Home শীর্ষ খবর ১৯ বছর পেটে কাঁচি বয়ে বেড়াচ্ছেন বাচেনা খাতুন

১৯ বছর পেটে কাঁচি বয়ে বেড়াচ্ছেন বাচেনা খাতুন

দখিনের সময় ডেস্ক:

নিজেদের একমাত্র সম্বল ১০ কাঠা জমি বিক্রি করে স্ত্রী বাচেনা খাতুনের পিত্তথলির পাথর অপারেশন করিয়েছিলেন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার হাপানিয়া গ্রামের আবদুল হামিদ। তবে অপারেশনের পরেও সুস্থ্য হননি বাচেনা খাতুন। তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে পার করেছেন দীর্ঘ ১৯ বছর। সবশেষ এক্স-রে করে জানতে পারেন তার পেটের মধ্যে কাঁচি রেখেই সেলাই করেছিলেন চিকিৎসকরা।

জানা গেছে, ২০০২ সালে মেহেরপুরের গাংনীতে অবস্থিত রাজা ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসেন বাচেনা খাতুন। রাজা ক্লিনিকের পরিচালক ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজার শরাণাপন্ন হলে তিনি বাচেনা খাতুনকে পিত্তথলির পাথর অপারেশনের পরামর্শ দেন। ওষুধপত্র ও অপারেশন ফি বাবদ ২০ হাজার টাকায় চুক্তি করেন ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজা। স্ত্রীর অপারেশনের জন্য একমাত্র সম্বল ১০ কাঠা জমি বিক্রি করেন আবদুল হামিদ।

২০০২ সালের ২৫ মার্চ বাচেনা খাতুনের অপারেশন করেন সার্জারি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মিজানুর রহমান। তার সঙ্গে সহকারী হিসেবে ছিলেন রাজা ক্লিনিকের পরিচালক ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজা ও অ্যানেস্থেসিয়া করেন ডা. তাপস কুমার। অপারেশনের এক সপ্তাহ পর বাচেনা খাতুনকে প্রেসক্রিপশন দিয়ে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। তবে অপারেশনের পর বাচেনা খাতুনের অসুস্থতা দিন দিন বাড়তেই থাকে। পুনরায় ডা. রাজার শরণাপন্ন হলে তিনি ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা বলে ফেরত পাঠান। কিন্তু তীব্র যন্ত্রণা থেকে কোনভাবেই মুক্তি পাচ্ছিলেন না ওই ভুক্তভোগী। সমর্থ অনুযায়ী বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসাও নেন তিনি। সবশেষ চিকিৎসার শেষ সম্বল দুটি গরুও বিক্রি করে দেন বাচেনার স্বামী।

সম্প্রতি রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে যান বাচেনা খাতুন। সেখানে এক্স-রে রিপোর্টে দেখা যায়- তার পেটের মধ্যে ৪-৫ ইঞ্চির একটি কাঁচি রয়েছে। এমন খবর পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ওই নারী। এরপর ঘটনাটি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। বাচেনা খাতুন বলেন, অপরেশনের পর সুস্থ হওয়ার কথা বলেছিলেন ডাক্তার। কিন্তু আমার পেটের যন্ত্রণা দিন দিন বাড়তেই থাকে। কয়েকবার আমার সমস্যার কথা জানাতে গিয়েও প্রতিকার পাইনি। ১৯ বছর মৃত্যুর যন্ত্রণা পাইছি। অনেক জায়গায় চিকিৎসা করাতে গিয়ে সহায়সম্বল শেষ হয়ে গেছে। আমি এখন নিঃস্ব। যারা আমার অপারেশনের সময় ভুল করেছে আমি ক্ষতিপূরণসহ তাদের বিচার চাই। বাচেনার স্বামী আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আমি একজন প্রতিবন্ধী। আমার একটি পা অচল। আমি আবার স্ত্রীর অপারেশন করাব। আমার আর কিছুই নাই।’

রাজা ক্লিনিকের পরিচালক ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজা বলেন,  আমি বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারি না। আমিও ওই অপারেশনের সময় সহকারী হিসেবে ছিলাম। ভুল হতে পারে। ডা. মিজানুর রহমান একজন সার্জারি বিভাগের ভালো চিকিৎসক। তবুও ২০ বছর বাচেনাকে কষ্ট পেতে হয়েছে। আমি এখন জানতে পারলাম ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার সব দায়িত্ব আমি নিব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

শিবিরের ঢাবি শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণা শিগগিরই: শিবির সভাপতি

দখিনের সময় ডেস্ক ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বলেছেন, দু-একদিনের মধ্যে সেক্রেটারিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। গতকাল শনিবার রাতে গণমাধ্যমকে...

সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাসান গ্রেপ্তার

দখিনের সময় ডেস্ক সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান চৌধুরীকে রাজধানীর আদাবর থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ রবিবার রাজধানীর...

শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার

দখিনের সময় ডেস্ক: কক্সবাজারের টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপে বাড়ির সামনে থেকে তাহমিনা আক্তারের (৭) নামে এক শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাত...

স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা, থানায় এসে স্বামীর আত্মসমর্পণ

দখিনের সময় ডেস্ক: রাজধানীর পল্লবীতে শামসুন্নাহার (৫২) নামের এক নারীকে নিজ হাতে বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছেন তার স্বামী। ঘাতক স্বামীর নাম মোখলেছুর রহমান (৫২)।...

Recent Comments