Home মতামত আত্মোন্নয়নে সহশিক্ষা কার্যক্রম এবং সামাজিক সংগঠনের গুরুত্ব

আত্মোন্নয়নে সহশিক্ষা কার্যক্রম এবং সামাজিক সংগঠনের গুরুত্ব

কাজী হাফিজুর রহমান 
আজকের দ্রুতগতির বিশ্বে, শিক্ষার্থীরা তাদের একাডেমিক এবং পেশাদার জীবনে তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়। যাইহোক, বর্তমান যুগে সাফল্য অর্জনের জন্য শুধু পুথিগত বিদ্যায় পারদর্শী হওয়া যথেষ্ট নয়। নিয়োগকর্তারা  এমন ব্যক্তিদের সন্ধান করে যারা বিভিন্ন ধরণের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার অধিকারী। এখানেই সহশিক্ষা কার্যক্রম এবং স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। সহশিক্ষা কার্যক্রম এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে অংশগ্রহণ ছাত্রজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
সহশিক্ষা পাঠক্রমিক কার্যক্রম বলতে সাধারণত যা নিয়মিত একাডেমিক পাঠ্যক্রমের বাইরে তথা পুঁথিগত বিষয়ের বাইরের জ্ঞানার্জনকে বুঝায়। সাম্প্রতিক গবেষণাগুলি শুধুমাত্র সামাজিকীকরণ এবং সময় কাটানোর বাইরে এই ক্রিয়াকলাপের বিভিন্ন সুবিধা তুলে ধরেছে। এই এক্সট্রা কারিকুলার একটিভিটিস অর্থাৎ সহশিক্ষা কার্যক্রম একাডেমিক সার্টিফিকেট অর্জনে সহায়ক না হলেও প্রত্যেকের সামগ্রিক ক্যারিয়ারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ব্যক্তির দক্ষতা তৈরি করা থেকে শুরু করে সমাজ জীবনে ইতিবাচকভাবে উন্নয়নের চাবিকাঠি হয়ে উঠেছে।
দক্ষতা এবং ক্ষমতার বিকাশ: পাঠ্যক্রমের বাইরের এসকল কাজ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে অংশগ্রহণ শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে যা শেখে তার  বাস্তব দক্ষতা এবং ক্ষমতা বিকাশের সুযোগ দেয়। এই ক্রিয়াকলাপগুলি শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বের দক্ষতা, টিমওয়ার্ক, যোগাযোগ দক্ষতা, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা এবং সময়-ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করতে পারে।
একাডেমিক কর্মক্ষমতা বাড়ানো: সহশিক্ষা শিক্ষার্থীদের চিন্তাশক্তি, মানসিক সক্ষমতা বাড়ায় যা একাডেমিক কর্মক্ষমতা উন্নত করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে শিক্ষার্থীরা যারা সহশিক্ষা কার্যক্রম গুলোতে নিযুক্ত থাকে তাদের উচ্চতর জিপিএ, ভালো উপস্থিতির রেকর্ড এবং সুশৃঙ্খলা হয়ে থাকে।
সামাজিক নেটওয়ার্ক তৈরি করা: সহশিক্ষা এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শিক্ষার্থীদের জন্য সমমনমানসিকতার মানুষের সাথে যোগাযোগ করার সুযোগ দেয়। এটি শিক্ষার্থীদের শক্তিশালী সামাজিক নেটওয়ার্ক তৈরি করতে এবং দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব তৈরি করতে সহায়তা করতে পারে। এছাড়াও, স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থীদের তাদের নির্বাচিত ক্ষেত্রে পেশাদারদের সাথে সংযুক্ত করতে পারে, যা ইন্টার্নশিপ বা চাকরির সুযোগ খোঁজার সময় উপকারী হতে পারে।
ব্যক্তিগত বৃদ্ধির প্রচার: এসকল কার্যক্রম শ্রেণিকক্ষের বাইরে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ এবং আবেগ অন্বেষণ করার সুযোগ দিয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত বৃদ্ধিকে উন্নীত করতে পারে। এটি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য, আত্মসম্মান এবং আত্মবিশ্বাসের অনুভতি বিকাশে সহায়তা করতে পারে।
সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততাকে উৎসাহিত করা: এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের সম্প্রদায়ের সক্রিয় সদস্য হতে অনুপ্রাণিত হয়। এটি শিক্ষার্থীদের নাগরিক দায়িত্ববোধের বিকাশে সহায়তা করতে পারে এবং তাদের সামাজিক এবং রাজনৈতিক সমস্যাগুলিতে জড়িত হতে উৎসাহিত করতে পারে যা তাদের স¤প্রদায় এবং বিশ্বকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে।
মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা: এই ধরনের ক্রিয়াকলাপগুলি সামাজিক সংযোগ এবং স্বত্বের অনুভ‚তি, একাকীত্ব এবং বিচ্ছিন্নতার অনুভ‚তি হ্রাস করার সুযোগ দেয়। ব্যক্তিগতভাবে পরিপূর্ণ এবং অর্থপূর্ণ ক্রিয়াকলাপে নিযুক্ত থাকা মেজাজ এবং সামগ্রিক উদ্দেশ্যের বোধকে উন্নত করে। এই ক্রিয়াকলাপগুলির মাধ্যমে চাপ এবং উদ্বেগ পরিচালনা করতে শেখা আরও ভারসাম্যপূর্ণ এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারার দিকে পরিচালিত করতে পারে।
আত্মসম্মান ও আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়: পাঠ্যক্রম বহির্ভূত ক্রিয়াকলাপগুলিতে অংশগ্রহণ এবং স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থীদের তাদের দক্ষতা বিকাশ এবং প্রদর্শন করতে সহায়তা করে, যার ফলে কৃতিত্ব এবং স্বীকৃতির অনুভ‚তি তৈরি হয় যা আত্ম-সম্মান বৃদ্ধি করে। নেতৃত্বের ভ‚মিকা গ্রহণের মাধ্যমে বা তাদের যতœ নেওয়ার কারণগুলিতে অবদান রাখার মাধ্যমে, শিক্ষার্থীরা প্রতিবন্ধকতাগুলি অতিক্রম করার জন্য তাদের ক্ষমতার প্রতি একটি শক্তিশালী বোধ এবং বিশ্বাস অর্জন করে। নতুন অভিজ্ঞতা এবং চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে, শিক্ষার্থীরা তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য তাদের ক্ষমতার উপর অধিক আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলে।
সৃজনশীলতা বৃদ্ধি: সেচ্ছাসেবী বৃত্তিমূলক সংগঠনে সহায়ক পরিবেশে অন্বেষণ এবং নিজেকে যাচাই করার সুযোগ প্রদান করে একজন শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। সহযোগিতা এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে, শিক্ষার্থীরা বৃত্তের বাইরে চিন্তা করতে এবং সমস্যার নতুন সমাধান করতে শেখে। এই অভিজ্ঞতাগুলি শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত সমৃদ্ধি, একাডেমিক সাফল্য এবং ভবিষ্যত ক্যারিয়ারের সম্ভাবনাকে উপকৃত করতে পারে।
সর্বোপরি, আজকের প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে, একাডেমিক বিষয়ে পারদর্শী হওয়াই সাফল্য অর্জনের জন্য যথেষ্ট নয়। পাঠ্য বহির্ভূত কার্যকলাপ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি শিক্ষার্থীদের মূল্যবান দক্ষতা বিকাশে, নতুন আগ্রহগুলি অন্বেষণ করতে এবং তাদের জীবনবৃত্তান্ত উন্নত করতে সহায়তা করে। এই ধরনের ক্রিয়াকলাপগুলি কর্ম-জীবনের ভারসাম্য এবং সামগ্রিক মঙ্গলকেও উন্নীত করে, যা ব্যক্তিগত এবং পেশাদার বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

