সংসদ নির্বাচন কবে? এটি টক অব কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। এদিকে রাজনীতিতে জোর আলোচনায় আছে, নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপি বেশ কৌশলী পথে হাঁটার প্রসঙ্গটি। এ ক্ষেত্রে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব বেশ সাফল্য দেখাচ্ছেন বলে মনে করেন পর্যবেক্ষক মহল। সাধারণভাবে সরকারের ব্যর্থতা-সাফল্য নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিএনপির সাফল্য-ব্যর্থতার প্রসঙ্গটি বিচার-বিশ্লেষণের কেন্দ্রে চলে আসে। অনেকেই মনে করেন, শুরুর দিকে যা-ই হোক, ভোটের রাজনীতির ইকোয়েশনে বিএনপি একাধিক কৌশলী সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে। ৫ আগস্টের কাক্সিক্ষত পট পরিবর্তনের পর প্রবল অনাকাক্সিক্ষত প্রবণতা দেখা গেছে বিএনপির মধ্যে। এ প্রবণতার লাগাম টেনে ধরতে বেশ কিছু নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করে সাহসী ভূমিকা পালন করেছে দলটি। বর্তমান সরকার গঠিত হওয়ার মাসখানেকের মধ্যেই নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপির কতিপয় নেতার অতি অস্থিরতা এবং জামায়াতের সঙ্গে দলটির দৃশ্যমান দূরবর্তী অবস্থান জাতীয়তাবাদী শক্তির অনেককেই শঙ্কিত করেছে।
তবে ফ্যাসিবাদ প্রশ্নে দুই দলই যে অভিন্ন মনোভাবের অধিকারী সে বিষয়টিও তারা স্পষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে ইতোমধ্যে। একাধিকবার সরকারে থাকা এবং চাপের মুখে দুবার ক্ষমতা ছাড়ার অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ বিএনপি খুবই স্পষ্টভাবে বিবেচনায় রেখেছে, রাক্ষসপ্রবণতার রাজনীতির ধারক আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ হাসিনা এখনো বেঁচে আছেন। এবং খুবই নিরাপদে আছেন ভারতে। যিনি ’৭৫-এর থিংক ট্যাংকের দেয়াল ভেদ করে ২১ বছর পর হলেও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাসীন করার অসাধ্য সাধন করেছেন। ১৯৯৬ সালের প্রথম মেয়াদে অনেকটা ‘মাদার তেরেসা’ ভাব নিয়ে থাকলেও ২০০৮ সালের বিশেষ শক্তি কেন্দ্রের পৃষ্ঠপোষকতার নির্বাচনে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে এসে ২০১৩ সাল থেকে আসল মূর্তি ধারণ করেন শেখ হাসিনা। এবং ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পলায়নের আগমুহূর্ত পর্যন্ত সব সেক্টরের দুর্বৃত্তদের কাছে টেনেছেন, কাজে লাগিয়েছেন। এদের অনেকেই আবার অসাধারণ মেধাবী। এ নষ্ট মেধাবীরা না পারে এমন কিছু নেই। এরা কিন্তু এখনো ‘হাসিনা কেবলায়ই’ আছেন বলে মনে করা হয়। হয়তো এদের বিবেচনায় রেখেই রাজনীতির দীর্ঘ পথচলায় প্রাজ্ঞ তারেক রহমান বলেছেন, ‘মাফিয়া চক্রের বেনিফিশিয়ারি কাউকে রাষ্ট্র ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখে অন্তর্র্বতী সরকারের পক্ষে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো সহজ নয়। অন্তর্র্বতী সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে পরাজিত অপশক্তি এবং শাসন-প্রশাসনে থাকা তাদের দোসররা নানা কৌশলে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এ কারণেই যারা সরকারে রয়েছেন এবং গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি, আমরা যারা এ সরকারের সমর্থনে রয়েছি, আমাদের প্রতিটি কাজ অগ্রাধিকারভিত্তিক এবং সুবিবেচনাপ্রসূত হওয়া জরুরি, যাতে পরাজিত অপশক্তি কোনো সুযোগ নিতে না পারে।’ এরপরও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নয় বিএনপি। এর কারণ মোটেই বাঘ-মহিষের অসম্ভব ভালোবাসা অথবা রাজনৈতিক উদারতা নয়। কারণ হচ্ছে, ভোটের রাজনীতির কৌশল। পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, আওয়ামী ভোটব্যাংক অন্যের দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছে না সাবেক শাসক দল বিএনপি। তা ছাড়া ‘রহিমের ঘাড়ে’ ধরার পর ‘করিমের ঘাড়ে’ ধরার বিষয়টি নিকটবর্তী হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যাদের রাষ্ট্র ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে ‘মাফিয়া চক্রের বেনিফিশিয়ারি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তারা এখনো বহাল তবিয়তেই আছেন। তিনি যথার্থই বলেছেন, ‘মাফিয়া চক্রের বেনিফিশিয়ারি কাউকে রাষ্ট্র ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখে অন্তর্র্বতী সরকারের পক্ষে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো সহজ নয়।’ যেখানে একটি নাটক মঞ্চস্থ না করতে পারার ঘটনাকে শিল্পকলার মহাপরিচালক ‘খণ্ডযুদ্ধে পরাজয়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, সেখানে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা কীভাবে করবে অন্তর্র্বতী সরকার? এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতা তো মহাযুদ্ধে পরাজয় হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে আশার কথা হচ্ছে, ‘এখনই নির্বাচন চাই’-এ অবস্থা থেকে প্রকারান্তরে সরে এসেছেন অতিসরব বিএনপি নেতারা। হয়তো দলের প্রাণপুরুষ তারেক রহমানের বক্তব্যের গভীরতা তারা বিলম্বে হলেও অনুধাবন করতে পেরেছেন। এটি আশার কথা। আরও আশার কথা হচ্ছে, ভোটের ইকোয়েশনে একেবারে সঠিক অবস্থান নিতে পেরেছে বিএনপি। এ কারণে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে দলটি। এটি পর্যবেক্ষক মহলে সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
রাষ্ট্রপতি প্রশ্নে সিদ্ধান্তের মধ্যে বিএনপির সুদূরপ্রসারী বিচক্ষণতার প্রতিফলন ঘটে। পর্যবেক্ষরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে বর্তমানে দৃশ্যমান ও অদৃশ্য ক্ষমতাসীনদের স্পষ্ট মেসেজ দেওয়ার চেষ্টা করেছে বিএনপি। এরপর কোনো দলের নাম না নিয়েই রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে দলটি। ২ নভেম্বর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বিএনপি দেশের কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নয়। দেশে অযথা ইস্যু তৈরি করে অরাজক পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা চলছে।’ এর পরদিন ৩ নভেম্বর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-শ্রমিক-জনতার ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার বিষয়ে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ সময় ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে জেতার জন্যই আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দল বানাতে চায়। কিন্তু জনগণ এটি হতে দেবে না।’ সব মিলিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নানাভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
এদিকে পরিস্থিতি যেভাবেই বিশ্লেষণ করা হোক, খণ্ডিত নির্বাচনের আয়োজন করা হলে তা দেশকে অভীষ্ট লক্ষ্যে নিয়ে যেতে পারবে বলে মনে হয় না। এবার আর কোনো গোঁজামিলের নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ নেই। এমন অঘটন ঘটলে দেশ-বিদেশে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হওয়ার বিপদের পাশাপাশি আরও একটি বিপদ আছে। একে মহাবিপদও বলা যায়। তা হচ্ছে, জাতিসংঘের সঙ্গে বিরাজমান একটি অতিগুরুত্বপূর্ণ চুক্তি। তিন বছর অন্তর জাতিসংঘের সঙ্গে বাংলাদেশের এ চুক্তি নবায়নের নির্ধারিত সময় হচ্ছে আগামী বছর ডিসেম্বর এবং চুক্তি নবায়নের ক্ষেত্রে প্রধান শর্তই হচ্ছে নির্বাচিত সরকার। তাহলে দাঁড়াচ্ছে এই, আগামী বছর ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। হয়তো এ বিবেচনায়ই সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ১৮ মাস তথা দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলে রেখেছেন। সামগ্রিক বাস্তবতায় অভিজ্ঞ মহল বলছে, নির্বাচনকে আগামী বছরের সীমানা পার করার সুযোগ খুবই কম, নেই বললেই চলে। আর এর আগে অনেক কাজ করার আছে। অথচ কাজের বহরের তুলনায় সময় কম। হয়তো সামগ্রিক অবস্থার বিবেচনায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ২ নভেম্বর যথার্থই বলেছেন, ‘আমাদের হাতে খুব বেশি সময় নেই। রাজনীতিবিদরাও উসখুস করছেন ক্ষমতায় যেতে!’ মানে সময় কম, কিন্তু কাজ ও চাপ অনেক।
বর্তমান সরকারের হাতে অনেক কাজের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- প্রশাসনব্যবস্থা শুদ্ধ করা। কিন্তু এটিই হয়ে দাঁড়িয়েছে জটিল এক সমস্যা। কুকুরের লেজ সোজা করার মতোও ভাবা যেতে পারে। ১৫ বছর ধরে আমলাতন্ত্রকে যেভাবে সাজানো হয়েছে তাতে উল্লুক আর চিত্রাহরিণ বাছাই করাটাই কঠিন। এমনকি এটা করতে গিয়ে ‘লোম বাছলে কম্বল উধাও’ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হতে পারে। এরপরও তো হাত গুটিয়ে বসে থাকার উপায় নেই। এ কারণে ১৫ বছর ধরে আমলাতন্ত্রের মাজুল করার জন্য যেসব কর্মকর্তাকে বিভিন্নভাবে বনসাই করে রাখা হয়েছে অথবা পত্রপাঠ বিদায় করা হয়েছে, তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এ কমিটি সম্ভবত প্রত্যাশিত গতিতে কাজ করতে পারছে না। অথবা রহস্যজনক কারণে কাজের গতিতে শামুককে পরাজিত করার ধ্যানজ্ঞান করে বসে আছে। এদিকে সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। অথচ যেকোনো বিষয়ে সময় একটি বড় ফ্যাক্টর। এটি কঠিন বাস্তবতা। আর ক্ষমতার প্রশ্নে এটি হিমালয়ের চেয়েও বড় বিষয়। ফলে যে কাজ ৫ আগস্টের বিজয়ের পর এক সপ্তাহের মধ্যে করা যেত, তা এখন করার বাসনা হতে পারে স্বপ্নবিলাস অথবা আত্মঘাতী। কারণ বলাই তো হয়, সময়ের এক ফোড় অসময়ের দশ ফোড়। আর লালনের বাণীই তো আছে- ‘সময় গেলে সাধন হবে না।’ দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে সময়!
