Home বিশেষ প্রতিবেদন ফরিদপুর দখল ছিলো বরিশাল দখলের আগাম বার্তা

ফরিদপুর দখল ছিলো বরিশাল দখলের আগাম বার্তা

বরিশালের নেতৃবৃন্দ বুঝতে পেরেছিলেন, ফরিদপুর দখল করাটা হলো বরিশাল দখলের আগাম বার্তা। ১৭ এপ্রিল বিমান হামলার পর যা ধারণা করা হয়েছিলো তা এবার নিশ্চিত হওয়া গেলো, ফরিদপুর দখলের পর এবার বরিশালের পালা। কিন্তু তা যে ২৬ এপ্রিলই হবে তা ধারণা করা যায়নি। ভাবা হয়েছিলো অন্তত সপ্তাহখানেক পর বরিশাল অভিযান চালানো হবে। এবং বরিশাল দখল অভিযান শুরু হবে ১৭ এপ্রিলের মতো বিমান হামলা দিয়ে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।
হানাদার বাহিনী বরিশাল দখলের যে অভিযান চালায় তাতে কৌশল বদল করা হয়। পাক বাহিনী বরিশাল অভিযান চালিয়েছে সড়ক ও নৌপথে, ২৬ এপ্রিল। তবে প্রধানত নৌ-পথে। আর প্যারাসুট দিয়ে কিছু সৈন্য নামিয়েছে হেলিকপ্টারে মহামায়ায় আবহাওয়া অফিস থেকে খানিকটা দক্ষিণে। তখন এ এলাকা ছিলো শহর থেকে বেশ দূরে।
মুক্তিযোদ্ধা মনসুরুল আলম মন্টুর ভাষ্যমতে, আমির হোসেন আমু কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ ঘাটিগুলো ঘুরে দেখেন। এগুলোর মধ্যে প্রধান ছিলো তখনকার হিসেবে শহর থেকে বেশ দূরে তালতলী নদী পাড়ে ঝুনাহার। সেখানে অনেকগুলো বাংকার তৈরী করা হয়েছিলো। স্থানীয় জনগণও যুদ্ধের চেতনায় ছিলো বিভোর। যারা রাইফেল পায়নি তারা প্রস্তুত ছিলো বল্লম-শর্কি-কুঠার-দা নিয়ে। বলা বাহুল্য, তখন রাইফেল অথবা বল্লম, শর্কি বা কুঠারের আঘাতে পাক বাহনীর কাউকে ঘায়েল করা যায়নি। যে বিবেচনায় এই চরম ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করা হয়েছে তার ভিত্তি ছিলো স্বাধীনতার জন্য একটি জাতির জাগ্রত চেতনা। যার উপর ভিত্তি করেই মাত্র নয় মাসের যুদ্ধে পাক বাহিনীকে পরাভূত করতে পেরেছে বাঙ্গালীরা। যাদেরকে পাকিস্তানীরা তুচ্ছতাছিল্ল করে বলতো, ‘ভেতো বাঙ্গালী!’

ফরিদপুর দখল হয়ে যাবার পর বরিশালের নেতৃবৃন্দ বুঝেছিলেন, সড়ক ও নৌ-পথে প্রতিরোধের যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা দিয়ে বেশিক্ষণ টেকা যাবে না। এ নিয়ে কয়েক দফা আলোচনা হলো। নির্ধারণ করার চেষ্টা হয়েছে পরবর্তী করণীয়। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনা দাঁড়করানো যাচ্ছিলো না। তবে এ ব্যাপারে সবাই একমত হলেন, গৃহীত ব্যবস্থায় হানাদারদের কয়েক ঘন্টার বেশি ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। মনসুরুল আলম মন্টুর ভাষ্যমতে এ বোধোদয়ের ক্ষেত্রে বেশ প্রভাবিত করেছেন কাঁশিপুর এলাকার এক বৃদ্ধ। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ নেভীতে ছিলেন।  প্রতিরোধ ব্যবস্থা পর্যবেক্ষন করে তিনি বললেন, ‘গানবোট থেকে যে গোলা নিক্ষেপ করা হবে তাতে কতক্ষণ টেকা যাবে তা নিয়ে সংশয় আছে।’
বোধগম্য কারনেই বৃদ্ধ সৈনিকের এই অভিমত তরুণ নেতৃত্বের ভালো লাগেনি। তবে প্রথমে খারাপ লাগলেও বৃদ্ধের কথার বাস্তবতা অনুধাবনে বেশি সময়ও লাগেনি। কেউ কেউ অনুধাবন করলেন, সেই সময় প্রতিরোধের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বেঁচে থেকে শক্তি সঞ্চয় করা। সিদ্ধান্ত হলো, বরিশাল ছাড়ার। মনসুরুল আলম মন্টুর ভাষ্য, ‘আমু ভাইও মোটমুটি তৈরী ছিলেন বরিশাল ছেড়ে যাবার জন্য। কিন্তু সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পরছিলেন না। এক পর্যায়ে আমি চিৎকার করে বললাম, আমু ভাই আপনি রাজনীতির চিন্তা ছাড়েন, এটা যুদ্ধ। যুদ্ধনীতির কথা ভাবুন।’ তবে বেশি ভাবার সময় পওয়া যায়নি।

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

অনলাইনে তরুণীদের প্রেমের ফাঁদ, হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা

দখিনের সময় ডেস্ক: অনলাইনে সম্পর্ক গড়ে টাকা খোয়ানো বা অ্যাপে বিনিয়োগ করে প্রতারণার শিকার হওয়ার ঘটনা এখন যেন নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে উঠছে। হোয়াটসঅ্যাপে বন্ধুত্ব করে...

সন্ধ্যার নাস্তায় মুড়ি খান? জেনে নিন শরীরে কী ঘটছে

দখিনের সময় ডেস্ক: সন্ধ্যাবেলায় ক্ষুধা মেটাতে মাঝেমধ্যেই ঝালমুড়ি খান অনেকে। কিন্তু জানেন এর ফলে শরীরে কী হচ্ছে? কীভাবে মুড়ি খেলে পাবেন উপকার? এছাড়া, কখন মুড়ি...

ব্রিটেনে ভোটে এবার প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াচ্ছে এআই স্টিভ

দখিনের সময় ডেস্ক: করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় এমন সব কাজে এখন ব্যবহার হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। এর মাধ্যমে প্রায় অসম্ভব কাজকে মুহূর্তের মধ্যে করা...

প্রতিদিন এক চামচ ঘি খাবেন যে কারণে

দখিনের সময় ডেস্ক: ঘি তার স্বাদ এবং সুগন্ধের জন্য পরিচিত। পোলাও, জর্দা, হালুয়া, বিরিয়ানি, কোর্মা, রোস্টসহ নানা মজাদার রান্নায় এই উপাদান ব্যবহার করা হয়। অনেকে...

Recent Comments