Home শীর্ষ খবর মুজিব বর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার: হতদরিদ্র মানুষ পেলো জমিসহ ঘর

মুজিব বর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার: হতদরিদ্র মানুষ পেলো জমিসহ ঘর

দখিনের সময় ডেক্স ॥

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ইতিহাসে এক অনন্য নজির সৃষ্টি করছেন। গতকাল শনিবার সরকার সারা দেশে ৬৬ হাজার ১৮৯টি অসহায় পরিবারকে আধাপাকা ঘর ও জমি দিয়েছেন। গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এই ঐতিহাসিক কাজের উদ্বোধন করেন তিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী চার জেলার উপকারভোগীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরাসরি কথা বলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে মুজিব শতবর্ষ পালন করছে সরকার।
বছরটিকে স্মরণীয় করে রাখতে জাতির পিতার উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ভূমি ও গৃহহীন আট লাখ ৮২ হাজার ৩৩টি পরিবারকে ঘর ও জমি দেওয়ার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। গতকাল উদ্বোধনের পর পর্যায়ক্রমে এ তালিকার সবাই এই সুবিধা পাবে।

উপকারভোগীদের মধ্যে যাদের জমি আছে, তারা শুধু ঘর পাবে। যাদের জমি নেই, তারা ২ শতাংশ জমি পাবে (বন্দোবস্ত)। দুই কক্ষবিশিষ্ট প্রতিটি ঘর তৈরিতে খরচ হচ্ছে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। সরকারের নির্ধারিত একই নকশায় হচ্ছে এসব ঘর। রান্নাঘর, সংযুক্ত টয়লেট থাকছে। টিউবওয়েল ও বিদ্যুৎ সংযোগও দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে থাকা আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এই কাজ করছে। খাসজমিতে গুচ্ছ ভিত্তিতে এসব ঘর তৈরি হচ্ছে। কোথাও কোথাও এসব ঘরের নাম দেওয়া হচ্ছে ‘স্বপ্ননীড়’, কোথাও নামকরণ হচ্ছে ‘শতনীড়’, আবার কোথাও ‘মুজিব ভিলেজ’।

সরকারের এই উদ্যোগ বিশ্বের ইতিহাসে নতুন সংযোজন বলে জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এই প্রকল্পের পরিচালক মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্ব ইতিহাসে নতুন রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে। এটা বাংলাদেশের বিশাল অর্জন।’ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ এই উপহারের ঘর কেমন হচ্ছে। যারা ঘর ও জমি পাচ্ছে, তাদের অনুভূতি কেমন, তা জানতে এই প্রতিবেদক নারায়ণগঞ্জ, সাতক্ষীরা ও খুলনার একাধিক উপকারভোগীর সঙ্গে সরেজমিনে কথা বলেছেন।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর গ্রামের আটটি পরিবারকে ঘর দেওয়া হচ্ছে। এই তালিকার একজন জন্ম প্রতিবন্ধী শহিদুল গাজী পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। রাস্তার মোড়ে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন। স্ত্রী মর্জিনা ও আট বছর বয়সী ছেলে তানভীরকে নিয়ে থাকেন একটি ভাঙা ঘরে, তা-ও অন্যের জমিতে। গত শুক্রবার তাঁর সঙ্গে কথা হয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে প্রস্তুত হওয়া ঘরের সামনে। বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘কী আর বলব, জীবনে এমন একটা ঘরে থাকব, ভাবতেও পারিনি। যখন স্থানীয় ভূমি অফিস থেকে আবেদন করতে বলল, আবেদন করছি; কিন্তু ঘর পাব বিশ্বাস করিনি। ভাবছি টাকা-পয়সা ছাড়া ঘর দেবে? আমি টাকা দেব কোত্থেকে?’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগসহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় এই কাজের সঙ্গে যুক্ত।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘দেশের অনেক এলাকায় এসব ঘর নির্মাণ কার্যক্রম তদারকি করতে গিয়েছি। যাঁরা ঘর পাচ্ছেন তাঁদের মুখে যে তৃপ্তির ছাপ দেখেছি, তা আর কোনোভাবে পাওয়া সম্ভব না। এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছার কারণে।’ নীলফামারী জেলায় ৬৩৭টি পরিবার ঘর পাচ্ছে। এর মধ্যে আছে সদর উপজেলায় ৯৯, সৈয়দপুরে ৩৪, ডোমারে ৩৮, ডিমলায় ১৮৫, জলঢাকায় ১৪১ ও কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ১৪০টি পরিবার। বসতভিটার জন্য উপকারভোগীদের মধ্যে ১২.৭৪ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
ডোমারের কেতকিবাড়ী ইউনিয়নের তেতুলতলা প্রধানপাড়া গ্রামের দিনমজুর আইনুল হকের স্ত্রী মর্জিনা খাতুন বলছিলেন, ‘হাজার শুকরিয়া। পাকা বাড়িত থাকির পারিম সেইটা আছিল হামার স্বপন। প্রধানমন্ত্রীর দয়ায় সেই স্বপন মোর পূরণ হইল।’ সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নে খাসজমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩৪টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। যশোরের মণিরামপুরে ২৬২টি পরিবার ঘর পাচ্ছে। এর মধ্যে গতকাল শনিবার ১৯৯টি ঘর হস্তান্তর করা হয়।

