বিশেষ প্রতিনিধি
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ১৭ ডিসেম্বর দেওয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশে সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানানো হয়। এর আগে ১৪ই ডিসেম্বর প্রকাশির আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতেও বিষয়টি উল্লেখ ছিল। একই দিন মানে ১৭ ডিসেম্বর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বরেছেন, বাংলাদেশে নির্বাচন কেমন হবে, এটা নিয়ে আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের উপদেশ চাই না। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ভারতের নসিহতের প্রয়োজন নেই। দিল্লির ভূমিকা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য!
বাংলাদেশের আতীত নির্বাচন নিয়ে ‘খুবই উদ্বিগ্ন’ প্রতিবেশী ভারতের অতীত ভূমিকা কী ছিলো? বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে অতীতে আয়োজিত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনের সময় ভারতের সমর্থন ছিলো। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শেখ হাসিনাকে ফেরত না দেওয়া এবং আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা। ফলে নির্বঅচন নিয়ে ভারতে যে কতঅই বলে তাকেই সনেএদর দৃষ্টিতে দেখা হয়। কেননা, ক্ষমতাচ্যুত ও পলাতক ফেসিস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালীন আয়োজিত তিনটি নির্বাচনই নানা কারণে বিতর্কিত ছিল। অভিযোগ আছে, এসব নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারত কখনো প্রত্যক্ষ, আবার কখনো পরোক্ষ ভূমিকা রেখেছে। এক্ষেত্রে ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টিকে পাশে পেতে দলটির তৎকালীন প্রধান এইচ এম এরশাদকে ‘হাসপাতালে রাখা হয়। প্রসঙ্গত, সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিলকে কেন্দ্র করে সেই নির্বাচন বর্জন করেছিল তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি প্রথমে বর্জনের ঘোষণা দিলেও পরে মি. এরশাদ হাসপাতালে থাকা অবস্থায় তার স্ত্রী রওশন এরশাদের নেতৃত্বে নির্বাচনে যায় দলটি। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেও জাতীয় পার্টির নির্বাচনে যোগ দেওয়ার ফলে এটিকে ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’ হিসেবে দাবি করে আওয়ামী লীগ।
নির্বাচন নিয়ে এ টানাপোড়েনের সময় বাংলাদেশে আসেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং। এরশাদের সাথে বৈঠকও করেন তিনি। এইচ এম এরশাদকে বিরোধী ভূমিকা থেকে সরানো হয়েছে এবং এক্ষেত্রে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সশরীরে এখানে এসে ভূমিকা পালন করেছেন। সুজাতা সিং এখানে এসে সরাসরি জাতীয় পার্টিকে বাধ্য করেছে সরকারবিরোধী ভূমিকা থেকে সরে দাঁড়াতে। ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচন এবং ২০১৮ সালে নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির পর আওয়ামী লীগ সরকারকে “ভারত সরাসরি এন্ডোর্স করেছে” এবং ওই সরকারকে “নির্বাচনি বৈতরণী পার হওয়ার জন্য সরাসরি সাহায্য করেছে” বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ভারতের সমর্থনের কারণেই যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্ব বিতর্কিত নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে প্রকাশ্যে জোরালো আপত্তি তোলেনি বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক।
২০২৪-এর আমি-ডামি নির্বাচনের পরও ভারতসহ বেশ কিছু দেশ শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে তাকে অভিনন্দন জানান। এর কয়েকদিন পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, বিরোধীরা বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে নির্বাচন ভন্ডুল করতে চাইলেও ‘ভারত পাশে দাঁড়িয়েছিলো’।