দখিনের সময় ডেস্ক:
‘ভাবি’ সিন্ডিকেট কান্ডে তোলপাড় রেল। মন্ত্রীর স্ত্রীর নির্দেশে রেল কর্মকর্তাকে বরখাস্তের ঘটনায় সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে। একদিন আগে যাদের চেনেন না দাবি করেছিলেন, বিনা টিকিটে ট্রেনে চড়া সেই তিন যাত্রীকেই অবশেষে আত্মীয় বলে স্বীকার করে নিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। স্ত্রীর কান্ডে ‘বিব্রত’ বলেও জানান রেলমন্ত্রী। আবার গতকালই মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে সতর্ক করা হয়েছে, বিশেষ পরিচয়ে সুবিধা না দেওয়ার বিষয়ে।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলতে শুরু করেছেন, আত্মীয়স্বজনের নামে তদবির সব সময় চলতে থাকে। তাদের নির্দেশ অনেক ক্ষেত্রে মানতে বাধ্য হচ্ছেন কর্মকর্তারা। কেবল টিকিট নয়, ঠিকাদারি কাজ, জমির ইজারা, বদলি, নিয়োগ- সব জায়গায় একটি সিন্ডিকেটের যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। রেলের একাধিক কর্মকর্তা জানান, মনি, মিলন, লাবণ্য, রেজা, জোবায়েরসহ ১০ সদস্যের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে রেলে। একে ‘ভাবি সিন্ডিকেট’ আখ্যা দিয়েছেন রেলকর্মীরা।
পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে চাপ আসে এ সিন্ডিকেটের সদস্যদের পক্ষ থেকে। নির্দেশ না মানলে বদলি বা বরখাস্তের হুমকি দেওয়া হয়। অনেক কর্মকর্তা অবশ্য নিজের স্বার্থে এ সিন্ডিকেটের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালকদের কাছে কাজ চাওয়া, কেনাকাটা, ঠিকাদারি- সবই চলে তাদের। অনিয়ম জায়েজ করতে নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করেন তারা। টিকিটের ঘটনায় গতকাল দিনভর রেলে এ নিয়ে আলোচনা চলে। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বিমানবন্দর, কমলাপুর রেলস্টেশন, পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন স্থানে কর্মরতরা জানান, এরা কর্মকর্তাদের রুমে গিয়ে তদবির করেন। কেউবা টেলিফোন করে নির্দেশ দেন। কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কাজ করিয়ে এরা থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিছু কর্মকর্তা আবার এদের মাধ্যমে অনৈতিক সুবিধাও নেন।
সম্প্রতি রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের আত্মীয় দাবি করা তিন ব্যক্তি ট্রেনের এসি কামরায় বিনা টিকিটে ভ্রমণ করছিলেন। তখন টিটিই তাদের কাছে টিকিট না পেয়ে জরিমানা করেন। তারা মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেওয়ার পরও জরিমানা করায় পরের দিনই ওই টিটিইকে বরখাস্ত করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে রেলমন্ত্রী ব্যাপক সমালোচনায় পড়েন। প্রথমে তিনি জরিমানা করা ওই তিন ব্যক্তিকে চেনেন না বলে জানান। পরে আত্মীয় হিসেবে স্বীকার করলেও রেলমন্ত্রী দাবি করেন, তিনি টিটিইকে বরখাস্তের আদেশ দেননি।