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার ৩৫টি পরিবার প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাচ্ছে। এর মধ্যে সোনামুখী ইউনিয়নের তিনটি, চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়নের ৯, মাইজবাড়ী ইউনিয়নের ১৪, গান্ধাইল ইউনিয়নের পাঁচ ও কাজিপুর সদর ইউনিয়নের চারটি পরিবার রয়েছে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় গতকাল শনিবার ২০টি পরিবারকে ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে ২০০টি ভূমিহীন পরিবারকে ‘মুজিববর্ষের উপহার’ এই ঘর দেওয়া হবে। দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার ছয় ইউনিয়নে ৪৩০টি পরিবার ঘর পাচ্ছে। বয়স্কদের ৪৪টি, দিনমজুর ২৩৫টি, মুক্তিযোদ্ধা তিন, বিধবা ৩০, প্রতিবন্ধী ১২, ভিক্ষুক ২৭, ক্ষুদ্রজাতির ৭৮ ও তৃতীয় লিঙ্গের একটি পরিবারকে ঘর দেওয়া হচ্ছে। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ২১টি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩৫টি পরিবারকে ঘর দেওয়া হচ্ছে।

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় ২০০ পরিবার ঘর পাচ্ছে। এর মধ্যে সদর ইউনিয়নে ৩১টি, জয়মনিরহাটে ৯, আন্ধারিঝাড়ে তিন, পাইকেরছড়ায় ২১, বলদিয়ায় ২৩, চরভূরুঙ্গামারীতে ১৫, শিলখুড়িতে ২৬, পাথরডুবীতে চার, তিলাইয়ে ১৮ ও বঙ্গসোনাহাট ইউনিয়নে ৫০টি ঘর তৈরি করা হয়েছে। সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায় ১০৪টি পরিবার ঘর পাচ্ছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ৩০টি ঘর প্রস্তুত হয়েছে। আজ এগুলোর চাবি উপকারভোগীদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আরো ২০টি ঘরের কাজ চলছে। নাটোরের বড়াইগ্রামে ১৬০টি পরিবারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া ঘর তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। আজ হস্তান্তর করা হবে।

শরীয়তপুরের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ছয় উপজেলায় ৬৯৯টি ঘর তৈরি করা হয়েছে। সদরে ৫০টি, নড়িয়ায় ১২১, জাজিরায় ৫৪, ডামুড্যায় ৬৬, ভেদরগঞ্জে ৩৬০ ও গোসাইরহাট উপজেলায় ৪৮টি ঘর বরাদ্দ হয়েছে। ডামুড্যার পূর্ব ডামুড্যা এলাকায় বিলের মধ্যে তৈরি হয়েছে দুই সারিতে ২২টি ঘর। সেখানে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

অতিরিক্ত ডিআইজি মশিউর গ্রেফতার

দখিনের সময় ডেস্ক: চট্টগ্রাম থেকে বাংলাদেশ পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মশিউর রহমান গ্রেফতার হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) তাকে আটক করা হয়। নিউমার্কেট থানার...

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ

দখিনের সময় ডেস্ক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম...

মানহানির মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান

দখিনের সময় ডেস্ক: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান হবিগঞ্জে মানহানির একটি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন । বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল আলীম...

সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যা: ৮ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

দখিনের সময় ডেস্ক: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা শামীম মোল্লাকে পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনায় অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আটজন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। সাময়িক...

Recent Comments