কারোরই অজানা নয়, দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারকে বেশ কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। শুরুর দিকে বন্যার তাণ্ডবে পূর্বাঞ্চলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এদিকে মুহাম্মদ ইউনূস যাদের নিয়ে সরকার গঠন করেন, তাদের বেশিরভাগই রাজনীতি ও প্রশাসনের বাইরের লোক। স্বাভাবিকভাবে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনায় তাদের পদে পদে হোঁচট খেতে হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। বয়স, অভিজ্ঞতার কারণেও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের সবার কাজের দক্ষতা একই রকম নয়। কয়েকজন নিজের মন্ত্রণালয় চালানোর ক্ষেত্রে গ্রেসমার্কে উতরে গেলেও, কারও কারও বেশ ঘাটতি আছে। কোনো কোনো উপদেষ্টার নিষ্ক্রিয়তা হতাশাজনক। এমনটাই অনেকে মনে করেন।
বিভিন্ন মহলে জোর সমালোচনা আছে, অন্তর্বর্তী সরকার ঠিকমতো দেশ চালাতে পারছে না। এই সমালোচনা একেবারে ভিত্তিহীন বলা যাবে না। খোদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসই তো স্বীকার করেছেন, দেশ পরিচালনার কোনো অভিজ্ঞতা তার নিজের অথবা তার সরকারের বেশিরভাগ উপদেষ্টার নেই। কিন্তু বর্তমান সরকারের প্রধান পদে মুহাম্মদ ইউনূসের বিকল্প কারও কথা ভাবার সুযোগ ছিল? অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দল ও পক্ষকে এক টেবিলে বসানো। সেই কাজে তারা মোটামুটি সফল হয়েছেন। এরপরও অনেক সীমাবদ্ধতা নিয়ে সমালোচনা আছে। সমালোচনা থাকাটাই স্বাভাবিক। এ সত্ত্বেও ইউনূস সরকারের প্রধান দুটি ইতিবাচক দিক উল্লেখ করা যায়। এক. সমন্বিত কার্যক্রম। অতীতের প্রায় সব সরকারই ছিল ব্যক্তিকেন্দ্রিক। ‘হুজুর অথবা হুজরাইন’ না বললে কিছুই হওয়ার নয়। সেই ধারা থেকে সরকার ব্যবস্থা অনেকটাই উঠে এসেছে বলে মনে হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা স্বাধীনভাবেই মন্ত্রণালয় পরিচালনা করছেন। দুই. বর্তমান সরকারের উপদেষ্টাদের দক্ষতা নিয়ে যত সমালোচনাই থাকুক না কেন, এখন পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ আসেনি। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক কাঠামোয় এটি অনেক অভূতপূর্ব বিষয়, অনেকটা সোনার পাথর বাটির মতো।
দৈনিক কালবেলায় প্রকাশিত, ৬/৪/২০২৫। শিরোনাম, ‘এত ভালো ভালো না!’