গত মার্চ মাসে দেশের সড়কজুড়ে ঘটেছে রক্তাক্ত ট্র্যাজেডি—৫৮৭টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৬০৪ জন, আহত হয়েছেন ১২৩১ জন। বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, নিহতদের মধ্যে ৮৯ জন নারী এবং ৯৭ জন শিশু রয়েছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে জাতীয় ও আঞ্চলিক সড়কে। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে সবচেয়ে বেশি—২৩৩ জন, যা মোট প্রাণহানির প্রায় ৩৯ শতাংশ। এর বাইরেও বাস, থ্রি-হুইলার, নসিমন, ভটভটি, প্রাইভেটকার—সব ধরনের যানবাহন এই বিপর্যয়ের অংশ ছিল।
বিভাগওয়ারী বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে—১৮২টি ঘটনায় প্রাণ গেছে ১৮৪ জনের। আর সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা হয়েছে সিলেট বিভাগে। সময়ভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে সকাল ও বিকেলবেলায়। কারণ হিসেবে উঠে এসেছে চালকদের অদক্ষতা, বেপরোয়া গতি, শারীরিক ও মানসিক অবসাদ, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং আইন না মানার প্রবণতা। পেছন থেকে ধাক্কা, মুখোমুখি সংঘর্ষ, পথচারীকে চাপা দেওয়ার ঘটনাই ছিল প্রধান দুর্ঘটনার ধরন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, এই বিপর্যয় ঠেকাতে ১০টি সুপারিশ দিয়েছে তারা। এর মধ্যে রয়েছে দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ, মহাসড়কে ধীরগতির যানবাহনের আলাদা লেন, সড়ক পরিবহন আইনের বাস্তবায়ন, গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ, রেল-নৌপথ উন্নয়ন ও বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি। বিশ্লেষকদের মতে, নিহতের সংখ্যা কিছুটা কমলেও সেটি টেকসই নিরাপত্তার ইঙ্গিত নয়। বরং প্রয়োজন প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি, চালকদের প্রশিক্ষণ, এবং সচেতনতা জোরদার। সর্বোপরি, দুর্ঘটনা প্রতিরোধে একটি মানবিক ও জবাবদিহিমূলক পরিবহন খাত গড়ে তোলাই এখন সময়ের দাবি।