দখিনের সময় ডেস্ক:
জমিজমা নিয়ে হয়রানি কমাতে সরকার ভূমিসেবা ডিজিটালাইজডসহ নানা সংস্কার পদক্ষেপ নিলেও ভূমি অফিসগুলোর শর্ষের ভূত কিছুতেই যাচ্ছে না। পদ্মা সেতুর কারণে জমির দাম বাড়ায় কেরানীগঞ্জের ভূমি অফিসগুলো যেন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। দালাল ও দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে একজনের জমি বিক্রি করে ফেলছেন আরেকজন। জমির দালাল, দলিল লেখক, এমনকি ভূমি অফিসের বিভিন্ন কর্মচারীর হাতব্যাগেই থাকছে সাব-রেজিস্ট্রারসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার সিলমোহর।
নকল স্বাক্ষর ও সিলমোহরে এক ঘণ্টায় তৈরি হচ্ছে জাল দলিল। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেকর্ডভুক্ত না হলেও সেই দলিলের ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই ছাড়াই একজনের জমি নামজারি হয়ে যাচ্ছে অন্যের নামে। এদিকে জমি হারিয়ে শত শত মানুষ দ্বারস্থ হচ্ছেন সহকারী কমিশনারের (ভূমি) দফতরে। জমি উদ্ধারে প্রতি মাসে জমা পড়ছে অসংখ্য মিসকেস। ভুক্তভোগীরা বলছেন, টাকা খরচ করলেই যে কোনো জমির দলিল নিজের নামে করিয়ে নেওয়া যাচ্ছে। নামজারিও হচ্ছে। জমি নিয়ে যত বেশি ঝামেলা তত বেশি মিসকেস, তত বেশি আর্থিক সুবিধা নেওয়ার সুযোগ।
জানা গেছে, ভূমি জালিয়াতিতে নেমে রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছেন কেরানীগঞ্জের অনেকে। একই সঙ্গে তারা বিত্তশালী করেছেন জালিয়াতিতে সহযোগিতাকারী ভূমি অফিসের দালাল ও দুর্নীতিগ্রস্ত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। প্রতারকের খপ্পরে পড়ে পৈতৃকভিটা হারানো কয়েকজনের অভিযোগের সূত্র ধরে খোঁজ নিতে গেলে দেখা যায়, শুধু হতদরিদ্রের জমি নয়, একটি কোম্পানির কেনা প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা বাজারমূল্যের ৪৫ শতক জমি জাল দলিলের মাধ্যমে নিজেদের নামে নামজারি করিয়ে ফেলেছেন উপজেলাজুড়ে ভূমি জালিয়াতির হোতা হিসেবে পরিচিত মো. আবু সাঈদ ও মো. আবু হোসেন নামে দুই ভাই। দলিলটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেকর্ডভুক্ত না হলেও ভূমি অফিসের দালালদের সহযোগিতায় সেই দলিলের ভিত্তিতেই ইকুরিয়া মৌজার ওই ৪৫ শতক জমি তাদের নামে নামজারি হয়েছে। বর্তমানে জমিটি আবার প্রকৃত মালিকের দখলে যাওয়ার আগেই তা বিক্রির চেষ্টা করছেন আবু সাঈদ ও আবু হোসেন।
এক প্রতিষ্ঠানের জমি অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে কীভাবে বিনিময় করে নেওয়া সম্ভব এবং সেই নামজারির প্রস্তাবে কীভাবেই বা স্বাক্ষর হয় এমন প্রশ্নে ওই অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা রণজিৎ চন্দ্র নাথ বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি। এখানে বড় ধরনের কোনো ভুল হয়তো হয়ে গেছে। যিনি নামজারির প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছেন তিনি হয়তো অফিসের বিশ্বস্ত কারও সুপারিশে সরল বিশ্বাসে এটা করেছেন। জমির প্রকৃত মালিক মিসকেস করলে জাল দলিলের ভিত্তিতে হওয়া নামজারি বাতিল হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ভুয়া দলিলের ভিত্তিতে নামজারির আবেদন মাঝেমধ্যেই হাতে আসে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি দেখেশুনে নামজারির প্রস্তাব দিতে।’