Home মতামত সাংবাদিক-পুলিশ প্রহারে ক্ষতিকর ক্ষমা

সাংবাদিক-পুলিশ প্রহারে ক্ষতিকর ক্ষমা

বলা হয়, পানির অপর নাম জীবন, ক্ষমা মহত্বের লক্ষণ। কিন্তু এটিই শেষ কথা নয়। বরং এটি পরিমানের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বানের জল যেমন জীবন নয়, তেমনই সকল ক্ষমাই মহত্বের লক্ষণ নয়। বানের জল সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়, অবিবেচক ক্ষমা রাষ্ট্র-সমাজ-প্রশাসনকে তলিয়ে দিতে পারে। আমাদের দেশেই এ দুটোরই ভয়ংকর উদাহরণ আছে। ৭০-এর জলোচ্ছাসে সরকারী হিসাব মতোই কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ১২ লাখ আদম সন্তানের জীবনাবসান হয়েছে। এটি সরকারি হিসাব। তাও আবার পাকিস্তান সরকারের। বাস্তবে প্রাণহানীর সংখ্যা ছিল আরো অনেক বেশি। সেই ঘটনায় সম্পদের ক্ষতি হয়েছে অপরিসীম। আর স্বাধীনতা বিরোধী থিংকট্যাংকের ষড়যন্ত্রে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনা রাষ্ট্রকাঠামোকে প্রায় ৭১-এর পূর্ব অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিল।
বলা বাহুল্য, উল্লেখিত দুই মহা-অঘটনের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি এখনো দেশে ঘটেনি। তবে মাত্রাভেদে অনেক ঘটনাই তো ঘটছে। বন্যা-জলোচ্ছাস হচ্ছে, ছোট-বড় অঘটনের ক্ষমার ঘটনাও কম নয়। অবাঞ্চিত এই ক্ষমার ধারায় সাম্প্রতিক সংযোজন দুটি। ঘটনাচক্রে দুটিই বরিশালের। এর একটি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে সাংবাদিক পিটানো। দ্বিতীয়টি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের দ্বারা পুলিশ প্রহার।
কারণে-অকারণে প্রায়ই সাংবাদিক পিটানোর ঘটনা এক রকম বিলাসিতায় পরিনত হয়েছে। নেতা-পাতা-আমলা-কামলা-চাকর-বাকর, কারো রোষাণল থেকেই সাংবাদিকদের রেহাই নেই। তবে সাংবাদিক পিটানোর ক্ষেত্রে নয়া যুগের সূচনা করেছেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের দুই শিক্ষকের নেতৃত্বে কতিপয় ডাক্তার। দুই সহযোগী অধ্যাপকের অংশগ্রহণে সাত সাংবাদিককে আচ্ছা মতো পিটানো হয়েছে।
এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ মৌখিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আর বরিশালের সাংবাদিক সমাজ বিষয়টি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখেছেন। এর আগে ঘটনাস্থলে বরিশালে দুই মালিক-সাংবাদিক নেতা এবং পুলিশের ডিসি(সাউথ) টেলিভিশনে ব্যক্ত করেন সাবধানী প্রতিক্রিয়া।
আর সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিচার দাবী করে ঘটনার পাঁচ দিনের মাথায় ৩০ আগস্ট বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়ন ছোটখাটো মানববন্ধন করেছে। এ মানববন্ধন থেকে দেয়া হয়েছে১০ দিনের নিস্তেজ আল্টিমেটাম। বোঝা গেছে, সাংবাদিক পিটালে কার্যকর প্রতিবাদ করার মতো যেনো কেউ নেই। অথবা সাংবাদিকরা ধরেই নিয়েছেন, ক্ষমাই মহত্বের লক্ষণ।
হয়তো সাংবাদিকদের দ্বারা অনুপ্রানিত হয়ে অথবা অন্য কোন কারণে বরিশালের পুলিশও ‘ক্ষমার অনন্য এক দৃষ্টান্ত’ স্থাপন করল। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত পুলিশের কাছে ক্ষমা চাওয়ার শর্তে আটক বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্রকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেছেন, ‘ছাত্ররা রাইজিং। তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত পুলিশ সদস্যের কাছে ক্ষমা চাওয়ার শর্তে সাধারন ডায়েরি করে আটক ৩ ছাত্রকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।’ সাধু! সাধু! ক্ষমার মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন বরিশালের পুলিশ কমিশনার!
উল্লেখ্য, ৫ সেপ্টেম্বর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মোটরসাইকেল আটকের জের ধরে সংঘবদ্ধ ছাত্রদের হামলায় ট্রাফিক পুলিশের দুই সদস্য গুরুতর আহত হন। রক্তাক্ত অবস্থায় তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। পুলিশের ওপর হামলার সময় আটক করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ ছাত্রকে। এ ঘটনার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ আবস্থায় ৫ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে রুদ্ধদার সভা শেষে পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম হামলার দায়ে আটক ছাত্রদেরকে শর্তসাপেক্ষে ক্ষমা করার কথা জানান।
এর আগে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শিক্ষার্থীদের শান্ত করে রাত ১০টার দিকে মহাসড়কে অবরোধ প্রত্যাহার করিয়ে ছাত্র-প্রতিনিধি দল নিয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় পুলিশ কমিশনারসহ শীর্ষ পুলিশ কর্মকতাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. খোরশেদ আলম বলেন, মোটরসাইকেল আটকের ঘটনা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে ‘বাদানুবাদের’ ঘটনা মাত্রাতিরিক্ত হয়েছে। এর জের ধরে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করে। পুরো বিষয়টি অনাকাংক্ষিত। ছাত্ররা ভবিষ্যতে আর মহাসড়ক অবরোধ করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর।
উল্লেখ্য, আটকের পর ছেড়ে দেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ ছাত্রের বিরুদ্ধে এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপর একাধিক হামলার অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে একজন আবার ভোলা জেলার একটি থানার ওসির ছেলে। আর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের দ্বারা একাধিকবার মহাসড়ক অবরোধের দৃষ্টান্ত আছে। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলামের বক্তব্য অনুসারে ছাত্ররা রাইজিং তাই ক্ষমা পেয়েছে। তা পুলিশ পিটাক আর যাই করুক! বলা বাহুল্য, কর্তব্যরত পুলিশ পিটানো মোটেই হালকা অথবা ছোটখাটো শিশুতোষ ঘটনা নয়। বরং এ খুবই বড় অপরাধ। এতোবড় অপরাধ করেও পারপেয়ে যাবার বিষয়টি কিসের ইঙ্গিত দেয়? এ কী পুলিশ কমিশনারের ক্ষমা, না পরিস্থিতি সামলানোর অক্ষমতা!
ঢাকাইমস-এ প্রকাশিত ৭ সেপ্টেমাবর ২০২৩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

