আলম রায়হান
অনেকেই মনে করেন, বাংলাদেশের চলমান রাজনীতির গতিধারায় শেখ হাসিনার ‘প্রভূরাষ্ট্র’ ভারতের সিগনাল অতীতের মতো এখন আর কার্যকর নয়। বরং আগ্রাসী প্রবনতার ভারতকে অতিক্রম করে অনেক বড় সিগনাল ক্লিয়ার বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে ৭১-এর নেতিবাচক ইমেজ ছাঁপিয়ে ভোটের ময়দানে উল্লেখ্যযোগ্য শক্তি হিসেবে প্রমানিত না হলেও ম্যাসেল পাওয়ার হিসেবে জামায়াত এক নম্বরে আছে বলে ধারণা করা হয়। আর সবারই জানা, রাজনীতিতে ম্যাসেল পাওয়ার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এদিকে অনেকেরই ধারণা, সম্ভাব্য কিংস পার্টির মেরুদন্ড হবার দিকে জাহেরে অথবা বাতেনে ঝুকে আছে জামায়াত। এমনটি হলে পরিস্থিতি কী দাড়াবে? এটি এখনই বলা কঠিন।
আবার এমনও তো শোনা যাচ্ছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ ছেড়ে অথবা পদে থেকেই তরুণদের নিয়ে ঘোষিত অথবা অঘোষিতভাবে রাজনীতিতে সামিল হতে পারেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই নোবেল বিজয়ীর বিশ্ব ইমেজের ব্যক্তিত্বের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে দেশের ঘুনেধরা রাজনীতির খোলনলচে পাল্টে দিয়ে দেশকে খাদের গভীর থেকে টেনে তোলা। এবং নিজের জন্য বঙ্গভবন নিশ্চিত করা। কারো কারো মতে, ড. ইউনুস সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হতে পারে। অথবা বহাল থাকতে পারে সংসদ সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিরাজমান ধারা। এদিকে ২১ ডিসেম্বর অধ্যাপক ড. ইউনুস নির্বাচনের পর নিজের কাজে ফিরে যাবার কথা বলেছেন। কিন্তু যে কারণে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে তাঁকে রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ করতে হয়েছে সেই রকম পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তিনি কী করবেন- এ প্রশ্ন তো থেকেই যাচ্ছে!
স্মরণ করা যেতে পারে, ১/১১ এর সরকারের সময় ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু মাঠ বৈরী থাকায় শেষপর্যন্ত তিনি রণে ভঙ্গ দেন। কিন্তু এখন বিকল্প রাজনীতির মাঠ খুবই উর্বর বলে মনে করা হচ্ছে! উল্লেখ্য, জাতিসংঘের সঙ্গে বিরাজমান একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি নবায়নের বাস্তবতায় ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এই বাধ্যবাধকতার কারণে নির্বাচন আগামী ডিসেম্বর থেকে ৬ মাসের বেশি পিছানোর সুযোগ কম। হয়তো এই বাস্তবতার কারণেই আগামী ২ মাসের মধ্যে নতুন দল আত্মপ্রকাশ করার ঘোষণা দিয়েছেন জুলাই আন্দোলনের নায়করা। তাদের ঘোষণা অনুসারে বিদ্যমান দলগুলোর তুলনায় নতুন বৈশিষ্ট্যে পৃথক হবে। ছাত্রনেতারা জানান, জনগণের আস্থা অর্জন করাই হবে নতুন দলের প্রধান লক্ষ্য।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক মহিউদ্দিন আহমদের অভিমত, ‘ছাত্ররা দল গঠন করতে চাইলে সেটা অস্বাভাবিক হবে না। তবে দল গঠনের জন্য সময় প্রয়োজন।’ এদিকে জাগদল ও বিএনপি গঠন প্রক্রিয়ায় জড়িত বামধারার প্রবীন নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা বরিশালের কৃতি সন্তান ইকবাল হোসেন ফোরকান মনে করেন, ‘বিরাজমান পরিবেশে একটি দল দাঁড় করাতে ছয় মাসের বেশি সময় লাগে না!’ এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. রাশেদা রওনক খানের মতে নতুন দল গঠিত হলে তা আগামী নির্বাচনে ফ্যাক্টর না হলেও পরের নির্বাচনে প্রধান শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘ক্ষমতায় যাবার লক্ষ্যেই নতুন কিংস পার্টি গঠন করা হবে, সুদূর আগামীর চিন্তায় নয়!’
দেখা যাক নতুন কিংস পার্টি গঠনের খেলায় দেশের নির্বাচনী রাজনীতি এবং দেশ কোথায় গিয়ে ঠেকে। এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তবে অপেক্ষার পালা খুব দীর্ঘ হবে বলে মনে করার কোন কারণ নেই। এ প্রসঙ্গে ১৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ এবং আলজাজিরাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধমের সঙ্গে সাক্ষাতকারে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বক্তব্যের নানান ডাইমেনশন রয়েছে বলে মনে করেন রাজনীতির পর্যবেক্ষক মহল। আবার কেউ কেউ ধারণা করছেন, ভারতের সাম্প্রতিক অতি আগ্রাসী তৎপরতার মধ্যেও বাংলাদেশের নির্বাচন কেন্দ্রিক রাজনীতির বীজ শুপ্ত থাকতে পারে।