দখিনের সময় রিপোর্ট:
আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপ শেষ হয়েছে, রোববার(৩১জুলাই)। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ইসির সংলাপের আহ্বানে বিএনপিসহ ৯ দল সাড়া দেয়নি।
নিবন্ধিত ৩৯ দলের মধ্যে সর্বশেষ রোববার(৩১ জুলাই) ইসির সঙ্গে বৈঠক করেছে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি। সংলাপে ২৮ দলের কাছ থেকে প্রায় ৩৫০ প্রস্তাব এসেছে। এর মধ্যে অধিকাংশ দল নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি জানিয়েছে।
নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্তাব প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার বর্তমান সরকারই করতে পারবে। দলগুলোর প্রস্তাব পর্যালোচনা করে সরকারের কাছে, দলের প্রধানের কাছে সারসংক্ষেপ পাঠিয়ে দেবে কমিশন। গত ১৭ জুলাই থেকে গতকাল পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের সংলাপে ২৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। সংলাপে অংশ নেয়নি ৯ দল- বাসদ, বাংলাদেশ মুসলীম লীগ-বিএমএল, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জেএসডি, এলডিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, সিপিবি, বিজেপি ও বিএনপি।
সংলাপে অংশ নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকারের পক্ষে মত দিয়েছে ১৫ দল। দলগুলো হলো- বাংলাদেশ ন্যাপ, গণফোরাম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামে, ওয়ার্কার্স পার্টি (নির্বাচনকালীন স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ইসির অধীনে ন্যস্ত করা), মুসলীম লীগ, খেলাফত আন্দোলন, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোট, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টে ও বাংলাদেশ কংগ্রেস। %%
নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছে ১১ দল। দলগুলো হলো- আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, তরীকত ফেডারেশন, জাকের পার্টি, এনপিপি, বিকল্পধারা, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল ও খেলাফত মজলিস। এর মধ্যে ইভিএম ব্যবহারের আগে ক্রটি সারতে ও আস্থা অর্জনের তাগিদ দিয়েছে কয়েকটি দল।
ইভিএম ব্যবহারের সরাসরি বিরোধিতা করেছে- জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, মুসলীম লীগ, খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট ও খেলাফত মজলিশ। এদিকে নির্বাচনকালে সেনাবাহিনী মোতায়েন চায় ছয় দল। দলগুলো হলো- তরীকত ফেডারেশন, বিকল্পধারা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, জাসদ, খেলাফত আন্দোলন ও খেলাফত মজলিস।
চারটি রাজনৈতিক দল এলাকাভিত্তিক প্রতিনিধিত্বের পরিবর্তে ভোটের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া ৮টি রাজনৈতিক দল জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের বিরোধিতা করেছে। ইসির নিজস্ব জনবল থেকেই রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের প্রস্তাব করেছে দলগুলো। এ ছাড়া একাধিক দিনে ভোটগ্রহণের প্রস্তাব করেছে কয়েকটি দল।
সংলাপে বিষ্ফোরক মন্তব্য করেছেন জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক। তিনি বলেন, ‘একটা প্ল্যান করে করা যায়, ব্যালট পেপার সকালে চলে যাবে। তা হলে রাতের (ভোট চুরির) বিষয়টা আর আসে না। রাতে কিন্তু এটা হয়। হয় মানে কি (সহাস্যে), আমরাই করেছি, কি বলব- হয়ই; এ রকম হয়। হয় না এটা ঠিক না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানি, নির্বাচনে কারচুপি হবে, তবু আমরা যাই। কারণ বিকল্প নেই।’
ইভিএম ব্যবহারের ঘোর বিরোধিতা প্রসঙ্গে জাপা মহাসচিব বলেন, ইভিএমে আমাদের আস্থা নেই। ব্যক্তিগতভাবে আমারও এতে কোনো আস্থা নেই। মানুষ মনে করে, ইভিএমে ভোট পাল্টে দেওয়া হলে কিছু করার নেই। কারণ ফল পুনরায় যাচাই করা যায় না।
এদিকে আওয়ামী লীগ দিয়েছে ১৫ প্রস্তাব। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে, তিনশ আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ। এ দলটি নির্বাচনের সময়ে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন পরিচালনার জন্য আবশ্যকীয় সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে ন্যস্ত করার প্রস্তাবও করেছে।
আওয়ামী লীগের অন্যান্য প্রস্তাব হলো- নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা ঊর্ধ্বে রেখে সংবিধান ও আইনে প্রদত্ত দায়িত্ব পালনে সক্ষমতা প্রদর্শন, নির্বাচনের সময়ে নির্বাহী বিভাগের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/সংস্থার দায়িত্বশীলতা, ইসি সচিবালয় এবং এর মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের দায়িত্বশীল ও নিরপেক্ষ আচরণ ও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় নিয়োগপ্রাপ্ত দলীয় কর্মকর্তাদের নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে বাইরে রাখা। আওয়ামী লীগের প্রস্তাবের মধ্যে আরও আছেÑ ছবিযুক্ত একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন, ভোটগ্রহণের দিন নির্বাচন কেন্দ্রের সার্বিক নিরাপত্তা, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ বৃদ্ধি করা, নির্বাচন পরিচালনায় বেসরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবর্তে কেবল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার পদে নিয়োগ করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সদস্যদের নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল আচরণ, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক থেকে শুরু করে মিডিয়া ও সিভিল সোসাইটির সদস্যদের নিরপেক্ষ ভূমিকা এবং আইন অনুযায়ী (আরপিও ১৯৭২, অনুচ্ছেদ ৯১সি) নিবন্ধিত দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে পর্যবেক্ষণের অনুমতি প্রদান, নির্বাচনে পেশিশক্তি ও অর্থের প্রয়োগ বন্ধ এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ সব পর্যায়ের ভোটারের অবাধ ভোটদানের সুযোগ নিশ্চিতকরণ, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন পরিচালনার জন্য আবশ্যকীয় সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে ন্যস্ত করা, নির্বাচনকালীন সরকারের কর্মপরিধি কেবল আবশ্যকীয় দৈনন্দিন (রুটিন) কার্যাবলির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা, অ্যাডহক বা অন্তর্র্বতীকালীন ব্যবস্থার পরিবর্তে টেকসই সাংবিধানিক, আইনি ও রেগুলেটরি ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার একটি ‘পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজড চ্যাপ্টার’।
সংলাপে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা মনে-প্রাণে ইভিএমে বিশ্বাস করি। চেতনায় ধারণ করি। কোনো বিশেষ এলাকা নয়, দেশের তিনশ আসনে ইভিএমে ভোট হোক, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ দাবি জানাচ্ছি।’