দখিনের সময় ডেস্ক:
রাজধানীর শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও শিক্ষার্থী সামিয়া আফরান প্রীতি হত্যার ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তাররা হলেন, জাতীয় পার্টির নেতা জুবের আলম খান রবিন, আওয়ামী লীগ নেতা আরিফুর রহমান সোহেল, খায়রুল ও মাহবুবুর রহমান টিটু।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) রিফাত রহমান শামীম। তিনি জানান, শনিবার (৩০ জুলাই) রাতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ বিষয়ে আজ রোববার (৩১ জুলাই) দুপুরে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর-রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, টিপু হত্যায় এর আগে ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তাদের দেওয়া জবানবন্দি ও তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে বিশেষ করে খুনের সন্দেহভাজন সমন্বয়কারী সুমন সিকদার মুসাকে ওমান থেকে গ্রেপ্তার করে দেশে আনা হয়। তিনি জিজ্ঞাসাবাদ ও আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন।
সেসব তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার মতিঝিল ও আশপাশের এলাকা থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তারা হলেন, জাতীয় পার্টির নেতা জুবের আলম খান রবিন, আওয়ামী লীগ নেতা আরিফুর রহমান সোহেল (ঘাতক সোহেল), মতিঝিল ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক খায়রুল ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মারুফ আহমেদ মনসুরের ঘনিষ্ঠজন হিসাবে পরিচিত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহবুবুর রহমান টিটু।
হারুন-অর-রশিদ বলেন, গ্রেপ্তারদের টিপু হত্যায় কার কী ভূমিকা ছিল তা তদন্ত করে দেখা হবে। আদালতের দেওয়া পাঁচ দিনের রিমান্ডে তাদের পাঠানো হয়েছে। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে অনেক তথ্যই সামনে আসবে।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, ইন্টারপোলের মাধ্যমে মুসাকে দেশে ফেরানোর পর একাধিক দফায় হেফাজতে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন মুসা। কিলিং মিশনে কার কী ভূমিকা ছিল সেটি তার বক্তব্যে উঠে আসে।
মুসার তথ্য যাচাই করতে বিভিন্ন সময় আরও কয়েকজনকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করে ডিবি। টিপু হত্যা পরিকল্পনায় টিটু, রবিন ও সোহেল সম্পৃক্ত। এর মধ্যে টিটু সবচেয়ে দুর্র্ধষ। তার সঙ্গে অপরাধ জগতের যোগসূত্র দীর্ঘদিনের। যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কীর সঙ্গে এক সময় তার ঘনিষ্ঠতা ছিল। ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই গুলশানে শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে মিল্কীকে হত্যা করা হয়েছিল।
তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত হয়েছেন টিপু হত্যার ঘটনায় শুটার ছিলেন মাসুম মোহাম্মদ আকাশ। পুরানা পল্টনের ‘আর্মস মিউজিয়াম’ নামের একটি অস্ত্রের দোকানের গুলি টিপু হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়। ওই দোকানের কর্ণধার ইমরান হোসেন জিতুর কাছ থেকে ১৫ রাউন্ড গুলি নিয়ে মতিঝিলের ১০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগ নেতা রাকিবুর রহমান রাকিব পৌঁছে দেন সুমন সিকদার মুসার হাতে। এ ছাড়া দুবাইয়ে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ মন্টির নির্দেশে ইশতিয়াক আহমেদ জিতু অস্ত্র দেন মোল্লা শামীমের কাছে।
কিলিং মিশনের সময় মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন শামীম। বর্তমানে তিনি ভারতে পালিয়ে আছেন। মুসার মতো ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে দেশে ফেরাতে নানামুখী কার্যক্রম শুরু করেছে পুলিশ সদরদপ্তর।
উল্লেখ্য, গত ২৪ মার্চ রাতে শাহজাহানপুরের আমতলা মসজিদ এলাকায় এলোপাতাড়ি গুলিতে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম নিহত হন। সে সময় ঘটনাস্থলে রিকশায় বসে থাকা কলেজছাত্রী সামিয়া আফরিন ওরফে প্রীতিও গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। দুই খুনের ঘটনায় সর্বশেষ চারজনসহ মোট ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি আরও চার থেকে পাঁচজন গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন।