Home বিশেষ প্রতিবেদন সড়ক মাফিয়া এনায়েতুল্লাহর শুরু এরশাদের আমলে, বিকাশ মির্জা আব্বাসের হাত ধরে

সড়ক মাফিয়া এনায়েতুল্লাহর শুরু এরশাদের আমলে, বিকাশ মির্জা আব্বাসের হাত ধরে

বিশেষ প্রতিনিধি:

বাস মালিকের ছদ্মাবরণে সড়ক মাফিয়া খন্দকার এনায়েতুল্লাহরে এনা পরিবহনের যাত্রা জেনারেলর এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৪ সালে, মাত্র একটি বাস দিয়ে। এরপর তিনি অবিভক্ত ঢাকার মেয়র বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের আশ্রয় গ্রহণ করেণ। সে সময় তিনি প্রথমবারের মতো ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন। ওই সময় সংগঠনটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন ঢাকা সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র মির্জা আব্বাস। এই এনায়েত উল্লাহ বেপরোয়া হয়ে ওঠেন ৭ বছর আগে। পাশাপাশি তিনি পড়েছেন দুদকের জালে।

ঢাকার মিরপুর-গুলিস্তান রুটে চলাচল করত বাসটি। বর্তমানে লোকাল রুট ছাড়িয়ে আন্তঃজেলা বাস চলাচলের অন্যতম শীর্ষ কোম্পানি হয়ে উঠেছে এনা পরিবহন। প্রতিষ্ঠানটির মালিকানায় এখন আড়াইশর মতো বাস রয়েছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানির স্বত্বাধিকারী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ নিজে। তবে কোম্পানির বাসের প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশিও হতে পারে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ। তারা বলছেন, সারা দেশে বর্তমানে যেসব রুটে এনা পরিবহনের বাস চলাচল করছে, সেসব রুটে নিয়মিত কার্যক্রম বজায় রাখতে হলে বহরে আরো বেশিসংখ্যক বাসের প্রয়োজন পড়ে।

এনা পরিবহনের ব্যবসা সবচেয়ে বেশি সম্প্রসারিত হয়েছে গত সাত বছরে। ২০১৩ সালের আগেও এনা পরিবহনের ব্যবসা ছিল মূলত ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটকেন্দ্রিক। পরিবহন মালিকরা জানিয়েছেন, ওই সময় কোম্পানির বহরে বাসের সংখ্যা ছিল পঞ্চাশের আশপাশে। সে হিসেবে গত সাত বছরে এনা পরিবহনের ব্যবসা সম্প্রসারিত হয়েছে অন্তত চার-পাঁচ গুণ। গত সাত বছরে এনা পরিবহনের বাসের সংখ্যা যে গতিতে বেড়েছে, একই গতিতে খন্দকার এনায়েতুল্লাহর সম্পদের পরিমাণও বেড়েছে। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে পরিবহন খাত থেকে প্রতিদিন ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের মাধ্যমে সম্পদ অর্জনের একটি অভিযোগের তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গত কয়েক বছরে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটের গণ্ডি পেরিয়ে এনা পরিবহনের ব্যবসা ছড়িয়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, বিয়ানীবাজার, রংপুর, বুড়িমারী, পঞ্চগড়সহ দেশের দূরপাল্লার প্রায় সব রুটে। সাধারণ চেয়ার কোচ নিয়ে ব্যবসা শুরু করা কোম্পানির বহরে যুক্ত হয়েছে হুন্দাই, স্ক্যানিয়া, ভলভোর মতো অত্যাধুনিক সব বাস। বর্তমানে প্রতিদিনই ঢাকার মহাখালী টার্মিনালের বড় একটি অংশ থাকছে এনা পরিবহনের মালিকানাধীন বাসের দখলে।

মাত্র একটি বাস দিয়ে যাত্রা করা এনা পরিবহনের উত্থানের গল্পটি জানতে পরিবহন খাতসংশ্লিষ্ট ও প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মী জানিয়েছেন, ১৯৮৪ সালে ঢাকার মিরপুর-গুলিস্তান রুটে যাত্রা করে এনা পরিবহন। খন্দকার এনায়েতুল্লাহর উত্থান ঘটে নব্বইয়ের দশকে। সে সময় তিনি প্রথমবারের মতো ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন। ওই সময় সংগঠনটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন ঢাকা সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র মির্জা আব্বাস। সংগঠনের প্রভাবে এনা পরিবহনের ব্যবসা বাড়ে। লোকাল রুট ছেড়ে আন্তঃজেলা বাস চলাচলে নাম লেখায় এনা পরিবহন। ২০১৫ সালের আগ পর্যন্ত ব্যবসাটি ছিল মূলত ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটকেন্দ্রিক।

দীর্ঘদিন ধরে পরিবহন খাতের নেতৃত্বের সুযোগে খন্দকার এনায়েতুল্লাহ বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ অবৈধ উপায়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক। এ নিয়ে গত ১৪ জুন তার সম্পদের হিসাব চেয়ে এনায়েতুল্লাকে নোটিস পাঠায় সংস্থাটি।

সর্বশেষ গত ২৫ অক্টোবর খন্দকার এনায়েতুল্লাহ ও তার পোষ্যদের সম্পদের নথিপত্র চেয়ে সরকারি-বেসরকারি ৫৮টি ব্যাংকসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠিয়েছে দুদক। সরকারি-বেসরকারি ৫৮টি ব্যাংক, ৩০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিআরটিএ চেয়ারম্যান, নিবন্ধন অধিদপ্তর, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর, ডাক বিভাগ, ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ পাঁচ সিটি করপোরেশন, ময়মনসিংহ ও কক্সবাজার পৌরসভা এবং জাতীয় গৃহায়ণ অধিদপ্তরসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠানে দেয়া চিঠিতে এনায়েতুল্লাহ, তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের নামে থাকা হিসাব বিবরণীসহ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চাওয়া হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

রাজনীতিতে রনো ভাইরা আর নেই

রিকশায় না এসে প্রাইভেট কারে আসা এবং ধানমন্ডির ফ্ল্যাটে থাকার বিষয়ে রনো ভাইয়ের লজ্জিত হওয়ার বিষয়টি আমাকে বহু বছর ধরে বহুবার আন্দোলিত করেছে। ধরাধাম...

যা অছে ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরির রিপোর্টে

দখিনের সময় ডেস্ক: ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরির রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালে দুবাই শহরে সাড়ে বাইশ কোটি ডলারের সম্পদ কিনেছেন ৩৯৪ জন। তবে আরও বিভিন্ন তথ্যাদি...

পুলিশের খপ্পরে মৌ চাষির ট্রাক, মরেছে পাঁচ লাখ টাকার মৌমাছি

দখিনের সময় ডেস্ক: দিনাজপুর থেকে ট্রাকে করে ২৫১ বাক্স মৌমাছি নিয়ে রাজবাড়ীতে আসছিলেন মৌচাষি মো. খলিফর রহমান। পথে রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের মনসার বটতলা...

বরিশালে অচিরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আসর বসবে

দখিনের সময় ডেস্ক: বরিশাল শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়ামের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম শেষ হলে অচিরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আসর বসবে। এ কথা জানিয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ...

Recent Comments