• ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাস-লঞ্চ ভাড়া নিয়ে তুষের আগুণ জ্বলছেই

দখিনের সময়
প্রকাশিত ডিসেম্বর ১৬, ২০২১, ২২:০৩ অপরাহ্ণ
বাস-লঞ্চ ভাড়া নিয়ে তুষের আগুণ জ্বলছেই
সংবাদটি শেয়ার করুন...

ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির বিরূপ প্রভাব প্রায় সকল ক্ষেত্রেই পড়েছে। এ নিয়ে আছে জনঅন্তোষ। সবচয়ে বেশি অসন্তোষ দৃশ্যমান হয়েছে বাস ভাড়া নিয়ে। এই অসন্তোষ রাজ পথে এসেছে ছাত্রদের মাধ্যম। ছাত্রদের প্রধান দাবী, তাদের জন্য হাফ ভাড়া। নানান নখড়ার পর মালিক পক্ষ ছাত্রদের দাবী মেনেছে। এই অপকৌশলের আড়ালে ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি ধাতস্থ করানো হয়েছে। সরকার এবং পরিবহন খাতের মালিকদের জন্য এ এক স্বস্তির খবর। কিন্তু প্রশান্তির ভাবা ঠিক হবে না। কারণ, বাস ও লঞ্চ ভাড়া নিয়ে তুষরে আগুণ কিন্তু জ্বলছেই। আর তুষের আগুণ কখন লেলিহান শিখায় পরিণত হয় তা আগে থেকে আঁচ করা কঠিন। অসম্ভব বললেও হয়তো বেশি বলা হবে।
বাংলাদেশে সবেচেয়ে আলোচিত, সড়ক ও নৌ-পরিবহন খাত। এরা জনগণকে প্রতিনিয়ত জিম্মি করে রাখছে। এমনকি এরা সরকারকেও জিম্মী করার ক্ষমতা রাখে। কখনো কখনো করেও। যেটি এবার প্রকটভাবে টের পাওয়াগেছে। এবং অনেকেই অনুধাবন করতে শুরু করেছেন, সড়ক ও নৌ-পরিবহন মূলত চলেগেছে বিভিন্ন শ্রেণী থেকে আশা মাফিয়া চক্রের নিয়ন্ত্রণে। এদের ব্যাপারে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ভাষ্য, তারা ক্ষমতাধর!
সবাই জানেন, সড়ক পরিবহনের বিভিন্ন পরিচয়ে ব্যক্তিদের ক্ষমতার উৎস মূলত রাষ্ট্রের ক্ষৎমতাসীনরা। একারণেই এরা সকল সরকারের সময়ই ক্ষমতাধর। ফলে সরকার পরিবর্তন হলেও পরিবহন মাফিয়াদের দাপট কমেনা। বরং সময়ের পরিক্রমায় বাড়ে। শুধু তাই নয়, সকল সরকারের সময়ই এরা থেকে যায় অধরা। উদাহরণ হিসেবে এনায়েতুল্লাহর কথাই ধরা যাক। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুসারে, মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের ছদ্মাবরণে সড়ক জগতে খন্দকার এনায়েতুল্লাহর যাত্রা ১৯৮৪ সালে, মাত্র একটি বাস দিয়ে। এরপর তিনি অবিভক্ত ঢাকার মেয়র বিএনপি দাপটের নেতা মির্জা আব্বাসের আশ্রয় গ্রহণ করেন। মির্জা আব্বাস ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি থাকাকালেই সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব লাভ করেন এই এনায়েত উল্লাহ। এরপর রাতারাতি তিনি প্রভাবশালী ব্যক্তি হয়ে ওঠেন। তার ক্ষমতা এখন অসীম!
