প্রতিবন্ধী শিশুদের ব্যাপারে আজকের যে সচেতনতা দেশে ও বিদেশে, তার রেশ মাত্রও ছিলো না দশ বছর আগেও। অথচ ৩৫ বছর আগে এই শিশুদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসে বরিশাল বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়। ১৯৮৭ সালে ৮/১০টি শিশু নিয়ে শুরু করা সেই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা এখন ১২৭।
দীর্ঘ পথ চলার পর বরিশাল বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয় পেয়েছে নিজস্ব স্থায়ী ঠিকানা। শহরের ঝাউতলা রোডে নিজস্ব ভবনের ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে আজ শনিবার (৩০ জুলাই)। এ ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছেন বরিশালের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার। ২০১৫ সালে এই জমি বরাদ্দ দিয়েছেন বরিশালের তৎকালীন জেলা প্রশাসক শহীদুল আলম।
১৯৮৭ সাল থেকে বরিশাল বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যায়ের যে পথ চলা শুরু হয় তা মোটেই সহজ সাধ্য ছিলো না। বরং ছিলো কঠিন। আর শুরুর দিকটা ছিলো কল্পনাতীত রকমের কঠিন। তবু এগিয়েছে মহতী এই উদ্যোগ। যা ছিলো অনেকটা অসম্ভবকে সম্ভব করার মতো বিষয়।
এই অসম্ভবকে সম্ভব করার ঘটনা প্রবাহ নিয়ে কথা হয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা মনসুরুল আলম মন্টুর সঙ্গে। তিনি এই স্কুলের উদ্যোক্ত ও প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে স্কুলের সেক্রেটারী। তিনি জানালেন, জহিরুল ইসলাম খান পান্নার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পিডব্লিউডি-এর তৎকালীন ইঞ্জিনিয়ার আকতার হোসেন মঞ্জু এক আলাপচারিতায় বরিশালে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন। উল্লেখ্য, ইঞ্জিনিয়ার আকতার হোসেন মঞ্জুর একমাত্র সন্তান ছিলো প্রতিবন্ধী।
বরিশালে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবে সহজেই রাজী হন বরিশালে স্বাধীনতা সংগ্রামের সংগঠক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মনসুরুল আলম মন্টু। কিন্তু এই স্কুল প্রতিষ্ঠার কাজ মোটেই সহজ ছিলো না। এদিকে, সে সময় ঘরের প্রতিবন্ধী শিশুটিকে লোকচক্ষুর আড়ালে রাখা হতো। বিনা খরচে শিক্ষা দেবার প্রস্তাব নিয়ে গেলে অভিবাবকরা রাজী হতেন না। কেউ কেউ তার ঘরে প্রতিবন্ধী শিশু থাকার কথা সরাসরি অস্বীকার করে বলতেন, ‘আপনারা ভুল ইনফরমেশন পেয়েছেন!’ এরপরও ৮ থেকে ১০ জন প্রতিবন্ধী শিশু সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছিলো বলে জানান মনসুরুল আলম মন্টু। এরপর দেখা দেয় স্কুলের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য স্থান পাওয়া নিয়ে সমস্যা।
প্রতিবন্ধী শিশুদের স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য ঘর বা রুম পাওয়া যাচ্ছিলো না। এদিকে শর্ত ছিলো, সাধারণ স্কুলের কাছে বা পাশাপাশি স্থানে প্রতিবন্ধী শিশুদের স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অনেক চেষ্টার পর শহরের জর্জডন রোডে ওয়াইডব্লিউসিএ স্কুল ভবনের দুটি রুম পাওয়া ভাড়া পাওয়া যায়। সেখানেই ৮/১০ জন শিশু নিয়ে শুরু হয় বরিশাল বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। কিন্তু এখানে বেশি দিন থাকা সম্ভব হয়নি।
এক পর্যায়ে ওয়াইডব্লিউসিএ স্কুলের শিক্ষার্থীদের অবিভাবকরা তীব্র আপত্তি তোলেন। কেউ কেউ বলেন, ‘পাগলদের’ পাশে তাদের সন্তানদের শিক্ষা দেবেন না। এদিকে প্রতিবন্ধী শিশুদের স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য শহরে কেউ ঘর বা রুম ভাড়া দিচ্ছিলো না। এ অবস্থায় এগিয়ে আসেন মনসুরুল আলম মন্টুর স্ত্রী খাজিদা শামসুন নাহার খানম। তিনি এই স্কুলের প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক। এ জন্য তিনি কোন পারিশ্রমিক গ্রহন করতেন না। শুধু তাই নয়, স্কুলের শিক্ষক-কর্মচাররা সরকারী অর্থ পাওয়া শুরু হলে খাজিদা শামসুন নাহার খানম তার প্রাপ্য টাকা দিয়ে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, বরিশাল বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যায় প্রতিষ্ঠা এবং এগিয়ে নেবার ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। এ প্রসঙ্গে তাঁর স্বামী মনসুরুল আলম মন্টু বলেন, তিনি আমার চেয়েও দশগুণ ভূমিকা রেখেছেন।
খাজিদা শামসুন নাহার খানম নাজির মহল্লায় তার নানা শরফুদ্দিন নুর আহমেদ মজুমদারের বাড়িতে স্কুল স্থান্তরের ব্যবস্থা করেন। জনাব মজুমদার ছিলেন চাখারের জমিদার। তার নাজির মহল্লার বাড়িতে প্রায় ৭ বছর স্কুলের কার্যক্রম চলে। কিন্তু এক পর্যায়ে এখানেও প্রতিবন্ধী শিশুদের স্কুল রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তখন এ স্কুলের জন্য ঘর বা রুম পাওয়া আরো কঠিন হয়ে যায়।
কঠিনতর এ অবস্থায় সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন মনসুরুল আলম মন্টুর বড় বোন মমতাজ বেগম। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত কাজী জাফর আহমেদের স্ত্রী। মমতাজ বেগমের উদারতায় নগরীর মল্লিক রোডে তিন শতাংশ জমির উপর তিন রুম বিশিষ্ট টিনশেট ভবনে ২০০০ সালে স্থান্তরিত হয় বরিশাল বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যায় । সেখানেই স্কুলটির কার্যক্রম চলছে ২২ বছর ধরে। এবং এ জন্য কোন ভাড়া দিতে হয় না। অথচ স্কুলের জন্য দেয়ার আগে এখানে তিনটি স্টল ভাড়া চলছিলো।
উদ্যোক্তা এবং মহানুভব ব্যক্তিদের সহায়তার পাশাপাশি অসম্ভবকে সম্ভব করার কঠিন ব্রতে নিয়োজিত রয়েছেন বরিশাল বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয় শিক্ষক ও শিক্ষা সহকারীরা। ১৯৮৭ সালে এই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক শামসুন নাহার শিলা অবসরে গেছেন। এখন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছেন ইসমত জাহান। তিনিও এই স্কুলের সঙ্গে আছেন ১৯৮৭ সাল থেকেই। এই স্কুল প্রতিষষ্ঠা লগ্নে যোগদানকারী আর একজন শিক্ষক হচ্ছেন সিরাজ মুনির টিটু। এদিকে এই স্কুলে ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে যোগদানকারী শিক্ষরা হচ্ছেন খাদিজা শামসুন নাহার খানম, মাসুদ পারভেজ ও শারমিন জাহান। এই স্কুলের শিক্ষা সহকারীরা হচ্ছেন শরিফুল ইসলাম স্বপন, মাইনুল করিম ও বিউটি পাইক।
বলা প্রয়োজন, ওবায়দুল কাদেরের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাসের ভিত্তি নিশ্চয়ই একদিনে সৃষ্টি হয়নি। এ প্রসঙ্গে ওয়ান ইলেভেনের সেই সময়কার পরিস্থিতিতে ওবায়দুল কাদেরের ভূমিকা অনেকেরই স্মরণে...
দখিনের সময় ডেস্ক:
পুলিশের সাবেক মহাপরিচালক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের দুর্নীতি তদন্তে কমিটি গঠন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর আগে, পুলিশের সাবেক...
দখিনের সময় ডেস্ক:
সারা দেশে সতর্কতামূলক হিট অ্যালার্ট অবস্থার মধ্যেই দেশের ময়মনসিংহ এবং সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস...
দখিনের সময় ডেস্ক:
উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচনে সাতজন চেয়ারম্যান, নয়জন ভাইস চেয়ারম্যান এবং ১০ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। এই সংখ্যা...
নয়ন সিকদার, বাউফল থেকে:
পটুয়াখালীর বাউফলে হার্ট অ্যাটাকে মো. শাহআলম খান (৫৮) নামের এক পুলিশ সদস্যর মৃত্যু হয়েছে। তিনি রাজধাণীর গুলশানে পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত...
বলা প্রয়োজন, ওবায়দুল কাদেরের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাসের ভিত্তি নিশ্চয়ই একদিনে সৃষ্টি হয়নি। এ প্রসঙ্গে ওয়ান ইলেভেনের সেই সময়কার পরিস্থিতিতে ওবায়দুল কাদেরের ভূমিকা অনেকেরই স্মরণে...
দখিনের সময় ডেস্ক:
পুলিশের সাবেক মহাপরিচালক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের দুর্নীতি তদন্তে কমিটি গঠন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর আগে, পুলিশের সাবেক...