মানবাধিকার কর্মী মিনা ফারাহকে জামায়াত আমিরের ফোন

দখিনের সময় ডেস্ক: বিশিষ্ট কলামিস্ট, অনলাইন এক্টিভিস্ট ও মানবাধিকারকর্মী মিনা ফারাহকে ফোন করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। এ সময় তিনি বাংলাদেশের কঠিন...

পঞ্চগড়ে চা খামারিদের ক্ষমতায়নে ইউসিবির কর্মশালা

দখিনের সময় ডেস্ক: ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি (ইউসিবি) সম্প্রতি পঞ্চগড় জেলার চা খামারিদের জন্য একটি কর্মশালা আয়োজন করেছে। চা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে আর্থিক...

সন্তানের অত্যাচারে শতবর্ষী বৃদ্ধের আত্মহত্যা

দখিনের সময় ডেস্ক: সৈয়দ আলী আকনে (১০৪) নামের এক শতবর্ষী বৃদ্ধের আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার রাতে বিষপানে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। সৈয়দ আলী পিরোজপুরের ইন্দুরকানী...

গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে কমিশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: সিইসি

দখিনের সময় ডেস্ক: নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেছেন, নির্বাচন আয়োজন করতে জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা দরকার। সবার সহযোগিতা...

Recent Comments