
xr:d:DAFRbP62ZPQ:25,j:48418741285,t:23030902

দখিনের সময় ডেস্ক:
পশুপ্রেমীদের জন্য একটা মস্ত সুখবর হলো আরও অনেক গবেষণাতেই দেখা গেছে যে পোষ্য প্রাণীদের সাহচর্য মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য ভালো। আমিশ এবং হুটেরাইটসের ওপর চালানো ওই গবেষণার বিষয়ে জানার পর ফার্গুস শানাহান ‘আইরিশ ট্র্যাভেলারস’দের ওপর নিজে গবেষণা করেন। আইরিশ ট্র্যাভেলারস একটা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যারা সীমাবদ্ধ জায়গায় বাস করে। তারা কুকুর, বিড়াল থেকে শুরু করে ঘোড়া, ফেরেটসহ বিভিন্ন প্রাণী পোষে।
অধ্যাপক শানাহান তাদের অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমগুলোর সিকোয়েন্সিং করেছেন এবং তার সাথে তুলনা করেছেন সেই আইরিশ ব্যাক্তিদের যারা আজ আরও আধুনিক জীবনযাত্রা অনুসরণ করেন। পাশাপাশি ফিজি, মাদাগাস্কার, মঙ্গোলিয়া, পেরু এবং তানজানিয়ার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মাইক্রোবায়োমেরও সিকোয়েন্সিং-এরও তুলনা করেছেন যারা এখনো আমাদের শিকারী পূর্বপুরুষদের কাছাকাছি জীবনযাপন করে। তিনি আবিষ্কার করেন আইরিশ ট্রাভেলারদের মাইক্রোবায়োমের সঙ্গে আদিবাসী গোষ্ঠীর মাইক্রোবায়োমের বেশি মিল রয়েছে। তাদের মাইক্রোবায়োমের সঙ্গে প্রাক-শিল্পায়িত বিশ্বের মানুষের (প্রাচীন গুহা থেকে পাওয়া প্রাচীন মলের সংরক্ষিত নমুনা সংগ্রহ করে তার গবেষণার মাধ্যমে) মাইক্রোবায়োমের মিল রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তার কথায়, “আইরিশ ট্র্যাভেলারস স্পম্প্রদায়ের মানুষেরা একটা প্রাচীন মাইক্রোবায়োম ধরে রাখতে পেরেছেন। তানজানিয়ার উপজাতি (যারা এখনো শিকারী) বা মঙ্গোলিয়ান ঘোড়সওয়ারদের (পালিত পশুদের কাছাকাছি ইয়ার্টে বাস করে) মাইক্রোবায়োমের সঙ্গে তার মিল রয়েছে।” অধ্যাপক শানাহান মনে করেন যে এটা আইরিশ ট্র্যাভেলারসদের মধ্যে অটোইমিউন রোগের নিম্ন হারকে ব্যাখ্যা করতে পারে।
সাম্প্রতিক দশকে প্রদাহজনক পেটের রোগ, ক্রোহন ডিজিজ, আলসারেটিভ কোলাইটিস, মাল্টিপল স্কলেরোসিস-এর মতো রোগ প্রায়শই দেখা যায়। তিনি বলেছেন, “এর মানে এটা নয়, যে তাদের স্বাস্থ্য ভালো। বসতি স্থাপনকারী সম্প্রদায়ের চেয়ে আইরিশ ট্র্যাভেলারদের মৃত্যু হচ্ছে অনেক আগে। তবে দারিদ্র্য, প্রান্তিকতা এবং তাদের সংস্কৃতি নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে মদ্যপান, আত্মহত্যার কারণে তাদের মৃত্যু হচ্ছে। এছাড়া দুর্ঘটনাও রয়েছে।” “কিন্তু একজন আইরিশ রিউম্যাটোলজিস্টের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করুন যে তারা সেখানে সিস্টেমিক লুপাস (এক প্রকার অটোইমিউন রোগ) রয়েছে এমন কাউকে দেখেছেন কি না। উত্তর হবে- না। তারা কখনো দেখেননি।”
বিবিসি বাংলায় অন্যান্য খবর
গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখতে চাইছেন, বিভিন্ন উপায়ে প্রাণীদের আমাদের জীবনে ফিরিয়ে আনলে তা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে কি না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা অবাঞ্ছিত কুকুরকে পুনর্বাসনের জন্য প্রাপ্তবয়স্কদের সংস্পর্শে এনে দেখতে চেয়েছেন তাদের উপস্থিতি মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে কি না।
ইতালির একদল গবেষক একটা শিক্ষামূলক খামার তৈরি করেছিল যেখানে পোষা প্রাণী নেই এমন পরিবারের শিশুরা নিয়মিত অন্যদের তত্ত্বাবধানে ঘোড়া পুষতে পারে। দেখা গিয়েছিল, খামারে আসা শিশুদের অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম আরও উপকারী মেটাবোলাইটস (বিপাক) উৎপাদন করা শুরু করেছে। অধ্যাপক গিলবার্ট জানিয়েছেন শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করার এটা একটা সম্ভাব্য উপায় হতে পারে। তার কথায়, “আপনি যদি আরও বেশি ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে আসেন তবে তা আপনার প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে নানাভাবে স্টিমুলেট করবে। এর ফলে আপনার ত্বক এবং আপনার অন্ত্রে থাকা মাইক্রোব নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাও উন্নত হতে পারে।” “কিন্তু আপনার দেহে প্রাণী ব্যাকটেরিয়ার বসতি তৈরি হওয়া সম্ভব নয়।”
গবেষকরা জানিয়েছেন সারা জীবন পোষা প্রাণীর সাহচর্যে থাকলে তা অন্যান্য উপায়েও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সঙ্গে মাইক্রোবায়ামের মিথস্ক্রিয়াকে সহজতর করে তুলতে পারে।
এই প্রসঙ্গে একটা ছোট উদাহরণ দিয়েছেন ইউনিভার্সিটি কলেজ কর্কের মাইক্রোবায়োম কেন্দ্রিক গবেষণা কেন্দ্র ‘এপিসি মাইক্রোবায়োম আয়ারল্যান্ডের ইমিউনোলজি’র অধ্যাপক লিয়াম ওমাহোনি। তার কথায়, “আপনার বাড়িতে পোষা প্রাণী থাকলে আপনি বাইরে যাবেন, হাঁটাহাঁটি করবেন। এইভাবে আপনি পার্কে বা মাটিতে থাকা মাইক্রোবের সংস্পর্শে আসতে পারেন। এটাও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ।”
সূত্র: বিবিসি বাংলা
Post Views: ৮৯