নগর-গ্রামে নানান উপদ্রব থাকে। এবং সবকিছু ছাঁপিয়ে প্রায়ই আলোচনায় শীর্ষে উঠে আসে কুকুরের উপদ্রব। কিন্তু অবাক শুনালেও এটিই সত্য, বরিশাল নগরীতে কুকুরসহ অন্যান্য সকল উপদ্রব ছাড়িয়ে চরমে পৌঁছেছে গরুর উপদ্রব! এক সময়ে প্রাচ্যের ভেনিস হিসেবে পরিচিত বরিশাল এখন ‘গরুর নগরী’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এবং প্রতিনিয়ত ঘটছে নানান অঘটন ও দুর্ঘটনা।
বিভিন্ন ধরনের অন্ধবিশ্বাসে অধিকতর নিমজ্জিত থাকার যুগে অজানা বিপদ থেকে মুক্তি অথবা সন্তানসহ নানান প্রাপ্তির আশায় মানত করা হতো। এর মধ্যে একটি ছিলো মালিকানা ত্যাগ করে গরু ছেড়ে দেয়া। এ ক্ষেত্রে এঁড়ে (পুরুষ) বাছুর ছাড়া হতো। যেগুলোকে বলা হতো ‘আল্লার ষাড়’। এদিকে বরিশাল শহরে বেশ কয়েক বছর ধরে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে গরু। তবে এগুলো মোটেই সত্ত্বত্যাগ করে ছাড়া হয় না। এর মালিক আছে। আর কেবল এঁড়ে (পুরুষ) নয়, ছাড়া হয় বকনাও( স্ত্রী)। এবং এরা সারা শহরময় দাপটের সঙ্গে বিচরণ করে। খায়দায়, মলমুত্র ত্যাগ করে। এবং রতিক্রিয়া ও প্রসবসহ- সব কিছুই করে সড়কে। এরা চলে গজেন্দ্র চালে। রাতে ঘুমায়ও সড়কে। এদের চলাচল এবং ঘুমাবার পছন্দের স্থান হচ্ছে সড়কের ঠিক মাঝখানটা। যেনো ক্ষমতাবানদের গরুগুলোও ক্ষমতার দাপট দেখায়!
এদিকে বরিশাল নগরী দাপিয়ে বেড়ানো গরুগুলোর ত্যাগ করা মলমুত্রে নগরীর সড়ক-ফুটপাথ এবং বিভিন্ন বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনা নোংরা হয়। অনেক পথচারী পিছলে পড়েন। কারোকারো হাত-পা ভাঙ্গে। দাঁত ভাঙ্গারও উদাহরণ আছে। নগরীতে অসহনীয় উপদ্রব সৃষ্টিকারী এই গরুগুলো মোটেই প্রচলিত স্বভাবের নয়। অর্থাৎ, নয় মোটেই নিরীহ। বরং বেশ রাগী প্রবনতার। কোনকোনটি আবার অতি বদমেজাজী। তাড়াতে চাইলে তেড়ে আসে! বরিশাল শহর দাঁপিয়ে বেড়ানো গরুর সিং-এর গুতায় অনেকেই আহত হয়েছেন।
বরিশাল নগর জুড়ে গরুর এই যে মহা উপদ্রব চলে, তা দেখার যেনো কেউ নেই। অনুসন্ধানে জানাগেছে, বরিশাল শহর দাঁপিয়ে বেড়ানো শতাধিক গরুর মালিকদের বেশির ভাগই প্রভাবশালী। ফলে কিল হজম করার মতো মুখে কুলুপ এটে আছেন নগরবাসী। কিন্তু প্রশাসন নির্লিপ্ত কেন? নগরীতে ‘ছাড়া গরুর’ বেপরোয়া উপদ্রব প্রশ্নে জেলা প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতায় বিক্ষুব্ধ নগরবাসী।