♦ লেখক : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
#বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত, ১০ নভেম্বর ২০২৪, শীরোনাম, ‘সময় গেলে সাধন হবে না’
দখিনের সময় ডেস্ক:
‘বঙ্গভবন থেকে শেখ মুজিবের ছবি সরানো উচিত হয়নি’ এমন মন্তব্য করেছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সকালে...
দখিনের সময় ডেস্ক:
দেশের সর্ববৃহৎ খুচরা ওষুধ বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান লাজ ফার্মা লিমিটেড নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি ক্যাশ অফিসার পদে একাধিক জনবল নিয়োগের জন্য এ...
দখিনের সময় ডেস্ক:
বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় ইনস্ট্যান্ট ম্যাসেজিং প্ল্যাটফর্ম হল হোয়াটসঅ্যাপ। এই কারণে মেটা মালিকানাধীন অ্যাপটিকে হ্যাকাররা বারবার টার্গেট করে। ফলে মাঝেমাঝেই হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে জালিয়াতির...
দখিনের সময় ডেস্ক:
কাজের পরিবেশ নেতিবাচক হলে সেখানে কাজ চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে ওঠে। অতিরিক্ত পরিশ্রম, অফিস ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্যের অভাব বা একটা...
We use cookies on our website to give you the most relevant experience by remembering your preferences and repeat visits. By clicking “Accept”, you consent to the use of ALL the cookies.
This website uses cookies to improve your experience while you navigate through the website. Out of these, the cookies that are categorized as necessary are stored on your browser as they are essential for the working of basic functionalities of the website. We also use third-party cookies that help us analyze and understand how you use this website. These cookies will be stored in your browser only with your consent. You also have the option to opt-out of these cookies. But opting out of some of these cookies may affect your browsing experience.
Necessary cookies are absolutely essential for the website to function properly. These cookies ensure basic functionalities and security features of the website, anonymously.
Cookie
Duration
Description
cookielawinfo-checbox-analytics
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Analytics".
cookielawinfo-checbox-functional
11 months
The cookie is set by GDPR cookie consent to record the user consent for the cookies in the category "Functional".
cookielawinfo-checbox-others
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Other.
cookielawinfo-checkbox-necessary
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookies is used to store the user consent for the cookies in the category "Necessary".
cookielawinfo-checkbox-performance
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Performance".
viewed_cookie_policy
11 months
The cookie is set by the GDPR Cookie Consent plugin and is used to store whether or not user has consented to the use of cookies. It does not store any personal data.
Functional cookies help to perform certain functionalities like sharing the content of the website on social media platforms, collect feedbacks, and other third-party features.
Performance cookies are used to understand and analyze the key performance indexes of the website which helps in delivering a better user experience for the visitors.
Analytical cookies are used to understand how visitors interact with the website. These cookies help provide information on metrics the number of visitors, bounce rate, traffic source, etc.
Advertisement cookies are used to provide visitors with relevant ads and marketing campaigns. These cookies track visitors across websites and collect information to provide customized ads.