Home নির্বাচিত খবর মেজর শাজাহান ওমরের নাম ছিল ওমর সিং

মেজর শাজাহান ওমরের নাম ছিল ওমর সিং

স্টাফ রিপোর্টার ॥
জুলাই মাস হতে ট্রেনিংপ্রাপ্ত গেরিলা বাহিনী অস্ত্র নিয়ে অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। নিয়মিত বাহিনী সীমান্তে যুদ্ধ করে এবং অনিয়মিত বা গেরিলা বাহিনী অভ্যন্তরে যুদ্ধ করে। সেপ্টেম্বর মাসের ২ তারিখে মেজর শাহজাহান ওমর ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে উজিরপুর থানার বরাকোটায় পৌঁছেন। গৌরনদীর কসবার বিচ্ছু আলম শাহজাহান ওমরের হাসনাবাদ হতে পথ প্রদর্শক ছিলেন।

হানাদার মুক্ত হবার পরপরই ৯নং- সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর মাজাহানর ওমরকে ভারতে হিজরতকারী নেতারা নানান কুটকৌশলে অপস্তে করে বরিশাল থেকে বিতাড়িত করেছিলেন। তারাই আবার ৭৫-এর কাক ডাকা ভোরে খুনী মোশতাকের পক্ষে মিছিল বের করেছেন….। এদেরর এক নাটের গুরু বরিশালে প্রকাশ্যে জাতির পিতার ছবি অবমাননা করেছেন।
বাংলাদেশ সরকার শাহজাহান ওমরকে বরিশাল জেলার সাব সেক্টর কমান্ডার নিয়োগ করেন। তার ছদ্মনাম ছিল ওমর সিং। পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া, পিরোজপুর, কাঠালিয়া ও খুলনা জেলার সুন্দরবনের সাব-সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর জিয়াউদ্দীন আহমেদ। পটুয়াখালী জেলার সাব সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর মেহেদী আলী ইমাম। শাহজাহান ওমর আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে মেজর জলিলের নির্দেশে ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ বরিশাল রওয়ানা দেন। সাথে ছিলেন কমান্ডার অদুদ ও নুর হোসেন।
মেজর শাজাহান ওমর বরিশাল ও পটুয়াখালীর সামরিক অবস্থান পর্যালোচনা করে মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও জনগণের আস্থা অর্জন করতে পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। সমগ্র জেলা বিভিন্ন অঞ্চলে বিভক্ত করে মুক্তিযোদ্ধাদের দায়িত্ব দিতে হবে। বরিশাল-ফরিদপুর রাস্তা দখল, গাবখান খাল দখল, বরিশাল-পটুয়াখালীর জলপথ দখল, শত্রু সেনাদের যাতায়াত পথ নষ্ট, গুরুত্বপূর্ণ এলাকা দখল এবং মুক্ত এলাকার শাসন চালাতে হবে।
মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার জন্য মেজর ওমর সকল দল ও উপদলগুলোকে তাঁর ক্যাম্পে আসার জন্য নির্দেশ দেন। এ সময় প্রত্যেক থানা, ইউনিয়ন এমনকি গ্রামেও মুক্তিবাহিনী গড়ে উঠেছিল। ট্রেনিং প্রাপ্ত শত শত গেরিলা বরিশালের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্যাম্প গঠন করেন। শাহজাহান ওমর তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন ও দায়িত্ব প্রদান করলেন। তার সহ-অধিনায়ক ছিলেন ইপিআর সুবেদার আবদুল হক। আবুদল হকের জন্ম গৌরনদী থানার রাজিহার ইউনিয়নের সাজুরিয়া গ্রামে। মেজর শাহজাহান ওমর প্রত্যেক থানায় একজন বেজ কমান্ডার, সহ-অধিনায়ক ও ফিল্ড কমান্ডার নিয়োগ করেন।
এদিকে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বরিশালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দায়িত্বে ছিল কর্নেল বশির, লে. কর্নেল আতিক মালিক, মেজর নাদের পারভেজ, ক্যাপ্টেন কাহার, ক্যাপ্টেন আজমত, ক্যাপ্টেন কায়ানী, ক্যাপ্টেন ইয়াহিয়া হামিদ প্রমুখ।

