• ১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৪ঠা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মেহেন্দিগঞ্জে মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ারে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় লক্ষাধিক মানুষ

দখিনের সময়
প্রকাশিত আগস্ট ২৪, ২০২০, ১৩:০৫ অপরাহ্ণ
মেহেন্দিগঞ্জে মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ারে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় লক্ষাধিক মানুষ
সংবাদটি শেয়ার করুন...
এম ইউসুফ আলী সৈকত ॥
বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে দ্বিতীয় দফার মেঘনাসহ অভ্যান্তরীণ নদীগুলোর অস্বাভাবিক জোয়ারে ১৬টি ইউনিয়ন এখন প্লাবিত। এসব অঞ্চলের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪০-৫০ হাজার। দীর্ঘ এক সপ্তাহ ধরে জোয়ারের পানি স্থায়ী হওয়ায় চরম মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে সর্বত্রই।
গত এক সপ্তাহে মেঘনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে এছাড়াও অভ্যন্তরীণ সবকটি নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে প্রতিনিয়ত বাড়ছে দুর্গত মানুষের সংখ্যা।
পুরো উপজেলায় দেখা দিয়েছে তীব্র মানবিক সংকট। স্থানীয়দের মতে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার অন্তত ১৩০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে উপজেলায় প্রায় ১লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা হবে প্রায় ৫০ হাজার। অপরদিকে শতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে এবং আরো ৫শতাধিক আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে ১০, হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২/৩ টি স্কুল নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আরো ১০/১৫ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদী ভাঙনে ৩ টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত এবং ১০/১৫ টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় সবকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় শত শত ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, পুকুর ও মৎস্য খামার প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার। কয়েক কিলোমিটার কাঁচাপাকা সড়ক বিধ্বস্ত হয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষেরা। তবে স্থানীয় প্রশাসন বলছেন, ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত ক্ষতিপূরণ ও রাস্তাঘাট মেরামতে উদ্যােগ নেওয়া হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উলানিয়া দক্ষিন ইউনিয়ন, উলানিয়া উত্তর ইউনিয়ন, গোবিন্দপুর ইউনিয়ন, জাঙ্গালিয়া ইউনিয়ন, চানপুর ইউনিয়ন, দড়িরচর খাজুরিয়া ইউনিয়ন ও আলীমাবাদ ইউনিয়ন ।
১৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরা ঘরবাড়ি, গবাদি পশু, কৃষি ফসল ও মৎস্য খামার হারিয়ে এখন সর্বস্বান্ত। আস্তে আস্তে কমছে পানি। সাথে সাথে ভেসে উঠছে বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি, কৃষি, মৎস্য ও যোগাযোগ অবকাঠামোর ক্ষতচিহ্ন। এ অবস্থায় দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও বেড়িবাঁধ এবং রাস্তাঘাট মেরামত করার দাবি জানালেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। নদীতীরবর্তী গ্রামের একাধিক সড়ক পানির প্রবল স্রোতে ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গোবিন্দপুর ইউপি সদস্য কাজী সামছুল আলম বলেন, ভয়াল মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তার ইউনিয়ন ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়েছে, তার ইউনিয়নে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি ভেঙ্গে পড়েছে, ৩/৪, কিলোমিটার কাচা রাস্তা ভেঙ্গে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, প্রায় দেড় শতাধিক পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে গেছে, শত শত হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে, মাছঘাটসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উলানিয়া উত্তর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সৈয়দ আলী, ইউপি সদস্য ইয়াসিন রাজু ও মোঃ খোকন হাওলাদার বলেন, তাদের ইউনিয়নে শত শত পুকুরের মাছ, রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ির, এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চানপুর ইউপি সদস্য আলতাফ হোসেন বলেন, তার ইউনিয়নের সকল রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, হাজার হাজার মানুষ পানি বন্ধি, সবগুলো পুকুর, ঘের ও দীঘির মাছ ভেসে গেছে।