তীব্র গরমেও ঘর ঠান্ডা রাখার সহজ উপায়ে

দখিনের সময় ডেস্ক: তীব্র গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত। হিট অ্যালার্ট জারি রয়েছে। এ অবস্থায় ঘরে ফিরেও স্বস্তি মিলছে না। একটু শীতলতার খোঁজে মানুষ। যাদের ঘরে এসি...

দংশন করা সাপে ছবি তুলে রাখার পরামর্শ চিকিৎসকদের

দখিনের সময় ডেস্ক: চিকিৎসকরা মূলত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে তার বিভিন্ন লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। সাপে কামড়ানোর সময় সেটি কী প্রজাতির সাপ বা...

গরমের হাত থেকে বাঁচতে গিয়ে সাপের ছোবলে মৃত্যু

দখিনের সময় ডেস্ক: রাতে তীব্র গরমের হাত থেকে বাচতে ঘর থেকে বের হয়ে বাইরে বসেছিলেন ইমামুল ব্যাপারী (৩৪)। এ সময় তাকে বিষধর সাপে কামড় দেয়।...

গরমও আসে ভারত থেকে

দখিনের সময় ডেস্ক: বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে এখন বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করছে। এর কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদরা জানান, বাংলাদেশের...

Recent Comments