• ৯ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৪শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খাদ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিকের উপস্থিতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার গভীর উদ্বেগ

দখিনের সময়
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৭, ২০২৫, ১৯:৪৮ অপরাহ্ণ
খাদ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিকের  উপস্থিতি নিয়ে প্রধান  উপদেষ্টার গভীর উদ্বেগ
সংবাদটি শেয়ার করুন...
দখিনের সময় ডেস্ক:
খাদ্যে ভেজাল ও ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে এই জনস্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের একটি লিখিত প্রস্তাবনা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। রোববার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তার সভাপতিত্বে খাদ্যে দূষণ ও জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি মোকাবিলা সংক্রান্ত একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে তিনি এই নির্দেশনা দেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পর্যাপ্ত খাদ্য নিশ্চিত করতে গিয়ে প্রায়শই খাদ্যের নিরাপত্তা উপেক্ষা করা হচ্ছে। তিনি এই বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যম এবং পাঠ্যপুস্তকে খাদ্য সুরক্ষার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। খাদ্যে বিভিন্ন দূষণের অস্তিত্ব সম্পর্কে আমরা অবগত, এবং আমাদের নিজেদের ও প্রিয়জনদের স্বার্থেই এই সংকট মোকাবিলায় সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাস্তবায়নের দিকগুলো আলোচনা করে জরুরি উদ্যোগগুলো তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ করা হবে। বৈঠকে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) উদ্বেগজনক তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে। তারা জানায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা অনুযায়ী, খাদ্যবাহিত রোগে প্রতি বছর বিশ্বে ৬০ কোটি এবং বাংলাদেশে প্রায় ৩ কোটি শিশু আক্রান্ত হয়। প্রতি বছর ১০ জনের মধ্যে একজন শিশু বছরে একবার অসুস্থ হয় এবং ৩ শতাংশের মধ্যে ১ শতাংশ শিশু মারা যায়।
বিএফএসএ আরও জানায়, খাবারে ভারী ধাতু, কীটনাশক ও জীবনাশকের অবশিষ্টাংশ, তেজস্ক্রিয়তা ও জৈবদূষকসহ চার ধরনের দূষক থাকতে পারে। গত অর্থবছর ১ হাজার ৭১৩টি এবং চলতি বছর এ পর্যন্ত ৮১৪টি নমুনা পরীক্ষায় অতিরিক্ত মাত্রায় সিসা বা সিসা ক্রোমেট পাওয়া গেছে। মোট ১৮০টি নমুনার মধ্যে ২২টিতেই সিসা শনাক্ত হয়।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া জানান, ইউনিসেফের জরিপে বাংলাদেশে সাড়ে ৩ কোটি শিশু সীসার সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। সিসা মানবদেহে প্রবেশ করে মস্তিষ্ক, যকৃৎ, কিডনি, হাড় ও দাঁতে জমা হয়। বিশেষ করে শিশুদের হাড় নরম হওয়ায় সিসা সরাসরি মস্তিষ্কে চলে যায়, যা তাদের মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে।
এছাড়া, ৫ শতাংশ গর্ভবতী নারীর মধ্যেও সীসার সংক্রমণ পাওয়া গেছে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ১০ বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনায় সীসার সংক্রমণ কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা হাঁস-মুরগি, দুগ্ধজাত খাদ্য ও মাছের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশকারী ক্ষতিকারক পদার্থ, বিশেষ করে পোল্ট্রি ফার্মে অনিয়ন্ত্রিত অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ সম্পর্কে তথ্য দেন। তারা জানান, বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সতর্ক থাকলেও কিছু চোরাগোপ্তা কোম্পানি কর্তৃপক্ষের নজরদারি এড়িয়ে অবৈধভাবে ফার্ম পরিচালনা করছে। বৈঠকে পোল্ট্রি ফার্মগুলোকে নজরদারিতে আনা এবং কৃষিতে অবৈধ কীটনাশক ব্যবহার রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ল্যাবরেটরি সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে সিসার পরিমাণ নিয়ে সমন্বিত গবেষণা এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন।
বৈঠকে কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।