়। মোদ্দা কথা হচ্ছে, পোড়খাওয়া রাজনীতিকদেরই যেমন দেশ চালাতে হবে, তেমনই দেশের প্রশাসন চালানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট ক্যাডার থাকতে হবে। ঘুণে ধরা হলেও এ ক্ষেত্রে এখনো ভরসা হচ্ছে প্রশাসন ক্যাডার। এদের অধিকতর দক্ষ করে তুলতে হবে। আর সততা? সেটি সরকারের মেরুদণ্ড তথা আমলাতন্ত্রের ওপর নির্ভর করে না। এটি নির্ভরশীল সরকারের মাথা তথা মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের ওপর। এর প্রমাণ কিন্তু শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান রেখে গেছেন। এমনকি রাষ্ট্রপতি এরশাদের সময়ও আমলাতন্ত্র ততটা দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার সুযোগ পায়নি।
অধুনা খবর হচ্ছে, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে প্রশাসনে নানাভাবে বঞ্চিতদের মধ্য থেকে ৭৬৪ জনকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি গত ৬ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের নীতিগত অনুমোদনের পর এক প্রকার আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। এসব কর্মকর্তার ক্ষতিপূরণ বাবদ সরকারের ব্যয় হবে ৭৫ কোটি টাকা। কিন্তু বিষয়টি এখানেই থেমে থাকলে রাষ্ট্র বা জনগণের কোনো লাভ হবে বলে মনে হয় না। বরং ৭৬৪ জনের মধ্যে যারা শারীরিক ও মানসিকভাবে ফিট আছেন এবং যাদের দক্ষতা ও সততা প্রমাণিত তাদের প্রশাসনে ফেরানো জরুরি। এ ক্ষেত্রে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সনাতনী পদ্ধতি তো আছেই। এটা করা না হলে আমলাতন্ত্রের মৌচাকে যে ঢিল মারা হয়েছে তার প্রতিক্রিয়া কতটা সামলানো যাবে, তা নিয়ে নানা মুনির নানান মত রয়েছে। কে জানে প্রশাসনে এখনো একজন মহীউদ্দীন খান আলমগীর ঘাপটি মেরে খেলছে কি না। এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। অন্তত ফেরাউনের চেয়ে নিজেকে শক্তিশালী মনে করা কারোরই সমীচীন নয়। যেমনটি মনে করে অকল্পনীয়ভাবে ধরা খেয়েছেন শেখ হাসিনা। অতএব সাধু সাবধান!
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
# দৈনিক কালবেলায় প্রকাশিত, ২২ জানুয়ারি ২০২৫।
শিরোনাম ‘আমলাতন্ত্রের মৌচাকে ঢিল’