• ৯ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৬শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দশ ডিসেম্বর সমাবেশের গুরুত্ব এবং বিএনপির হিসেবে গলদ

দখিনের সময়
প্রকাশিত ডিসেম্বর ১০, ২০২২, ০৮:৪৬ পূর্বাহ্ণ
দশ ডিসেম্বর সমাবেশের গুরুত্ব এবং বিএনপির হিসেবে গলদ
সংবাদটি শেয়ার করুন...
অনেক কারণেই আজ, ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশ  গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ সমাবেশ ঘিরে আওয়ামী লীগের অবস্থানের পেছনে রাজনৈতিক অনেক হিসাবনিকাশ কাজ করেছে। এ ক্ষেত্রে রাজনীতির ইতিহাস গভীরভাবে বিচার বিশ্লেষণ করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
কেউ বলছেন, অতীত আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়েছে আওয়ামী লীগ। স্মরণ করা যেতে পারে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগের আন্দোলনের অংশ হিসেবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘জনতার মঞ্চ’ নামদিয়ে একটি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিলো। এ মঞ্চে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচী করেছিল সে সময়ের প্রধান বিরোধীদল। সেই আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস করতে বাধ্য হয় বিএনপি সরকার। এ হচ্ছে বিরোধী দলে থাকাকালে আওয়ামী লীগের সাফল্যের কৌশল।
আবার সরকারের থাকাকালেও আওয়ামী লীগের তিক্ত অভিজ্ঞতাও আছে। ২০১৩ সালের মে মাসে ঢাকার মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামকে সমাবেশ করতে অনুমতি দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু তারা জেকে বসলো! বিভিন্ন সংগঠন এবং রাজনৈতিক দল সঙ্গতী প্রকাশ করতে লাগলো। বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে সাদেক হোসেন খোকা হেফাজতের মঞ্চে গিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করলেন। বেগম খালেদা জিয়া বিবৃতি দিয়ে সবাইকে হেফাজতের সমাবেশে উপস্থিত হবার আহবান জানালেন। পরিস্থিতি হয়েগেলো খোলাটে। সরকারের লেজেগোবরে অবস্থা! এমন ধারণা সৃষ্টি হলো, ‘সরকার যায়যায়।’ সেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারকে কঠোর অবস্থান নিতে হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। সেই অভিযানের কালিমা ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, লাগাম ছেড়ে দিলে বিএনপি হয়তো সে রকম কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইবে। এটি আশংকার দিক। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে এ আশংকার কারণও আছে। কেননা,  এই সমাবেশ নিয়ে কিছু পরিকল্পনা রয়েছে বলে বিএনপি আগেভাগেই জানিয়েছে। যাতে পরিস্থিতির অবনতি ঘটনার আশঙ্কা বেড়েছে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান ৮ অক্টোবর বুলন্দ আওয়াজ দিলেন,  ‘১০ই ডিসেম্বর সরকারের পতন হবে। সেদিনের পর থেকে দেশ চলবে খালেদা জিয়ার নির্দেশে।’ এ আওয়াজের পর প্রশ্ন উঠেছে, আমান উল্লাহ আমান আসলে কোন টিমের প্লেয়ার!
এখানেই শেষ নয়। বিএনপির কোন কোন নেতা গণমাধ্যমে মন্তব্য করেছেন, খালেদা জিয়া দশই ডিসেম্বরের সমাবেশে অংশ নেবেন। যদিও, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২২শে নভেম্বর বলেছেন, ‘এখনো আমরা আসল ঘোষণা তো দেই নাই। আসল ঘোষণা আসবে ১০ তারিখে। সেদিন থেকে শুরু হবে এক দফার আন্দোলন।’ কিন্তু রাজনীতিতে এই কথাকে সত্যভাষণ বলে বিবেচনা করার কোন কারণ নেই। সরকার করেওনি।
এ কারনেই বিএনপির সমাবেশের স্থান নির্ধারণে খুবই কৌশলী খেলা খেলেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কিন্তু বিষয়টি পুরো হৃদয়ঙ্গম করতে না পেরে গো ধরেবসে বিএনপি। ফলে সরকারের জন্যে ‘এ্যাকশনে’ যাওয়াটা  সহজতর হয়। দলের মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতাদেরকে গ্রেফতারের একটি গ্রাইন্ড সৃষ্টি হয়। আর কর্মীদের রাখা হয়েছে উল্টা দৌড়ে। সঙ্গে গ্রেফতার ও মামলা থেরাপী তো আছেই। এবং অবশেষে নয়া পল্টন ছেড়ে বিএনপিকে যেতে হয়ে সোহরাওয়ার্দী  উদ্যানের চেয়ে আরো দূরে, গোলাপবাগ মাঠে। যেখানে এখন আর কোন গোলাপ নেই।
সূত্র বলছে, এর আগে নয়টি বিভাগীয় শহরে সমাবেশের ছবি বিএনপি কপি পেস্ট করেছে ঢাকায়। এই বিভ্রমই সাবেক ক্ষমতাসীন দল বিএনপির হয়েছে বিসমিল্লায় গলদ। হিসেবে ভুল করছেন বিএনপি নেতারা। এটা না করলে ১০ ডিসেম্বর বিএনপি কাংখিত সাফল্যের কাছাকাছি হয়তো যেতে পরতো। এবং ক্ষমতাসীদের বিবেচনায় অঘটন ঘটলেও ঘটতে পারতো।