দীর্ঘ চোখের মতো পাপড়ি, গভীর নীল আভা—এই অপরাজিতা ফুল শুধু চোখের আরাম নয়, প্রকৃতির এক অনন্য ওষুধি দান। নীলকণ্ঠ বা শঙ্খপুষ্পী নামেও পরিচিত এই ফুল মালাক্কা দ্বীপ থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। সাদা, বেগুনি, লাল ও হলুদসহ নানা রঙের রূপে দেখা মিললেও নীল অপরাজিতাই সবচেয়ে জনপ্রিয়। শুধু ফুল নয়, এর লতা, পাতা, শিকড়—সবকিছুতেই লুকিয়ে আছে অসংখ্য আয়ুর্বেদিক গুণ।
অপরাজিতার ফুলের চা লিভারের জন্য দারুণ উপকারী। এতে থাকা পলিফেনল ও ফ্লাভোনয়েড যৌগ লিভারের এনজাইমের মাত্রা কমিয়ে সুরক্ষা দেয়। এটি রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। অপরাজিতায় থাকা স্যাপোনিন ও ফ্লাভোনয়েড যৌগ অ্যাজমা প্রতিরোধে সহায়তা করে, আর অ্যান্থোসায়ানিন নামক উপাদান শরীরে ফ্রি র্যাডিক্যাল তৈরি হতে বাধা দিয়ে ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এমনকি হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমাতেও এটি সহায়ক—কারণ এটি ট্রাইগ্লিসারাইডস, কোলেস্টেরল ও এলডিএলের পরিমাণ হ্রাস করে।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী অপরাজিতা স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা রাখে, তাই আলঝেইমার চিকিৎসায় এটি ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি গলগণ্ড, কাশি, ফোলা, স্বরভঙ্গ ও আধকপালের ব্যথার মতো সমস্যায় এর মূল, পাতা ও বীজ ব্যবহৃত হয়। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেন—অপরাজিতা উপকারী হলেও অতিরিক্ত সেবনে শরীরে বিষক্রিয়া হতে পারে। তাই ফুল বা বীজের রস অর্ধচামচের বেশি গ্রহণ করা একদমই উচিত নয়। প্রকৃতির এই নীল জাদু যদি পরিমিতভাবে ব্যবহৃত হয়, তবে এটি হতে পারে প্রতিদিনের সুস্থতার এক অনন্য প্রাকৃতিক উপহার।