সুলতান মাস্টারের অস্ত্রের

হদিস মেলেনি কোন দিন

আলম রায়হান ॥
মুক্তিযুদ্ধের এক পর্যায়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বরিশাল শহর কেন্দ্রিক হয়ে পড়ে। এদিকে মুক্তিবাহিনী শহরের কাছাকাছি অবস্থান নিতে থাকে। এ অবস্থান থেকে রাতে শহরের দিকে আকাশে গুলি ছুড়তো মুক্তিযোদ্ধারা।
মুক্তিযোদ্ধাদের ছোড়া থ্রিনট-থ্রি রাইফেলের গুলি কখনো শহরের এ মাথা থেকে অপর মাথায় পড়তো। এতে পাক হানাদার বাহিনীর ধারনা হয়েছিলো, মুক্তিযোদ্ধার শহরেই আছে। ফলে হানাদার বাহিনী অধিকতর আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়ে। এই আতংক বহু গুণ বাড়িয়ে দেয় মেজর শাজাহান ওমরের সুনীপুন নেতৃত্বে দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধারা।
সামগ্রিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পন করার আগেই বরিশালে পাক বাহিনী রণেভঙ্গ দেয়। তারা ৮ ডিসেম্বর একটি জাহাজে করে ঢাকার দিকে যাত্রা করে। যাবার সময় অস্ত্র ফেলে যায়, হানাদার মুক্ত হয় বরিশাল। কিন্তু এক পর্যায়ে গায়েব হয়ে যায় পাকিস্তানী সৈন্যদের ফেলে যওয়া অস্ত্র।
বরিশালে আজকের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিশাল চত্বরে পাকবাহিনীর ফেলে যাওয়া অস্ত্র ৯ ডিসেম্বর দুটি ট্রাকে করে নিয়ে যান মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সুলতান মাস্টার। তিনি এ অস্ত্র মাধবপাশায় মৃধা বাড়ির দোতলা মসজিদের নীচ তলায় রাখেন। ৭/৮ দিন পর ভোজবাজীর মতো এই অস্ত্র গায়েব হয়ে যায়। একইভাবে গায়েব হয়ে যায় শহরের বটতলার খরম শাহর বাড়িতে রাখা কোতয়ালী থানার একজীপ অস্ত্র।
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সুলতান মাস্টার রহমতপুর ক্যাডেট কলেজ ক্যাম্পের কিছু অস্ত্র জমাদেন। কিন্তু পাক বাহিনীর ফেলে যাওয়া দুই ট্রাক অস্ত্র জমা দেননি। ’৭৩ সালে এই অস্ত্রের সন্ধানে নামে রক্ষীবাহিনী। ফলে আটক করা হয় সুলতান মাস্টার ও তার মামা গনী মহুরীকে। রক্ষী বাহিনীর নির্যাতনে অসুস্থ্য অবস্থায় সুলতাম মাস্টার হাসপাতালে মারা যান। কিন্তু দুই ট্রাক অস্ত্রের সন্ধান আর পাওয়া যায়নি। ধারনা করা হয়, এই অস্ত্র জাসদের হাতে চলে গিয়েছিলো।
এদিকে বটতলায় বাহাদুরের মাধ্যমে খরম শাহর বাড়িতে রাখা কোতয়ালী থানার এক জীপ অস্ত্রের সন্ধান কেউ করেনি রহস্যজনক কারণে। অনুসন্ধানে জানাগেছে, সেই অস্ত্র স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে চলে গিয়েছিলো। এবং এ অস্ত্রের ব্যাপারে অনুসন্ধান না করার ব্যাপারে রক্ষী বাহিনীকে তখন ‘ম্যানেজ’ করা হয়েছিলো বলে সূত্র জানিয়েছে।

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে অন্তর্র্বতী সরকার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টা

দখিনের সময় ডেস্ক: প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকার সর্বাত্মক  প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) ‘জাতীয় নিরাপদ...

শেখ হাসিনা পালায় না, ভেগে যায়: আমান উল্লাহ আমান

দখিনের সময় ডেস্ক: ‘শেখ হাসিনা পালায় না, ভেগে যায়’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও অবিভক্ত কেরানীগঞ্জের চারবারের এমপি আমান উল্লাহ আমান।...

‘আমি পুলিশের সাথে যাচ্ছি ‘

দখিনের সময় ডেস্ক: হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হককে (ব্যারিস্টার সুমন) গ্রেপ্তার করেছে মিরপুর মডেল থানা পুলিশ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলার সময়...

সরকারি চাকরি নিয়োগ ২০২৪, ৫টি পদে নেবে ৮৬ জন

দখিনের সময় ডেস্ক: মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। রাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগের অধীন প্রতিষ্ঠানটি রাজস্বখাতভুক্ত পাঁচটি পদে ৮৬ জনকে নিয়োগের জন্য এ বিজ্ঞপ্তি...

Recent Comments