কেবল সড়কের নয়, নৌ-পরিবহন খাতও মাফিয়া নিয়ন্ত্রিত। পরিবহন খাতের মাফিয়ারা যে কতোটা বেপরোয়া তার কিঞ্চিত প্রকাশ ঘটেছে ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে মাত্রাতিরিক্ত বাসভাড়া বৃদ্ধির ঘটনাকে কেন্দ্র করে। তবে এটিই প্রথম বা একমাত্র নয়। পরিবহন মাফিয়া চক্রের প্রথম দাম্ভিক প্রকাশ ঘটে বিএনপি সরকারের আমলে। সেটি ছিলো ভয়াবহতম। তখন দম্ভ দেখিয়েছেন তারেক রহমানের বন্ধু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত গিয়াসউদ্দিন আল মামুন। তকনকার নৌপরিবহন মাফিয়া নেতা মামুনের দম্ভের সঙ্গে এখনকার সড়ক পরিবহন নেতা খন্দকার এনায়েতের সাম্প্রতিক দম্ভের বেশ মিল রয়েছে।
সবাই জানেন, মামুনের দম্ভের উৎস ছিলেন তারেক রহমান। যিনি হাওয়াভবন কেন্দ্রিক সমান্তরাল সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রশ্ন হচ্ছে, খন্দকার এনায়েতের দম্ভের উৎস কে বা কারা? যে বা যারাই হোক, ফলাফল শুভ হবার কোন কারণে নেই। বরং এদের কারণেই খেলার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হচ্ছে। এতে রাজনীতির মাঠ নিয়ন্ত্রের বাইরে গরম হবার আশংকা রয়েছে। আর এমনটি হয়ে রাজনীতির তাওয়া গরম হলে প্রতিপক্ষ সুযোগ নেবেই। সফল হলে বলা হয় রাজনৈতিক কৌশল, আর ব্যর্থ হলে আখ্যায়িত হয় ঘৃন্য ষড়যন্ত্র হিসেবে। সরকারের কাছে প্রশ্ন হচ্ছে, ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি করে রাজনীতির খোলা গরম করা হলো কেন?
প্রশ্ন কিন্তু আরো আছে? তা হচ্ছে, সরকার কেবল রাজধানীর রামপুরায় ছাত্রদের আন্দোলন নিয়ে উগ্রিব কেন। তাদের তো উদ্বিগ্ন হবার কথা সারাদেশের ছাত্র-জনতাকে নিয়ে। সড়ক পরিবহন নেতা পরিচয়ে কতিপয় ব্যক্তি যেভাবে কথাবার্তা বলেছেন এবং নানান নখড়া করে ছাত্রদের যেটুকু দাবী মানা হয়েছে তাতে মূল সমস্যার সমাধান হয়েছে বলে মনে করার কোন কারণ নেই। বরং ক্ষোভ থেকে গেছে তুষের আগুনের মতো। আর সকলেরই জানা, তুষের আগুন কখন লেনিহান শিক্ষায় পরিণত হয় তা আগেভাগে আঁচ করা কঠিন। এটি বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন।
সঙ্গে আর একটি বিষয়ও মনে রাখতে হবে। তা হচ্ছে, পাকিস্তানের অপশাসন থেকে শুরু করে বাংলাদেশে সামরিক শাসন এবং স্বৈর শাসন বিরোধী রাজনীতিতে বল প্রয়োগ যতবার সফল হয়েছে তার সূচনা এবং সাফল্যে পথে নিয়ে যাওয়ার পিছনে মূল অনুঘটক কিন্তু ছাত্ররাই। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, সড়ক পরিবহন খাতের মধ্যে লুকিয়ে থাকা একটি চক্র এই ছাত্রদেরকে উস্কানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে সুনির্দিষ্ট লক্ষ নিয়ে।
লক্ষনীয় বিষয় হচ্ছ, সরকারী হারের চেয়ে লঞ্চ ও বাসে অধিক ভাড়া আদায় করা হচ্ছ। আর ভাড়ার যে তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে তা অনেক ক্ষেত্রেই সাধারণরে বোধগম্য হয় না। এরপরও অনেক বাস-মিনিবাস থেকে ভাড়ার তালিকা উধাও হয়গেছে। নানান অজুহাতে ভাড়া আদায়কারী ভাড়ার তালিকা দেখাতে চান না। ফলে রয়ে গেছে ভাড়া নিয়ে ছাত্র-জনতার ক্ষোভ।